News Bangladesh

তরিকুল ইসলাম মিঠু, যশোর থেকে || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৮:১৭, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

যশোরের ২০ কোটি শীতকালিন সবজিচারা যাচ্ছে সারাদেশে 

যশোরের ২০ কোটি শীতকালিন সবজিচারা যাচ্ছে সারাদেশে 

ছবি: নিউজবাংলাদেশ

যশোর শহর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে গেলেই রাস্তার দু'ধারে চোখে পড়বে সবজির চারা উৎপাদনের এক মন মুগ্ধকর দৃশ্য।

রাস্তার দু'পাশে পলিথিন দিয়ে বিশেষ কায়দায় তৈরি করা হয়েছে বীজতলা ঢাকার অস্থায়ী দৃষ্টিনন্দন সাদা পলিথিনের ছাউনি। দূর থেকে প্রথম দেখতেই মনে হবে হয়তবা কোন বড় অনুষ্ঠানের জন্য সাদা ফুল দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। বৃষ্টি এবং সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে সেই পলিথিন দিয়ে বীজতলার শেডগুলো কেউ কেউ ঢেকে দিচ্ছেন। আবার কোন কোন নারী পুরুষ মিলে বীজ রোপন করছেন। কেউ কেউ মাটি ফুড়ে বের হওয়া চারা গুলোতে ঝাজরি দিয়ে পানি দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বীজতলা থেকে চারা তুলছে বিপণনের জন্য।

এমনই অপরূপ দৃশ্য দেখা যায় যশোর সদর উপজেলার আব্দুলপুর ও বাগডাঙ্গা গ্রামের মাঠে। গ্রাম দুটি অনেক আগেই সবজি চারার গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

চারা উৎপাদনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই গ্রামের দুই শতাধিক কৃষক প্রতি মৌসুমের ৬ মাসে বিভিন্ন সবজির প্রায় ২০ থেকে ২৫ কোটি চারা উৎপাদন করেন। যা বিক্রি করেন প্রায় ২০ থেকে ৩০কোটি টাকায়। এসব চারা বিপণন করা হচ্ছে সারা দেশে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, বিট কপি, শালগম, টমেটো, মরিচসহ বিভিন্ন সবজির মানসম্মত এসব চারা কিনতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষকরা আসছেন এ দুই গ্রামে। 

প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দূর-দূরান্তের জেলা থেকে কৃষকরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী সবজি চারা নিয়ে যাচ্ছেন এখান থেকে। মানসম্মত চারা হওয়ায় এর সুনাম ছড়িয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও।

ফরিদপুরে রুপালি পাটকাঠিতে কৃষকদের শতকোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা

চারা উৎপাদনকারী টিটমিয়া জানান, আজ থেকে ২০ বছর আগে থেকে এখানে চারা উৎপাদনের কাজ শুরু হয়। তবে গত ৮ থেকে ১০ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে এখানে চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। এবছর অধিক বৃষ্টির কারণে কয়েকবার চারা উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এর ফলে কৃষকদের অনেক টাকা লোকসান হয়েছে। তাছাড়া  বীজ,সার, শ্রমিকের মজুরিও পলিথিনের দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে এখানকার চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হতো বলে তিনি জানান।

আনোয়ার হোসেন জানান, এখানকার উৎপাদিত চারা বাংলাদেশের প্রায় ৬৪ জেলাতেই বিক্রি হয়ে থাকে। অনলাইনে ও অফলাইনে এসব চার বিক্রি হয়। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে চাষিরা ও ব্যবসায়ীরা এখান থেকে চারা কিনে নিয়ে যান। এছাড়া চুড়ামনকাটি বাজারে ও চারার হাট বসে। সেখানেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারীরা এসে চারা কিনে নিয়ে যান।

রাজু আহমেদ বলেন, বর্তমানে বাজারে ভালো মানের প্রতি হাজার ফুলকপির চারা ১০০০ থেকে ১৫০০ এবং বাঁধাকপির চারা মানভেদে ৮০০ থেকে ১১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি, বাঁধাকপি মরিচ, ব্রকলি, শালগম, বেগুন, টমেটোসহ শীতের সব ধরনের সবজির চারা এখানে উৎপাদন হয়ে থাকে। বাণিজ্যিকভাবে চারা উৎপাদনের কারণে এলাকার অনেক লোকের কর্মসংস্থানে হয়েছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে এ খাতে আরও বিপ্লব ঘটানো সম্ভব বলে জানান এ চাষি।

চারা উৎপাদন নারী কর্মী জেসমিন আক্তার জানান, তার মতো অনেক নারীই বছরের ৬ মাস এ বীজ বপন ও চারা উত্তোলনের কাজ করে থাকেন। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন সবজির বীজ বপন শুরু হয়। প্রায় দেড় মাস পর চারা বিক্রির উপযোগী হয়। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে চারা বিক্রি। এই সময়টা তাদের যথেষ্ট কাজের চাহিদা থাকে। এক পাতা বীজ বপনের জন্য তারা ৩৫ টাকা করে পান। সেই অনুযায়ী ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কাজ করলে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় করতে পারেন। আর চারা উত্তোলনের জন্য হাজিরা হিসেবে একজন নারী কর্মী সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে কাজ করেন।

যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মোশারফ হোসেন বলেন, সারা দেশেই এই অঞ্চলের সবজি চারার সুনাম রয়েছে। আব্দুলপুর ও বাগডাঙ্গায় মৌসুমের ৬ মাসে প্রায় ২০ থেকে ৩০কোটি সবজি চারা উৎপাদন হয়। এ খাত থেকে ছয় মাসে প্রায় ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকায় কৃষকদের আয় হয়। তবে চারা উৎপাদনকারী কৃষকদের কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, চারা উৎপাদনে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং মার্কেট লিঙ্কেজ করতে তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়