News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:০৮, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

৩৫ বছর পর চবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন শুরু

৩৫ বছর পর চবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন শুরু

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। 

বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদ ভবনের ১৫টি কেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ চলছে।

এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১৬ হাজার ৮৪ জন এবং ছাত্রী ১১ হাজার ৪৩৪ জন। শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের জন্য ২৬টি এবং হল সংসদের জন্য ১৪টি পদে ভোট দিচ্ছেন। ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে ওএমআর ব্যালট পদ্ধতিতে, যেখানে প্রার্থীর নামের পাশে বৃত্ত পূরণ করে ভোট দিতে হচ্ছে। একাধিক বৃত্ত পূরণ করলে সেই ভোট বাতিল বলে গণ্য হবে।

চাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১৫ জন প্রার্থী এবং হল ও হোস্টেল সংসদের ২৪টি পদের জন্য লড়ছেন ৪৯৩ জন। মোট প্রার্থী সংখ্যা ৯০৮ জন। কেন্দ্রীয় সংসদে ৪৮ জন নারী ও ৩৬৬ জন পুরুষ প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়া ২৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ভিপি পদে ২৪ জন, জিএস পদে ২২ জন এবং এজিএস পদে ২১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ভোটগ্রহণ চলছে ব্যবসায় প্রশাসন, সমাজবিজ্ঞান, বিজ্ঞান এবং কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের দুটি ভবনসহ মোট পাঁচটি ভবনে। এর মধ্যে ১৪টি কেন্দ্রে হল সংসদ এবং ১টি কেন্দ্রে হোস্টেল সংসদের ভোটগ্রহণ হচ্ছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য চাকসু ভবনে রাখা হয়েছে বিশেষ ভোটকেন্দ্র।

ভোট শুরুর আগে ব্যালট পেপার কেন্দ্রে পৌঁছানো হয়েছে। প্রতিটি অনুষদ ভবনে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া কেন্দ্রগুলোর বাইরে আরও চারজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া তদারকিতে রয়েছে আড়াই শতাধিক সিসি ক্যামেরা।

আরও পড়ুন: এইচএসসির ফল প্রকাশ ১৬ অক্টোবর

নিরাপত্তা নিশ্চিতে ক্যাম্পাসজুড়ে মোতায়েন রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৭০০ সদস্য। এর মধ্যে রয়েছে পুলিশ, র‍্যাব, এপিবিএন, বিজিবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বাহিনী, রোভার স্কাউট ও বিএনসিসি। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রয়েছে সেনাবাহিনী। সোমবার থেকেই ক্যাম্পাসে টহল জোরদার করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রতিটি কেন্দ্রে সরঞ্জাম পাঠিয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট সম্পন্ন করতে আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছি। বহিরাগত প্রবেশে কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে।

র‍্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাফিজুর রহমান সোমবার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কোনো হুমকি নেই। আশা করি, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।

চাকসু নির্বাচনে ১৩টি প্যানেল অংশ নিচ্ছে। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে। ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ এবং ছাত্রদলের প্যানেল ছাড়াও রয়েছে বামপন্থী ছাত্রসংগঠন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ১০টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ (৩ পদে কেউ নেই), ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের যৌথ প্যানেল ‘দ্রোহ পর্ষদ’ (৯টি পদে কেউ নেই), এবং ‘বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য’ নামে স্টুডেন্ট’স অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি ও ছাত্র ফেডারেশনের জোট।

ভোটগ্রহণ শেষে দুই ধাপে গণনা হবে—একটি ধাপ পরিচালনা করবে ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান এবং অন্যটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল। প্রতিটি কেন্দ্রে তাৎক্ষণিকভাবে গণনা করে ফল ঘোষণা করা হবে। সব কেন্দ্রের ফল পাওয়ার পর ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের অডিটোরিয়ামে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হবে।

ভোটের দিন সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীরা সারিবদ্ধভাবে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হচ্ছেন। ‘জিরো পয়েন্ট’সহ পুরো ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর। দীর্ঘদিন পর দেখা হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে আড্ডা, কুশল বিনিময়। ভোট যেন পরিণত হয়েছে মিলনমেলায়।

প্রার্থীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক চর্চায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়