শততম টেস্টে মুশফিকের শতরান
ছবি: সংগৃহীত
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বুধবার বিকেলের শেষ মুহূর্তে অদ্ভুত এক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশ ক্রিকেটের স্থায়ী ধারার একজন ব্যাটার, মুশফিকুর রহিম, তখন অপরাজিত ৯৯ রানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সূর্য নামছিল পশ্চিমে, স্টেডিয়ামের আলো আস্তে নিভছিল, আর স্কোরবোর্ডে থমকে থাকা সংখ্যাগুলো যেন পরবর্তী দিনের গল্প শোনার অপেক্ষায় ছিল। দিনের শেষ ঘণ্টায় ব্যাটার মুশফিকের ব্যাট থেমে গেল, এবং দেশের কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর চোখে রইল শুধু অপেক্ষার উত্তেজনা।
পরদিন ভোরে মিরপুর যেন নতুন এক মঞ্চে রূপান্তরিত হলো। শিশির জড়িয়ে ছিল ঘাসে, গ্যালারিতে দর্শক ক্রমে ভিড় জমাচ্ছিলেন, আর ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে এলেন মুশফিক—শান্ত, মনোযোগী, আর প্রত্যাশার চূড়ান্ত প্রতীক। প্রথম কয়েকটি বল পরখ করে নেয়ার পর শুরু হলো অপেক্ষার শেষ অধ্যায়। এবং ঠিক দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলেই, ১৯৫ বল খেলে মাইলফলক স্পর্শ করলেন মুশফিকুর রহিম। সেই এক রানেই খুলে গেল ইতিহাসের দরজা—শততম টেস্টে সেঞ্চুরি।
মিরপুরের আকাশ হঠাৎ উচ্ছ্বাসে ভরে উঠল। ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে থাকা মুশফিক যেন দুই দশকের অধ্যবসায়, কঠোর পরিশ্রম, ব্যথা ও প্রতিশ্রুতির প্রতীক হয়ে উঠলেন। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে শততম ম্যাচ খেলে সেঞ্চুরি করা প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে তাঁর নাম লেখা হলো ইতিহাসের পাতায়।
মুশফিকের শততম টেস্টের আগের ৯৯টি ম্যাচের পরিসংখ্যানও অনন্য। ১৮২ ইনিংসে তিনি সংগ্রহ করেছেন ৬৩৫১ রান, যার মধ্যে শতক ১২টি এবং অর্ধশতক ২৭টি। তবে মাইলফলকের ম্যাচগুলোতে কখনোই তাঁর রান বেশি ছিল না। প্রথম টেস্টে মাত্র ২২ রান, ৫০তম ও ৭৫তম টেস্টে প্রায় লক্ষ্য না ছুঁয়ে সাজঘরে ফেরার ঘটনা স্পষ্ট দেখিয়েছে মুশফিকের কেরিয়ারের এই মাইলফলকগুলো কতটা বিশেষ।
আরও পড়ুন: মিরপুরে মুশফিকের শততম টেস্ট, ৯৯ রানে অপরাজিত
শততম টেস্টে মুশফিকের ব্যাটিং ছিল নিখুঁত পরিকল্পিত। কোনো অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি নয়, ধৈর্য, সংযম এবং সঠিক মুহূর্তে শট—এই তিনটি মূলমন্ত্রে সাজানো। গতকাল বুধবার শেষ বিকেলে তিনি ১৮৭ বল খেলে ৯৯ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়লেও, পরের দিন ভোরে প্রথম সুযোগেই ইতিহাস গড়লেন।
এই মুহূর্তে মুশফিক বাংলাদেশের ইতিহাসে অনন্য হয়ে উঠেছেন:
- প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে দেশের হয়ে ১০০ টেস্ট খেলা।
- সেই ম্যাচেই সেঞ্চুরি করে বিশ্ব ক্রিকেটের এলিট তালিকায় যোগ।
- বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরির মালিক।
- উইকেটের পেছনে সবচেয়ে বেশি ডিসমিসাল।
টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৮ বছরের ইতিহাসে শততম ম্যাচে সেঞ্চুরি করার কীর্তি আগে মাত্র ১০ জন ব্যাটার করেছেন। কলিন কাউড্রে থেকে জো রুট, ডেভিড ওয়ার্নার পর্যন্ত কেউ কেউ দ্বিগুণ সেঞ্চুরির কৃতিত্বও অর্জন করেছেন। মুশফিক এই তালিকায় বাংলাদেশের হয়ে প্রথম এবং বিশ্ব ক্রিকেটে ১১তম ব্যাটার হিসেবে যোগ দিলেন।
মিরপুরের সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে দর্শকরা যেমন উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়লেন, তেমনি দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা অনুভব করলেন—কেন মুশফিক শুধুই একজন ব্যাটার নন, তিনি পুরো দলের আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। প্রতিটি বলের জন্য ধৈর্য, প্রতিটি রান সংগ্রহের জন্য পরিকল্পনা—এই ছিল মুশফিকের শততম টেস্টের গল্প।
অবশেষে, মাইলফলকের ম্যাচে ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠা মুশফিকুর রহিম তাঁর ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরি সংগ্রহ করে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে নাম লিখালেন। এক দীর্ঘ অপেক্ষার পর, দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য উজ্জ্বল সকাল হয়ে উঠল মিরপুরের মাটিতে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








