News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৬:২৯, ২৬ আগস্ট ২০১৫
আপডেট: ১১:১২, ১৪ আগস্ট ২০২০

নদীতে ‘ভাসমান খামার’: নারীদের ভাগ্য বদল

নদীতে ‘ভাসমান খামার’: নারীদের ভাগ্য বদল

পাবনা: পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় চলনবিল পাড়ে নৌবাড়িয়া নতুনপাড়া গ্রামে এলাকার হতদরিদ্র নারীরা গুমানি নদীর তীরে সবজি, মাছ ও হাঁসের সমন্বিত চাষ করে করে ভাগ্য ফেরানোর চেষ্টা করছেন।  

‘ভাসমান খামার’নামে পরিচিত বিশেষ এ চাষ পদ্ধতিতে এলাকার শতাধিক দরিদ্র নারী সাফল্য পেয়েছেন। ঋণ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের স্বাবলম্বী করতে সহায়তা করছে ‘সিধুলাই স্বনির্ভর উন্নয়ন সংস্থা’নামের একটি বেসরকারি সংগঠন। ভাসমান খামার নামের সমন্বিত এ কৃষি পদ্ধতি পাবনার অন্যান্য নদী তীরবর্তী এলাকায় ছড়িয়ে দিতে পারলে দরিদ্রতার হার কমার পাশাশি জেলায় কৃষি ও মাছের উৎপাদন বেড়ে সার্বিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।

ভাঙ্গুড়ার নতুনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নারী নেত্রী মরিয়ম জানান, বর্ষাকালে পানিতে ভেসে যায় প্রায় আড়াই হাজার মানুষের বসতিতে ঠাশা ওই গ্রামটির চারদিক। প্রতিবছর জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এ এলাকার পথ-ঘাট-মাঠ ৫-১০ ফুট পানির নিচে থাকে। বর্ষা মৌসুমে এখানকার লোকদের হাতে কোনো কাজ না থাকায় অভাব জেঁকে বসে। এই দুঃসময়েই পানিপূর্ণ খাল, নদী ও বিলের ওপর মাচা নির্মাণ করে সেখানে চলছে সবজি, মাছ ও হাঁস পালন।

সিধুলাই স্বনির্ভর উন্নয়ন সংস্থার কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সুপ্রকাশ পাল জানান, বেগম খাতুন নামের এক নারী দুবছর আগে তাদের সংস্থা থেকে ভাসমান ফার্ম তৈরির মাধ্যমে কীভাবে হাঁসপালন, মাছ চাষ ও সবজি বাগান করা যায় সে সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর গত বছর থেকে ৫ থেকে ১০ জন মহিলারা গ্রুপ করে এ সমন্বিত চাষ পদ্ধতিতে এগিয়ে আসেন।

তিনি বলেন, ব্যতিক্রমধর্মী এই চাষ পদ্ধতি এলাকায় পরিচিত ভাসমান খামার নামে। এই পদ্ধতিতে নদীর তীরে পানির ওপর তৈরি করা হয় ড্রামের ভেলা। সেই ভেলার ওপর একপাশে নির্মিত ঘরে হাঁস পালন করা হয়, অন্য পাশে পানির ওপরে তৈরি মাচায় সবজি ও নিচে চলে মাছ চাষ।

সুপ্রকাশ পাল আরও জানান, প্লাস্টিকের বালতির মধ্যে মাচা তৈরি করে শক্ত খুঁটির সঙ্গে বেঁধে তাতে সবজির চারা রোপণ করা হয়। খামারে উন্মুক্ত জলরাশির প্রবাহ থাকায় সরপুঁটি, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে। হাঁস সারাদিন পানিতে থাকার পর রাতে ভাসমান খামারের ঘরে ডিম দেয়। হাঁসের বিষ্ঠা পরিণত হয় মাছের খাদ্যে। পুরো এলাকা যেন এক ভাসমান খামারে পরিণত হয়।

সিধুলাই স্বনির্ভর উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তরা জানান, সাধারণত পাঁচ জন নারী মিলে একটি ভাসমান খামার করেন। এতে তাদের প্রথমে খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। পরবর্তী বছরগুলোতে তাদের আর খরচ করতে হয় না। 3

কর্মকর্তারা জানান, তাদের সংস্থাটি গ্রাম্য নারীদের বীজ, মাছ, হাসের খাবার প্রদান ও প্রশিক্ষণসহ মাথাপিছু ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়। ৫ থেকে ১০ জন মহিলারা সমিতির মাধ্যমে একটি দল গঠন করে এগিয়ে চলছে। মাছ, হাঁসের ডিম ও সবজি বিক্রি করে এক বছরে পাঁচ জনের একটি গ্রুপের আয় হয় বছরে এক লাখ টাকারও বেশি। এ প্রকল্প নদীর তীরবর্তী কৃষক-কৃষাণির মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে বলে সংস্থার কর্মকর্তারা জানান।

তারা জানান, মাত্র এক বছর আগে শুরু হওয়া এই ভাসমান খামার করে সচ্ছলতার মুখ দেখছেন এলাকার হতদরিদ্র নারীরা।

ভাসমান খামার করে নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন চরভাঙ্গুড়া পূর্বপাড়া গ্রামের দুলাল খাঁর স্ত্রী হোসনে আরা, মহির উদ্দিনের স্ত্রী হাফিজা খাতুন, আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী সালেহা খাতুন, লাবলু মিয়ার স্ত্রী আফরোজা খাতুন ও জাকির হোসেনের স্ত্রী রেহেনা খাতুনসহ অনেক দরিদ্র নারী।

আলাপকালে তারা জানান, এখানে মাচায় শসা, করলা ও কুমড়ার ভাল ফলন হয়। প্লাস্টিকের বালতির মধ্যে কাদা তৈরি করে শক্ত খুটির সাথে বেঁধে তাতে সবজির চারা রোপণ করা হয়। এ সবজি বিষমুক্ত ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে চাহিদা প্রচুর। ভাল দামে বেচা যায়। খামারে উন্মুক্ত পানিপ্রবাহ থাকায় থাকায় স্বরপুঁটি, তেলাপিয়া, চিতল প্রভৃতি প্রজাতির মাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে। হাঁস সারা দিন পানিতে থাকে, রাতে ভাসমান খামারের ঘরে উঠে ডিম দেয়। হাঁসের বিষ্ঠা মাছের খাদ্যে পরিণত হয়। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি নিজেদের পুষ্টির চাহিদাও মেটান বলে তারা জানান।

তারা আরও জানান, গত এক বছরে তাদের অভাবী সংসারের চিত্র বদলে গেছে। এখন হাসি ফুটেছে পরিবারের সকলের মুখে। তাদের দেখাদেখি গ্রামের বহু দরিদ্র নারী এ ধরনের খামার করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন বলে জানান তারা।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিভুতি ভুষন সরকার জানান, যাদের নিজেদের জমি বা জলাশয় নেই তাদের খামার করার জন্য এ ভাসমান চাষ পদ্ধতি খুই কার্যকরী। দেশের ক্রমবর্ধমান সবজি ও আমিষের চাহিদা মিটিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা দিতে ভাসমান খামার প্রযুক্তি বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/কেজেএইচ

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়