News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৯:২৮, ২৯ জুলাই ২০২৫

জুলাই শুধু স্বৈরাচার মুক্তির নয়, পুনর্জন্মের মাস: প্রধান উপদেষ্টা

জুলাই শুধু স্বৈরাচার মুক্তির নয়, পুনর্জন্মের মাস: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

জাতিসংঘের মানবাধিকার মিশনের আয়োজনে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘জুলাই বিপ্লব ও অনুসন্ধান প্রতিবেদন’ বিষয়ক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্মরণ করেন ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান এবং মানবাধিকার রক্ষার সংগ্রাম। 

তিনি বলেন, দেশের জনগণ সেই অন্ধকার সময়ে অত্যন্ত সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজেদের মর্যাদা পুনরুদ্ধার করেছিল।

ড. ইউনূস জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা সংকট, এবং গত বছরের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের অবদান বাংলাদেশের জন্য অতুলনীয়। জাতিসংঘের সহায়তা ও সংহতি আমাদের জন্য এক অবিচ্ছেদ্য শক্তি।

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘ মানবাধিকার রক্ষায় এক বিশ্বজনীন কাঠামো গড়ে তুলেছে, যার মূলনীতি আজও বাংলাদেশের সংবিধানের ভিত্তি। তবে গত ষোল বছরে এসব অধিকার বহুলাংশে লঙ্ঘিত হয়েছে, এবং শাসন ব্যবস্থায় সহিংসতা ও অন্যায়ের চলমান অবস্থা বিরাজমান ছিল।

ড. ইউনূস জানালেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সংঘটিত নির্মম সহিংসতায় প্রায় ১,৪০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে, যা জাতিসংঘ হাইকমিশনারের প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয়েছে। এই সহিংসতা ছিল পরিকল্পিত ও সংগঠিত, শাসনের শীর্ষস্তরের অনুমোদনে পরিচালিত এবং সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধের দিকেও সতর্ক সংকেত দেয়।

জাতিসংঘের হাইকমিশনার অফিসের প্রতিবেদনের পাশাপাশি বিবিসি ও আল-জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রতিবেদনও এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। জাতিসংঘ হাইকমিশনার অফিস শুধুমাত্র তথ্য সংগ্রহ করেনি, বরং ভবিষ্যতে মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধে কার্যকর সুপারিশও প্রদান করেছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা জাতিসংঘের সুপারিশ হৃদয়ঙ্গম করে দ্রুত সংস্কার শুরু করেছি। ফৌজদারি কার্যবিধিতে সংশোধনী আনা হয়েছে, এবং ‘জোরপূর্বক গুমের সকল ব্যক্তি সুরক্ষা বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশন’-এ স্বাক্ষর করেছি। 

আরও পড়ুন: একাত্তরেরও চেয়ে ভয়াবহ হাসিনার নৃশংসতা: আসিফ নজরুল

তিনি আরও জানান, এই মাসের শুরুতেই জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার অফিসের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা ঢাকায় একটি সহায়ক মিশন স্থাপন করবে। এটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও সুশীল সমাজের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

ড. ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক, এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, যারা এই রূপান্তর অভিযাত্রায় অবিচল সহায়তা প্রদান করেছেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িতদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। তবে ন্যায়বিচার কেবল শাস্তি নয়; এটি এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার নাম, যেখানে কখনোই রাষ্ট্রক্ষমতা জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে না।

তিনি দেশের জন্য একটি জাতীয় ঐকমত্যের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক ব্যবস্থার গঠন, যাতে প্রতিটি নাগরিক মর্যাদা ও স্বাধীনতায় শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা জুলাইকে শুধু স্বৈরাচার মুক্তির মাস নয়, বরং দেশের জন্য ‘পুনর্জন্মের’ মাস হিসেবেও আখ্যায়িত করেন। 

তিনি সতর্ক করেন, জুলাইয়ের শিক্ষা ভুলে গেলে চলবে না। শুধু উপরের স্তরে সংস্কার করলে কাজ হবে না; আমাদের গভীর ও আন্তরগত সংস্কার দরকার।

ড. ইউনূস বলেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই হবে কার্যকর ও টেকসই, যদি আমরা সমাজের মূলভিত্তিতে থাকা সমস্যা দূর করি। বছরের পর বছর যে নির্মম অত্যাচার চলেছে, তা আর কেউ দেখবে না—এটি নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি যোগ করেন, আমাদের সামনে এখনো অনেক কাজ বাকি। আমরা একসঙ্গে এগিয়ে যেতে চাই একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে, যেখানে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার হবে অটুট।

সভায় ড. ইউনূস ২০২৪ সালের জুলাইয়ের আন্দোলনে জীবন বিসর্জন দেওয়া সকল শহীদদের স্মরণ করেন এবং বলেন, তাদের আত্মত্যাগ আমাদের নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছে—একটি আশার, মানবাধিকারের এবং গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের বাংলাদেশ।

তিনি জাতিসংঘের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান এবং ভবিষ্যতেও একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়