ইসরায়েলকে নিষিদ্ধের দাবিতে ৫০ খেলোয়াড়ের চিঠি
ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনে চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাত ও ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবার জোরালোভাবে সরব হয়েছেন বিশ্বের সাবেক ও বর্তমান ৫০ জন শীর্ষ ক্রীড়াবিদ।
ইউরোপীয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফার (UEFA) কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে তারা ইসরায়েলকে সকল প্রতিযোগিতা থেকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।
ব্রিটেনভিত্তিক নুজুম স্পোর্টসের উদ্যোগে ‘অ্যাথলেটস ফর পিস’ (শান্তির জন্য ক্রীড়াবিদ) ব্যানারে এই চিঠিটি পাঠানো হয়েছে।
এতে স্বাক্ষরকারীদের একটাই দাবি—আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের এমন সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের দায়ে অবিলম্বে ইসরায়েলকে উয়েফার সকল প্রতিযোগিতা থেকে বহিষ্কার করা হোক।
এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের বর্তমান ও সাবেক ৫০ জন তারকা ক্রীড়াবিদ। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন:
- পল পগবা: ফরাসি বিশ্বকাপজয়ী মিডফিল্ডার (মোনাকোর ফরাসি মিডফিল্ডার হিসাবেও উল্লেখ করা হয়েছে)।
- মঈন আলী: ইংলিশ ক্রিকেটার (সাবেক অলরাউন্ডার ও সাবেক ইংল্যান্ড ক্রিকেট অধিনায়ক)।
- হাকিম জিয়েচ: চেলসির সাবেক তারকা/মরোক্কান উইঙ্গার।
- আনোয়ার এল ঘাজি: ডাচ উইঙ্গার (সাবেক অ্যাস্টন ভিলা ফরোয়ার্ড, বর্তমানে কাতারের আল সাইলিয়া ক্লাবে খেলছেন)।
- নাইজেল পিয়ার্সন: লেস্টার সিটির সাবেক কোচ/ম্যানেজার।
- জ্যাক চেল্লি: ব্রিটিশ বক্সার।
- খাদিজা মেল্লা: হিজাব পরা প্রথম ব্রিটিশ নারী জকি।
- চিয়েক ডৌকুরে: ক্রিস্টাল প্যালেসের তারকা/মালিয়ান মিডফিল্ডার।
- স্যাম মরসি: সাবেক ইপ্সউইচ টাউন অধিনায়ক।
চিঠিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে, যদি রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করা যেতে পারে, তবে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে ইসরায়েলকে কেন নয়?
চিঠির শেষাংশে উয়েফাকে আহ্বান জানানো হয়েছে, ইসরায়েলকে সব প্রতিযোগিতা থেকে অবিলম্বে বহিষ্কার করুন। যত দিন না তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে, বেসামরিক মানুষ হত্যা ও অনাহার সৃষ্টি বন্ধ করে।
এতে আরও বলা হয়েছে, অন্যায়ের মুখে খেলাধুলা নিরপেক্ষ থাকতে পারে না। নীরব থাকা মানে হলো মেনে নেওয়া যে কিছু মানুষের জীবন অন্যদের জীবনের চেয়ে কম মূল্যবান। আমরা বিশ্বাস করি, সব দেশ ও সব মানুষের জন্য একটাই মানদণ্ড থাকা উচিত—কোনো দ্বিচারিতা ছাড়া ন্যায়বিচার।
আরও পড়ুন: ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল নেপাল
সংবাদ রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, চিঠিতে জাতিসংঘের সেপ্টেম্বরের একটি প্রতিবেদনও যুক্ত করা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ও নিরাপত্তা বাহিনীর উদ্দেশ্য হলো গাজার ফিলিস্তিনিদের আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস করার গণহত্যামূলক অভিপ্রায় বাস্তবায়ন করা।
ক্রীড়াবিদরা মনে করেন, যে দেশকে জাতিসংঘ কমিশন গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত করেছে, তার প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ক্রীড়া সংস্থাগুলোর নৈতিক দায়িত্ব।
এই উদ্যোগে বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছেন ডাচ উইঙ্গার আনোয়ার এল ঘাজি। ২০২৩ সালে ফিলিস্তিনের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবস্থান নেওয়ার কারণে জার্মান ক্লাব মেইঞ্জ ০৫ তাকে বরখাস্ত করেছিল। পরে জার্মান আদালত রায় দেয় যে ঘাজির সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছিল। এরপর থেকেই তিনি ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে সরব কণ্ঠে পরিণত হয়েছেন।
চিঠিতে বিশেষভাবে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে প্রয়াত ফিলিস্তিনি কিংবদন্তি ফুটবলার সুলেইমান আল-ওবেইদের প্রতি, যিনি ‘ফিলিস্তিনি পেলে’ নামে পরিচিত ছিলেন।
প্যালেস্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএফএ) জানিয়েছে, গত আগস্টে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় তিনি নিহত হন।
চিঠিতে সুলেইমানের মৃত্যুকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, বেঁচে থাকতে খেলাধুলার মাধ্যমে তিনি আশা জাগিয়েছিলেন। আর মৃত্যুর মাধ্যমে তিনি বিশ্বকে, বিশেষত ক্রীড়া সংস্থাগুলোকে, পদক্ষেপ নেওয়ার কঠিন স্মারক হয়ে উঠেছেন।
খেলাধুলার মঞ্চে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। ৫০ জন ক্রীড়াবিদের এই উদ্যোগের আগে জাতিসংঘের একদল বিশেষজ্ঞ, তুরস্ক ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট এবং স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ একই দাবি তুলেছিলেন।
এর আগেও জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল এবং প্যালেস্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএফএ) ফিফার কাছে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছিল।
তবে এই উদ্যোগের তীব্র বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছে যে, ২০২৬ বিশ্বকাপে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করার যেকোনো প্রচেষ্টা তারা প্রতিহত করবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বিবিসি স্পোর্টকে বলেছেন, আমরা নিশ্চিত করবো, ইসরায়েলের জাতীয় ফুটবল দলকে বিশ্বকাপ থেকে নিষিদ্ধ করার কোনো প্রচেষ্টা সফল না হয়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








