News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৭:৫৬, ২৯ জুলাই ২০২৫

একাত্তরেরও চেয়ে ভয়াবহ হাসিনার নৃশংসতা: আসিফ নজরুল

একাত্তরেরও চেয়ে ভয়াবহ হাসিনার নৃশংসতা: আসিফ নজরুল

ছবি: সংগৃহীত

শেখ হাসিনা ও তার দোসররা যে অপরাধ করেছে, ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীও এমন নৃশংসতা দেখায়নি বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত “জুলাই গণহত্যার বিচার: আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী” অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা, আহতদের গুলি করে হত্যা করা, নিরস্ত্র মানুষকে টার্গেট করে গুলি চালানো—এগুলো একাত্তরের ফুটেজ বা মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ণনায় পাওয়া যায় না। অন্যরকম নৃশংসতা ছিল, কিন্তু এমন নিষ্ঠুরতা ছিল না। ২৫ মার্চ কালরাত্রির কথা বলা যেতে পারে, কিন্তু সেটা ছিল এক দখলদার বিদেশি বাহিনীর কাজ। আমরা স্বাধীনতা ঘোষণার পরে তা প্রতিরোধ করেছি।

আলোচনার বিভিন্ন পর্যায়ে আসিফ নজরুল আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসনামলকে ‘মিথ্যা, দমন-পীড়ন ও গণবিরোধী ফ্যাসিস্ট কর্মকাণ্ডের’ যুগ হিসেবে বর্ণনা করেন। 

তিনি বলেন, ১৫ বছর ধরে তারা শুধু নির্যাতন আর মিথ্যাচারের রাজনীতি করেছে। এত বড় গণহত্যার পরও তাদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। বরং শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক অডিওগুলো শুনলেই বোঝা যায়, আজও তার নির্যাতনের বাসনা অটুট।

তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, এই গণহত্যার বিচার না করলে আল্লাহর কাছেও জবাবদিহি করতে পারবো না। এটি শুধু শহীদ পরিবারের প্রতি দায় নয়—আল্লাহর দিক থেকেও এটা দায়।

শহীদ পরিবারদের উদ্দেশে আইন উপদেষ্টা বলেন, আপনাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আমাদের অনেক প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতা ও অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে, কিন্তু চেষ্টার ঘাটতি নেই। আমরা এমনভাবে সাক্ষ্য-প্রমাণ রেখে যাব, যাতে ভবিষ্যতে কোনো সরকারই এই বিচার কার্যক্রম থেকে সরে আসতে না পারে।

তিনি আরও যোগ করেন, মানুষ প্রশ্ন করতেই পারে। সমালোচনা হজম করি, কারণ আমরা সরকারে আছি। কিন্তু টেলিভিশনে প্রতিদিন আপডেট দেওয়া হচ্ছে, প্রথম দিন থেকেই লাইভ রিপোর্ট যাচ্ছে। এরপর আর কীভাবে দৃশ্যমান করা সম্ভব? আমরা কি বিচারকের ঘুমানোর দৃশ্যও লাইভ দেখাবো?

আরও পড়ুন: ১১ দিনের বিশেষ সতর্কতার বিষয়ে আমি অবগত নই: আইজিপি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় জড়িত শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের একটি বড় অংশের বিচার ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে। 

তিনি উল্লেখ করেন, এটি কোনো মোবাইল কোর্ট নয়—এটা একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বিচার। তাই সময় লাগছে, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রক্রিয়া চলছে।

প্রসিকিউটর জানান, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৩ আগস্ট, যা এই বিচার প্রক্রিয়ার একটি বড় মাইলফলক।

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতারা কীভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার হলেও, অনেকেই শাস্তির বাইরে থেকে যাবে—এটা মেনে নেওয়া যায় না। 

তিনি বলেন, এই বিচার হতে হবে এমন স্বচ্ছতায়, যাতে কেউ ভবিষ্যতে একে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে।

তিনি আরও বলেন, শহীদ ইয়ামিন যখন শেষ নিঃশ্বাস নিচ্ছিল, তখন তাকে বাঁচানোর চেষ্টা হয়নি। বরং তাকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টাই করা হয়েছিল। এই মানসিকতা যে রাষ্ট্রে থাকে, সেখানে শুধু বিচার নয়, রাষ্ট্রীয় সংস্কারও জরুরি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শহীদ ইয়ামিনের বাবা মো. মহিউদ্দিন, শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান, 'আমার দেশ' পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, বিচার সংস্কার কমিশনের ছাত্র প্রতিনিধি আরমান হোসেন, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানে ‘ট্রায়াল অব জুলাই কার্নেজ’ শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এর আগে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন ও দোয়া-মোনাজাত করা হয়।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়