মুখোমুখি মিন্টু-আনিস
একজনের মামলা ১৪, অন্যজনের শূন্য
ঢাকা: উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিআইয়ের সাবেক দুই সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু ও আনিসুল হক। প্রার্থীতা নিশ্চিত হয়ে গেলে এ দুজন এবার মুখোমুখি লড়তে যাচ্ছেন।
একদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে আনিস নেমেছেন নির্বাচনে, অন্যদিকে মিন্টু নেমেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ইঙ্গিতে। তবে মিন্টুর বিরুদ্ধে ১৪টি ফৌজদারি মামলা থাকলেও আনিসুলের বিরুদ্ধে নেই একটিও।
রিটার্নিং অফিসে জমা দেয়া হলফনামা যাচাই করেই এমন তথ্য পাওয়া গেছে। হলফনামা অনুযায়ী, অর্থ-সম্পদের দিক থেকে এগিয়ে আছেন মিন্টু, তবে আনিসের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বেশি। অন্যদিকে মিন্টু দেনা ছেলের কাছে আর আনিসের চাইতে বেশি সম্পদ রয়েছে তার স্ত্রীর।
হলফনামা অনুযায়ী, আবদুল আউয়াল মিন্টুর নামে বিস্ফোরক মামলাসহ ১৪টি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে ২০১৩ সালে পাঁচটি, ২০১৪ সালে একটি ও চলতি বছরে পাঁচটি মামলা করা হয়েছে। পাঁচটিতে জামিন পেলেও বাকিগুলো এখনো বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে।
এর আগে মিন্টু দুটি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন বলেও হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। একটি মামলা হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত আছে।
মিন্টুর শিক্ষাগত যোগ্যতায় দেখানো হয়েছে তিনি ডাবল মাস্টার্স। তিনি অ্যাগ্রিকালচারার ইকোনমিক্সে ও ট্রান্সপোটেশন ম্যানেজমেন্টে ¯œাতকোত্তর করেছেন। তার ১৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে ছেলে তাফসির আউয়ালের কাছে তিনি ঋণী ১৮ কোটি ১ লাখ টাকা।
হলফনামা থেকে আরো জানা গেছে, ব্যবসা খাতেই মিন্টুর আয় সবচেয়ে বেশি। এ খাতে বছরে তিনি ৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা আয় করেন। শেয়ার ও ব্যাংক আমানত থেকে ২ কোটি ৪ লাখ টাকা বছরে তার উপার্জন।
হলফনামায় মিন্টু উল্লেখ করেছেন, কৃষিখাতে ৩৬ লাখ টাকা ছাড়াও নিজের পেশা থেকে ২ লাখ ৭২ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। এছাড়া অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া দিয়ে বছরে পান ৯০ লাখ টাকা। অন্যান্য আয় হিসেবে তিনি দেখিয়েছেন ৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
মিন্টু তার ছেলে তাফসির আওয়ালের কাছে ১৮ কোটি ১ লাখ টাকা ঋণী থাকার পাশাপাশি সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিও তার কাছে পাবে ১৮ কোটি ১ লাখ ৬০ হাজার। তবে নিজ নামে তিনি কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করেননি।
মিন্টু জানিয়েছেন, প্রগতি ইন্সুরেন্স, প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্স, লাল তীর সিড লি., এম এফ কনজুমারসহ মোট ১৪ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে তার। নিজ নামে না থাকলেও তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে একাধিক ব্যাংকে ঋণ আছে।
এদিকে আনিসুল হকের নামে কোনো ফৌজদারি মামলা নেই। তিনি মোহাম্মদী গ্রুপের ২২টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিক। তবে তার চেয়ে তার স্ত্রীর সম্পদ বেশি বলে হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন।
আনিসুল হক তার ব্যবসা থেকে বছরে আয় করেন ২৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা। তার স্ত্রীর আয়ও একই। তবে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও দোকান ভাড়া থেকে আনিস বছরে ২ লাখ ৪০ টাকা পান। এক্ষেত্রে স্ত্রী ৯ গুণ বেশি পেয়ে আয় করেন বছরে ১৮ লাখ টাকা।
আনিস হলফনামায় জানিয়েছেন, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে তার আয় ১ লাখ ৬১ হাজার ১৫৬ টাকা, আর তার স্ত্রীর আয় ৫৬ হাজার ৯২৮ টাকা।
অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে আনিসুল হকের নগদ টাকা রয়েছে ১ কোটি ৯৫ লাখ নগদ টাকা, তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ৩৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। এছাড়া পুত্র নাভিদুল হকের নামে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৯৪১ টাকা, কন্যা ওয়ামিক উমায়রার নামে ২০ লাখ ৬৫ হাজার ২২৯ টাকা এবং ফারিয়া মান হকের নামে ১১ লাখ ২২ হাজার ৪৫০ টাকাও রয়েছে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজের নামে ৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা থাকলেও স্ত্রীর নামে রয়েছে ৪ গুণ বেশি, ২৮ লাখ ২৪ হাজার টাকা। বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ারে রয়েছে ১১ কোটি ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা। স্ত্রীর নামেও এ খাতে রয়েছে ৭৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।
তিনি আরো জানিয়েছেন, সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ হিসেবে তার ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা থাকলেও স্ত্রীর রয়েছে আরো এককোটি টাকা বেশি।
আনিসুল হকের নিজের নামে ৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকার অকৃষি জমি আছে। তবে স্ত্রীর নামে ৭০ লাখ ৬১ হাজার টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। ছয়টি ব্যাংক থেকে তার ঋণ নেয়া থাকলেও সেগুলো নিয়মিত পরিশোধ করছেন বলেও তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এমএ/এটিএস
নিউজবাংলাদেশ.কম








