বাংলাদেশের হয়ে খেলতে এসে আবেগাপ্লুত হামজা চৌধুরী
ফাইল ছবি
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের তারকা মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশে ফিরেছেন। আসন্ন নেপাল ও ভারতের বিপক্ষে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচকে সামনে রেখে সোমবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে তিনি ঢাকায় পৌঁছান। বাংলাদেশ ফুটবল দল ১৩ নভেম্বর নেপালের বিপক্ষে একটি ফিফা প্রীতি ম্যাচ এবং ১৮ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ফিরতি ম্যাচ খেলবে। দুটি ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সকালে ঢাকায় মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা পিএলসি এক বছরের জন্য হামজা চৌধুরীকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে ঘোষণা দেয়। রবি কর্পোরেট অফিসে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে হামজা বাংলাদেশের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা, দেশপ্রেম, এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নিয়ে কথা বলেন।
লেস্টার সিটির এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার বলেন, আমি বাংলাদেশের হয়ে কয়েক মাস হলো খেলছি। এখনো সত্যি বলতে অবাস্তব মনে হয় এই ভ্রমণটা। আমি শুধু চাই এই দেশের অংশ হয়ে গর্ব করতে এবং যেকোনোভাবে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে। বিশেষ করে আমার মা–বাবার জন্য।
নিজের শিকড়ের প্রতি গর্ব প্রকাশ করে হামজা বলেন, আমার বাবা এই দেশেই জন্মেছেন ও বড় হয়েছেন, তাই তাদের মুখে সেই হাসিটা দেখতে পাওয়াটাই আমার আসল প্রাপ্তি। প্রত্যেক সন্তানই চায় তার বাবা-মাকে গর্বিত করতে, আর আমি মনে করি আমি ভাগ্যবান যে আমি পুরো জাতিকেই গর্বিত করতে পারি।
বাংলাদেশে এলে সর্বত্র সমর্থকদের উচ্ছ্বাস ও ভালোবাসা অনুভব করেন হামজা।
তিনি বলেন, আমি যে ভালোবাসা পাই, সেটা আমি খুব ভালোভাবে লালন করি। আমি চেষ্টা করি সেই ভালোবাসা ও সমর্থনটা সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে। যখনই আমি বাংলাদেশ ছাড়ি, আমার বাচ্চারা বলে তারা বাংলাদেশে ফিরতে চায়। ইনশা আল্লাহ, তারা মার্চে আবার ফিরে আসবে।
আরও পড়ুন: ৩ মিনিটে শেষ বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের টিকিট
বাংলাদেশের হয়ে খেলার পেছনে আর্থিক প্রেরণা নয়, বরং দেশের প্রতি দায়িত্ববোধই প্রধান বলে জানান ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের এই তারকা।
আমি টাকার কথা আলাদাভাবে চিন্তা করি না। দেশের প্রতি ভালোবাসা ও কীভাবে দেশের পরিস্থিতি উন্নত করতে পারি, সেটাই মূল বিষয়। সেই উন্নতিতে নিজের সামর্থ্যমতো অবদান রাখাই বাংলাদেশের হয়ে খেলার অন্যতম কারণ।
বাংলাদেশে তার শৈশবের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে বলেও জানান তিনি।
হামজা বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে শৈশবের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এখানে আসাটা উপভোগ করি, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে ফুটবল খেলতে অনুপ্রাণিত করতে।
আসন্ন ম্যাচগুলো নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হামজা বলেন, ইনশা আল্লাহ, আমরা ভারতের বিপক্ষে জিতব। আমার সামনে দুটো ম্যাচ আছে, তাই এখন সম্পূর্ণভাবে সেই ম্যাচগুলোর দিকেই মনোযোগ দিচ্ছি। শতভাগ মনোযোগ দিয়ে যেন খেলতে পারি এবং নিজের সেরাটা দিতে পারি—এটাই লক্ষ্য।
ইংল্যান্ডের হয়ে বয়সভিত্তিক ফুটবল খেলার পর বাংলাদেশের হয়ে খেলতে নামা হামজা বলেন, শুধু দেশের বাইরে থেকে নয়, দেশ থেকেও আমরা অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় উঠে আসতে দেখব। ইনশা আল্লাহ, একদিন তারা ইউরোপেও খেলবে। আমরা সবাই দেশ হিসেবে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে পারব, ফুটবলকে আরও বড় করতে পারব এবং প্রচুর উন্নতি করতে পারব।
গত বছরের ২৫ মার্চ ২০২৪ শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র ম্যাচ দিয়েই বাংলাদেশ জাতীয় দলে অভিষেক হয় হামজার। এরপর থেকে তিনি নিয়মিতই জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামছেন। এখন পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের হয়ে পাঁচটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশ নিয়েছেন। লেস্টার সিটির এই মিডফিল্ডার বর্তমানে বাংলাদেশের দলের অন্যতম ভরসা।
হামজার আগমনে ঢাকার ফুটবলপ্রেমীরা উচ্ছ্বসিত। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে রবি কর্পোরেট অফিস পর্যন্ত সর্বত্র ভিড় জমে যায় তাকে দেখার জন্য। জাতীয় দলের অনুশীলনেও সমর্থকদের ভিড় প্রত্যাশিত বলে জানিয়েছেন বাফুফে কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশে বারবার ফিরে আসা হামজা চৌধুরী এখন শুধু জাতীয় দলের খেলোয়াড় নন, বরং দেশের ফুটবলের অনুপ্রেরণা। তার কথায় ফুটে ওঠে দায়িত্ববোধ, পারিবারিক বন্ধন ও দেশের প্রতি গভীর মমত্ব।
তার ভাষ্য, আমি গর্বিত যে এই দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারছি, আর আমার বাবা-মাকে হাসাতে পারছি। সেটাই আমার সবচেয়ে বড় সাফল্য।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








