News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৫:৫৬, ১৪ মে ২০২৫
আপডেট: ১৭:২৪, ১৪ মে ২০২৫

মূল্যস্ফীতিতে স্বস্তি: কমছে দাম, বাড়ছে ভরসা

মূল্যস্ফীতিতে স্বস্তি: কমছে দাম, বাড়ছে ভরসা

ফাইল ছবি

বাংলাদেশের ভোক্তা সাধারণের দীর্ঘদিনের প্রধান উদ্বেগের নাম মূল্যস্ফীতি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামছাড়া দামে যখন সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা চাপের মুখে, তখন কিছুটা স্বস্তির বার্তা দিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, ২০২৬ সালের মে মাস নাগাদ দেশের মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের মধ্যে নেমে আসবে। এছাড়া, চলতি বছরের মধ্যেই তা ৮ শতাংশের নিচে নামবে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

বুধবার (১৪ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকে সমসাময়িক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন গভর্নর ড. মনসুর। 

এই বক্তব্যে গভর্নর দেশের অর্থনৈতিক সংস্কার, বাজেট লক্ষ্যমাত্রা ও আইএমএফের সহায়তা ছাড়াও আত্মনির্ভরশীল পথচলার বার্তা দেন। তার মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেয়া একাধিক মুদ্রানীতিগত ও কাঠামোগত সংস্কার পদক্ষেপ ইতোমধ্যে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। 

গভর্নর বলেন, আশা করছি, আগামী মাসেই (মে মাসের ডাটা অনুযায়ী) মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের ঘরে চলে আসবে। আর আগামী বছরের এই সময়েই তা ৫ শতাংশের নিচে নামবে।

তিনি আরও জানান, এতে করে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে যেভাবে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে (৫-৬ শতাংশ), তা পূরণে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এপ্রিল ২০২৫-এর তথ্যানুযায়ী, সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৯.১৭ শতাংশ, যা মার্চে ছিল ৯.৩৫ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি গত ৯ মাসে ১৪.৫ শতাংশ থেকে কমে ৮.৫ শতাংশে নেমে এসেছে, এবং অখাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২.৫ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশের নিচে এসেছে। 

আরও পড়ুন: আইএমএফ ঋণ ছাড়ে সবুজ সংকেত: আসছে ১.৩ বিলিয়ন ডলার

এই পতন ইঙ্গিত দেয় যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৌশলগত পদক্ষেপগুলো কার্যকর হতে শুরু করেছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • সুদের হার বৃদ্ধি: মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে আনতে Repo Rate এবং অন্যান্য সুদের হার বৃদ্ধি করা হয়েছে।
  • ডলারের বাজারে শৃঙ্খলা: কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের রিজার্ভ বাজারে সুনির্দিষ্ট হস্তক্ষেপের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
  • অতিরিক্ত টাকা ছাপানো থেকে বিরত থাকা: গভর্নর মনসুর বলেন, “অতিরিক্ত টাকা ছাপালে মূল্যস্ফীতি কমবে না, বরং সেটা অর্থনীতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।”
  • মুদ্রানীতি সংস্কার: চালু হয়েছে নতুন মুদ্রানীতির কাঠামো, যা বাজারভিত্তিক বিনিময় হার এবং বাজারমুখী সুদের হার নিশ্চিত করতে সহায়তা করছে।

গভর্নর ড. মনসুর তার বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন, আমাদের অর্থনীতি শুধু আইএমএফের টাকায় নির্ভরশীল নয়। আমাদের নিজস্ব সক্ষমতা রয়েছে।

অনেকেই বলছেন, আইএমএফের ঋণ ছাড়া চলবে না, এ বিষয়ে গভর্নরের মত, এসব কিছু না। রিফর্ম চলতেই থাকবে। এখন সময় এসেছে সামনে এগোনোর।

এর মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট করলেন যে, আইএমএফের শর্ত ছাড়াও দেশের নিজস্ব সংস্কার উদ্যোগ চালু থাকবে।

মূল্যস্ফীতিকে টার্গেট রেঞ্জের (৫-৬%) মধ্যে রাখতে হলে, নিম্নোক্ত বিষয়গুলোতে সতর্ক থাকতে হবে:

  • অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য বজায় রাখা।
  • আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে উৎপাদন বাড়ানো।
  • বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা ও আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ।
  • রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এগুলোর প্রতিকূলতা মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শক্তিশালী ভূমিকা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ এবং গভর্নরের আশাব্যঞ্জক বক্তব্য দেশের জন্য ইতিবাচক সংকেত বহন করে। যখন জনসাধারণ, বিনিয়োগকারী এবং বাজেট-প্রণয়নকারী মহলের মধ্যে নানা উদ্বেগ বিরাজ করছে, তখন এই ধরনের পূর্বাভাস অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে আশার আলো হয়ে উঠতে পারে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বাধীন আর্থিক সংস্কার প্রক্রিয়া আরও জোরদারভাবে এগিয়ে নেওয়া জরুরি।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়