মিত্রদের জন্য আসন ছাড়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত বিএনপির

ফাইল ছবি
বিগত সাড়ে ১৫ বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে থাকা মিত্রদের জন্য আসন ছাড় দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দল ইতোমধ্যে মিত্রদের কাছে আসন বণ্টন ও সমঝোতার জন্য তালিকা চেয়েছে। তবে বিএনপির বলয়ের বাইরে অন্য কোনো জোটে গেলে আসন ছাড় দেয়া হবে না।
একই সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা মিত্রদের নিয়ে নির্বাচনি জোট গঠনের বিষয়েও আনুষ্ঠানিক আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। মঙ্গলবার রাতে গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ (বীরবিক্রম) এবং ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৈঠক সূত্র জানায়, শিগগিরই মিত্রদের সঙ্গে আসন ছাড় ও জোট গঠনের বিষয়ে আলোচনা শুরু হবে। দল যাচাই করছে, কোন আসনে কারা জয়ী হতে পারেন, তাদের যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা, এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কারা। এছাড়া, ওই আসনে বিএনপির প্রার্থীরা মিত্রদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য নির্দেশ পাবেন।
যারা মনোনয়ন পাবেন না, তাদের অন্যভাবে মূল্যায়ন করার প্রতিশ্রুতি দেবে বিএনপি। এছাড়া বয়সের কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে না চাওয়াদের জন্য টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী বা সংসদের উচ্চকক্ষে নেওয়ার বিষয়ও বিবেচনা করা হচ্ছে।
বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে প্রথমে ৪২টি দল, পরে আরও ১০টি দল যোগ দিয়েছে। ৫২-৫৩ দলের নেতারা রাজপথে কষ্ট করেছেন, কারাগারে গেছেন। তাদের আমরা মূল্যায়ন করব।’
সূত্র জানায়, বৈঠকে কেউ কেউ বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী মুখে বলছে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। অথচ ৩০০ আসনে ইতোমধ্যে প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপি একটি উদার গণতান্ত্রিক দল, তাই প্রতিটি আসনে তিন-চারজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ও জনপ্রিয় নেতা থাকায় তফসিলের আগে সব আসনে প্রার্থী ঘোষণা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: “মির্জা ফখরুলের বক্তব্য নিয়ে ভুল তথ্য দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম”
বিএনপি ইতোমধ্যেই দেড় শতাধিক প্রার্থীকে নির্বাচনি আসনে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। বাকি দেড় শতাধিক আসনে দল ও মিত্রদের মধ্যে কারা প্রার্থী হবেন তা যাচাই-বাছাই শেষে ঠিক করা হবে। চূড়ান্ত মনোনয়ন করবে পার্লামেন্টারি বোর্ড।
সূত্র জানায়, বৈঠকে আসন্ন দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। পূজামণ্ডপে শান্তি বজায় রাখা এবং যেকোনো নাশকতা প্রতিহত করার জন্য নেতা-কর্মীদের পাহারা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির গঠনতন্ত্রের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলের প্রার্থী মনোনয়ের চূড়ান্ত দায়িত্ব পার্লামেন্টারি বোর্ডের। বোর্ডের সভাপতি হবেন দলের চেয়ারম্যান।
২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। সেই সময়ে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটসহ বিভিন্ন দল আন্দোলনে যোগ দেয়। এলডিপি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) এককভাবে হলেও আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
২০১৮ সালের নির্বাচনে মিত্রদের মধ্যে ১৯টি আসন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে এবং ৩৯টি আসন ২০-দলীয় জোটের শরিকদের দেওয়া হয়েছিল। এবারও মিত্র দলগুলো অর্ধশতাধিক আসন চাচ্ছে। তবে বিএনপি ৩০টির মতো আসনে আসন ছাড় দিতে পারে।
গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব শারীরিক অসুস্থতার কারণে অংশ নিতে না পারলে তার স্ত্রী তানিয়া রব প্রার্থী হবেন। বগুড়া-৪ আসনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা-৮ আসনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি প্রার্থী হবেন।
১২-দলীয় জোটের মধ্যে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, কুষ্টিয়া-২ আসনে জাতীয় পার্টি (জাফর) মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন প্রার্থী হবেন। মোস্তফা জামাল হায়দার বয়সের কারণে সরাসরি নির্বাচনে অংশ নেবেন না।
চট্টগ্রাম-১৪ আসনে এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে তার ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক, কুমিল্লা-৭ আসনে মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, ময়মনসিংহ-১০ আসনে প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ঢাকা-১৭ আসনে বিএনপি ছাড়লে বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ প্রার্থী হবেন। ঢাকা-৬ আসনে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী এবং পটুয়াখালী-৩ আসনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর প্রার্থী হবেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা-৮ আসনে আমি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিএনপি যদি এই আসন ছেড়ে দেয়, জয় নিশ্চিত।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মৌখিক সমর্থন পেয়েছি। আশা করি চূড়ান্ত মনোনয়নও পাব।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি