News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ২৯ জুলাই ২০২৫

তারুণ্যের শক্তিই রাজনৈতিক রূপান্তরের ভিত্তি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

তারুণ্যের শক্তিই রাজনৈতিক রূপান্তরের ভিত্তি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

তারুণ্য কেবল আমাদের ভবিষ্যৎ নয়, আজকের বাংলাদেশে তারাই আমাদের বর্তমান — গণতান্ত্রিক রূপান্তরের কেন্দ্রবিন্দুতে যারা দাঁড়িয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘে আয়োজিত বিশেষ এক আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে একথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও নিউ ইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত “জুলাই বিয়ন্ড বর্ডারস: সেলিব্রেশন অব দ্য পাওয়ার অব দ্য ইয়ুথ ইন ট্রান্সফরর্মিং বাংলাদেশ” শীর্ষক এ অনুষ্ঠানটি মূলত অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, জাতিসংঘ কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য দেন জাতিসংঘের যুববিষয়ক অফিসের প্রতিনিধি ড. সুধা বালাকৃষ্ণণ।

তারুণ্যের নেতৃত্বে উদ্ভূত গণঅভ্যুত্থানই গণতান্ত্রিক রূপান্তরের ভিত্তি উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এক বছর আগে তরুণদের নেতৃত্বেই যাত্রা শুরু হয়েছিল একটি সমতা, স্বচ্ছতা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজের প্রত্যাশায়। সেটিই রূপ নেয় এক সার্বজনীন জন-আকাঙ্ক্ষায় — একটি সফল গণআন্দোলনে, যা ইতিহাসে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ নামে চিহ্নিত।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, যারা একসময় মিছিলের অগ্রভাগে ছিল, আজ তারাই রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখছে। তারা এখন নতুন প্রশাসনিক ধারণা নিয়ে এগিয়ে আসছে, ডিজিটাল উদ্ভাবনকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, এবং সমাজ বিনির্মাণে একটি অগ্রসর প্রজন্মে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, এই আন্দোলনের পথ ধরে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আজ দেশকে একটি সুন্দর, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্থিতিশীল ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে।

উপদেষ্টা হোসেন সরকার গৃহীত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন:

  • দমনমূলক আইন বাতিল করা হয়েছে, যাতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংরক্ষিত থাকে।
  • সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
  • নির্বাচনী ব্যবস্থা পুনর্গঠন করে সকলের অংশগ্রহণ ও ভোটের মূল্য ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
  • গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: জুলাই শুধু স্বৈরাচার মুক্তির নয়, পুনর্জন্মের মাস: প্রধান উপদেষ্টা

তিনি বলেন, আমরা এমন সব আইনি কাঠামো সরিয়ে ফেলছি, যা জনগণের ওপর অবিচার করতো। আমরা এমন নির্বাচনী কাঠামো গড়ছি, যেখানে ভোটের মূল্য সত্যিকার অর্থেই প্রতিফলিত হয়।

তৌহিদ হোসেন তার বক্তব্যে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতাকে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান কেবল জাতীয় ঘটনা নয়। এটি সরাসরি ‘যুব, শান্তি ও নিরাপত্তা’, ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং ‘ফিউচার প্যাক্ট’-এর মতো আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের সাথেও যুক্ত।

নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শুধু স্মরণ বা আনুষ্ঠানিক উদযাপনে সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না। আমাদের এমন নীতিগত কাঠামো তৈরি করতে হবে, যেখানে তরুণদের নেতৃত্ব দেওয়ার পথ উন্মুক্ত থাকে।

তিনি আহ্বান জানান, তরুণদের সাহস, সৃজনশীলতা ও শক্তিই আমাদের শান্তি, ন্যায়ের সমাজ গঠনে পথ দেখাতে পারে।

জাতিসংঘ যুব অফিসের প্রতিনিধি ড. সুধা বালাকৃষ্ণণ তার বক্তব্যে বলেন, যে কোনো সমাজ পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে তারুণ্য থাকে। জাতিসংঘ সব সময় তারুণ্যের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে। বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা এখন অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্যও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে।

তিনি যোগ করেন, বাংলাদেশে তারুণ্য শুধু প্রতিবাদ জানায়নি, তারা দায়িত্ব নিয়েছে। রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয়ভাবে পরিবর্তনের অগ্রদূত হয়ে উঠেছে।

অনুষ্ঠানে একটি তথ্যচিত্রে 'জুলাই-আগস্ট ২০২৪' গণআন্দোলনের পটভূমি, তরুণদের ভূমিকা, শহীদদের স্মরণ, এবং আন্দোলনের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ফলাফল তুলে ধরা হয়। প্রদর্শনীতে ছিল:

  • পোস্টার ও দেয়াললিখন
  • আলোকচিত্র
  • মাঠ পর্যায়ের প্রতিবাদ সংগঠকদের সাক্ষাৎকার

সব মিলিয়ে আয়োজনটি ছিল এক তরুণ-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও উদযাপন।

এছাড়া, উল্লেখযোগ্যভাবে বলা হয় যে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন নিউইয়র্ক সফরে রয়েছেন ফিলিস্তিন সমস্যার দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নিয়ে জাতিসংঘের একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য প্রদানের জন্য। সেখানে তিনি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানে বাংলাদেশের অবিচল অবস্থান তুলে ধরবেন বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়