মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে চবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা
ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২ নম্বর গেট এলাকায় শনিবার (৩০ আগস্ট) গভীর রাতে দফায় দফায় শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ২৫ জনকে গুরুতর অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পুরো ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রবিবার (৩১ আগস্ট) সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকার ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন। তখন দারোয়ান গেট খুলতে অস্বীকৃতি জানান। ছাত্রী জোরে ডাক দিলে দারোয়ান অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং একপর্যায়ে তাকে চড়, ধাক্কা ও লাথি মারেন। এ সময় তার রুমমেট ও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এলে দারোয়ান পালিয়ে যান।
পরে খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা দারোয়ানকে ধরতে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের লক্ষ্য করে ইট–পাটকেল ছুড়তে থাকেন। শুরু হয় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রাত ১২টার পর স্থানীয়রা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে শতাধিক লোক জড়ো করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এসময় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারা ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় প্রবেশ করে।
শিক্ষার্থীরা জানান, হামলার সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং টর্চলাইটের আলো ফেলে লক্ষ্যভেদী আক্রমণ চালানো হয়।
আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচন ৯ সেপ্টেম্বর, ছয় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ
স্থানীয়রা একাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে, যার মধ্যে পুলিশের ২টি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর একটি এবং প্রক্টরিয়াল বডির একটি গাড়ি ছিল। হামলায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা আল মাসনূনসহ বহু শিক্ষার্থী ধারালো অস্ত্রের কোপে মারাত্মক আহত হন।
চবি মেডিকেল সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, আহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা একশ’র বেশি। শুধুমাত্র আমাদের মেডিকেলে রাতেই ৭০ জনের বেশি এসেছে। গুরুতর আহতদের চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
চমেক হাসপাতালে পাঠানোদের মধ্যে অন্তত ২৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
সংঘর্ষ শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার নিরাপত্তা কর্মী ও পুলিশকে জানান। রাত পৌনে ১টার দিকে কয়েকজন সহকারী প্রক্টর ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও স্থানীয়দের প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল রাস্তায় প্রবেশ করতে পারেননি।
অবশেষে রাত সাড়ে ৩টার দিকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সেনা কর্মকর্তা মেজর শাহরিয়ার ভোরে জানান, আমরা আটকে থাকা শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করেছি। আরও কয়েকটি দল এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলা ন্যাক্কারজনক। আমাদের বহু শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। অনেকের পরীক্ষাও ছিল। তাই আজকের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হামলার সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও প্রক্টরিয়াল বডির ভূমিকা ছিল দুর্বল। প্রক্টরের ফেসবুকে সাহায্যের আহ্বান পোস্ট নিয়েও সমালোচনা ছড়িয়েছে।
রবিবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা করছেন, পরিস্থিতি সাময়িক শান্ত হলেও যেকোনো সময় ফের বড় ধরনের সংঘাত হতে পারে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








