নির্বাচনে শক্তিশালী হতে বামদের ঐক্য চেষ্টা

ফাইল ছবি
রাজনীতির মহাসড়কে চলছে নির্বাচনী প্রস্তুতির চূড়ান্ত জমজমাট আয়োজন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো ভোট ও জোট গঠনের নতুন মেরুকরণ শুরু করেছে।
বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলো নিজেদের স্বতন্ত্র পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও, বামপন্থি দলগুলো ঐক্যবদ্ধ একটি বিকল্প জোট গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন বিকল্প শক্তি হিসেবে উঠে আসবে।
বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা, গণফোরাম, বাংলাদেশ জাসদ, ঐক্য ন্যাপসহ বিভিন্ন বাম ও প্রগতিশীল দল ইতিমধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একতা প্রতিষ্ঠায় কাজ শুরু করেছে।
নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, একটি ‘যুক্তফ্রন্ট’ বা ‘বাম গণতান্ত্রিক বিকল্পধারা’ নামে নতুন জোট গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে, যা দ্বিদলীয় রাজনীতির বাইরে দেশকে একটি শক্তিশালী বাম বিকল্প দিতে সক্ষম হবে।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সমর্থনে একটি শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও রাজপথের আন্দোলন—দুটোই আমরা সমান্তরালভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজচিন্তক প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের মতো নয়, বর্তমান যুক্তফ্রন্ট হবে সম্পূর্ণ বামপন্থিদের। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই ঐক্যের উপর।
আরও পড়ুন: ৫ আগস্ট দেশের মানুষ বুক ভরে শ্বাস নিতে পেরেছে: তারেক রহমান
নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি ও জোট গঠনের বিষয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরাম, গণতন্ত্র মঞ্চ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং নাগরিক ঐক্যের মতো দলগুলো ইতিমধ্যে আলোচনা করছে।
বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলনের পর জোটের কাঠামো চূড়ান্ত হবে। আমরা চেষ্টা করছি সব বাম দলকে একত্রে নিয়ে একটি শক্তিশালী নির্বাচনী জোট করার।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব জানিয়েছেন, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ফ্যাসিবাদী কাঠামো পরিবর্তনের লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আগামী ২৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় কার্যকর কমিটির সভায় নির্বাচনী কৌশল ও জোট গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের সভাপতি মাহমুদু রহমান মান্না বলেন, বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন করেছি, নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠনের আইডিয়া আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য। তবে এখনো আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হয়নি।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানালেন, আমরা নির্বাচনী অঞ্চলের প্রার্থী বাছাই নিয়ে আলোচনা করছি। গণতন্ত্র মঞ্চও নির্বাচন নিয়ে কাজ করছে এবং বিএনপির সঙ্গে ঐক্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গণ-সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা ৩০০ আসনের টার্গেটে দলগত ও জোটগতভাবে কাজ করছি। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন এখনও অব্যাহত রয়েছে।
বামপন্থি দলগুলোর নেতারা একমত যে, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও সরকারকে নিরপেক্ষতার নিশ্চয়তা দিতে হবে, যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া জনজীবনের সমস্যা ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে।
জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশের লক্ষ্যে বাম দলগুলোর এই নতুন জোট গঠনের পরিকল্পনা আগামী নির্বাচনে প্রভাবশালী বিকল্প শক্তি হিসেবে স্বীকৃতির পথ তৈরি করবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি