বৌদ্ধ মন্দির রূপান্তরের প্রথম প্রত্ন নিদর্শন
দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলায় আবিষ্কৃত হয়েছে দেশের প্রথম বৌদ্ধ মন্দিরকে হিন্দু মন্দিরে রূপান্তরিত করার মতো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক স্বাধীন সেন ও অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ কামরুল আহসানের পরিচালনায় একদল খননকারী তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে খনন চালিয়ে এরূপ দুটি মন্দির আবিষ্কার করেন।
অধ্যাপক সেন নিউজ বাংলাদেশকে জানান, এর আগেও বাংলাদেশে বৌদ্ধ স্তূপকে হিন্দু মন্দিরে রূপান্তরিত করার উদাহরণ পাওয়া গেছে। কিন্তু বৌদ্ধ মন্দিরকে হিন্দু মন্দিরে রূপান্তরিত করার নিদর্শন দেশে এটাই প্রথম।
তার মতে, মন্দির দুটির নির্মাণকাল সম্ভব্য ৮ম থেকে ১১শ শতকের মধ্যে। প্রাচীন বরেন্দ্র অঞ্চলের বৌদ্ধ ধর্ম চর্চার ওপর হিন্দু রাজাদের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আধিপত্যের সরাসরি নিদর্শন এটি। দুই মন্দিরে বিভিন্ন পোড়ামাটির চিত্রফলকসহ নানা প্রাচীন প্রত্নবস্তু পাওয়া গেছে।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়ণে ২০১২ সাল থেকে দলটি এ এলাকায় আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে করছেন। তারা ১২৬টি আর্কিওলজিক্যাল সাইট শনাক্ত করেছেন। সবশেষ উপজেলার রণগাঁও ইউনিয়নের বাসুদেবপুরের ‘ইটাকুড়া ঢিবি’তে প্রায় ৩,৬০০ বর্গমিটারেরও বেশি স্থান খনন করে মন্দির দুটি পাওয়া যায়।
বৌদ্ধ মন্দিরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে সর্বমোট তেরটি বুদ্ধ স্তূপ পাওয়া গেছে এবং দক্ষিণ-পূর্ব কোণে পাওয়া গেছে আরও চারটি স্তূপ। এছাড়াও আছে একটি বর্গাকার মন্দির। স্তূপগুলোর চারটিতে মানবঅস্থির ভস্মীভূত ছাই ও কয়লার পাওয়া গেছে। অন্যদিকে স্তুপসংলগ্ন একটি স্থান থেকে পাওয়া গেছে আরেকটি মাটির ঘটে। যার মধ্যে পাওয়া যায় আরও একটি পোড়া মানবঅস্থির টুকরা ও কয়লা। এই ধরনের স্তুপকেই শারীরিক স্তুপ বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে এধরনের শারীরিক স্তূপ পাওয়ার ঘটনা এই প্রথম।
খননকারীরা জানিয়েছে, প্রথমে এটি বৌদ্ধ মন্দির হিসাবে তৈরি করা হলেও পরবর্তীকালে মন্দিরটি হিন্দু মন্দিরে রূপান্তরিত করা হয়। ফলে মূল নির্মাণ শৈলী বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে যে টুকু বোঝা যায় যে, মন্দিরটি একটি গর্ভগৃহ ও একটি মণ্ডপের সমন্বয়ে গঠিত। পূর্ববর্তী বৌদ্ধ মন্দিরের গর্ভগৃহের উপরেই পরবর্তী হিন্দু মন্দিরের গর্ভগৃহ নির্মিত হয়েছে।
ঐতিহাসিকভাবে সর্বপ্রথম গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ দিয়ে স্তূপ নির্মাণ করার রীতি চালু করেছিলেন মৌর্য সম্রাট অশোক। পরবর্তীকালে বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু ও তৎকালীন সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দাহ করা দেহাবশেষের উপরেই স্তূপ নির্মাণ করার রীতি চালু হয় ভারতবর্ষে।
বাংলাদেশে এ আবিষ্কারের ফলে তৎকালীন বরেন্দ্র অঞ্চলের বৌদ্ধ ধর্মীয় সৎকার রীতিনীতি এবং তীর্থ গড়ে ওঠার সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে। এ নিদর্শন এ কথা প্রমাণ করে যে, প্রাচীন বরেন্দ্রে বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সংমিশ্রন ঘটছিল বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক সেন।
মন্দির দুটি পাওয়ার পরে প্রাচীন ভারতীয় স্থাপত্য বিষয়ে অভিজ্ঞ দেশি-বিদেশি গবেষকদের সঙ্গে আলোচনা করে অধ্যাপক সেন হিন্দু মন্দিরটিকে শনাক্ত করেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/আরবিএস/কেজেএইচ
নিউজবাংলাদেশ.কম








