উৎপাদন কমছে চন্দনাইশের কাঞ্চন পেয়ারার

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে পেয়ারা উৎপাদনে বিশ্বের সপ্তম অবস্থান, কিন্তু চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার ‘কাঞ্চন পেয়ারা’ উৎপাদনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হ্রাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড় কেটে মৎস্য খামার, হাইব্রিড ফলের বাগান এবং ইটভাটার প্রভাবসহ নানা কারণে এই হ্রাস ঘটছে।
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে উপজেলার প্রায় ৭৫০ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে পেয়ারা চাষ হতো। ২০২৩ সালে তা বেড়ে ৭৫৫ হেক্টর হলেও ২০২৪ সালে ৭৩০ হেক্টরে নেমে আসে এবং চলতি ২০২৫ সালে চাষের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭২০ হেক্টরে। প্রতি হেক্টরে গড়ে ১৫ মেট্রিক টন পেয়ারা উৎপাদন হয়। এর ফলে চলতি বছরের মোট উৎপাদন প্রায় ১০,৮০০ টন।
চন্দনাইশের কাঞ্চননগর, হাশিমপুর, দোহাজারী, ধোপাছড়ি ও আশপাশের পাহাড়ি এলাকা দেশের অন্যতম সুস্বাদু ও অর্থকরী পেয়ারা উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। প্রতি মৌসুমে (জুলাই থেকে অক্টোবর) এই অঞ্চলের উৎপাদিত পেয়ারা বিক্রি হয় প্রায় ১০৮ কোটি টাকায়। পাইকারি বাজারে প্রতি দুই পুটলি (৭০–৮০ কেজি) পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৩ হাজার টাকার বেশি দামে। খুচরা বাজারে প্রতি ডজন পেয়ারা ১০০–১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া, চন্দনাইশের পেয়ারা বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
কাঞ্চনাবাদ এলাকার ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন জানান, পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় কাঞ্চন পেয়ারা চাষ হয়। পরিপক্ব হওয়ার পর শ্রমিকেরা ভোরে বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে আসে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা পরে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করেন।
আরও পড়ুন: আরও পড়ুন: লালমনিরহাটের আখ চাষে দ্বিগুণ লাভবান হচ্ছে চাষিরা
ছৈয়দাবাদ এলাকার চাষি আবদুল আলীম জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ১০ কানি বাগানের পেয়ারা তিন মাসের জন্য মাত্র ১ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। পেয়ারা উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে কয়েক হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানও তৈরি হয়।
কৃষকরা নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। চাষের পরিমাণ কমার পেছনে মূল কারণগুলো হলো:
- পাহাড় কেটে মাছ চাষ ও হাইব্রিড ফলের বাগান বৃদ্ধি
- ইটভাটার তাপ ও দূষণ
- অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও সংরক্ষণের অভাব
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিরিক্ত বৃষ্টি ও মৌসুমি পরিবর্তন
- পোকার আক্রমণ এবং খরার প্রভাব
চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আজাদ হোসেন জানিয়েছেন, কৃষকদের সহায়তায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এতে রয়েছে:
- আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষণ
- সার ও কৃষি উপকরণ সরবরাহ
- বাজার সংযোগ স্থাপন
- কৃষি বিপণন বিভাগের মাধ্যমে হিমাগার নির্মাণ
সরকারি উদ্যোগ এবং কৃষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আশা করা হচ্ছে যে, কাঞ্চন পেয়ারা উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান হবে এবং এটি দেশের কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চন পেয়ারা দেশের সুস্বাদু ও অর্থকরী ফল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করলেও, উৎপাদন হ্রাস, অবকাঠামোগত সমস্যা এবং বাজার ব্যবস্থার দুর্বলতা কৃষক ও ব্যবসায়ীদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি উদ্যোগ ও কৃষক সমিতির সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই সমস্যা সমাধান সম্ভব বলে আশা করা যাচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি