মোহাম্মদপুরে বেরোবি’র সাবেক ভিসি কলিমউল্লাহ গ্রেফতার

ফাইল ছবি
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) ভোরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান দুপুরে বিষয়টি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২৫ সালের ১৮ জুন দুদক বরাতে সাবেক ভিসি কলিমউল্লাহসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এবং দুর্নীতির অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছে দুদকের উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
দুদকের এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদিত ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল (ডিপিপি) উপেক্ষা করে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই ৩০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের চুক্তি সম্পাদন করেন। তারা প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন করেন এবং সরকারি নিয়মবিধি লঙ্ঘন করে ঠিকাদারের রানিং বিল থেকে কেটে রাখা নিরাপত্তা জামানত ব্যাংকে এফডিআর হিসেবে জমা করেন। পরে ওই এফডিআরকে লিয়েনে রেখে ঠিকাদারকে ঋণ দেয়ার জন্য 'নো অবজেকশন সার্টিফিকেট' প্রদান করা হয়। এভাবে তারা রাষ্ট্রের প্রায় ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: মোহাম্মদপুরে সেনা অভিযানে কিশোর গ্যাংয়ের ৪ সদস্য গ্রেফতার
এছাড়াও মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামিরা পিপিআর-২০০৮ অনুযায়ী দরপত্র মূল্যায়ন না করেই দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করেন এবং অগ্রিম অর্থ প্রদানের নিয়ম লঙ্ঘন করে ব্যাংক গ্যারান্টি গ্রহণপূর্বক ঠিকাদারকে অগ্রিম বিল প্রদান করেন। পরে প্রয়োজনীয় নথিপত্র উপেক্ষা করে খরচের অনুমোদন দেন তারা।
মামলায় অভিযুক্ত পাঁচজন হলেন,
- অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী (বেরোবির আরও এক সাবেক উপাচার্য),
- অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ (গ্রেফতার),
- মো. জাহাঙ্গীর আলম (বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী),
- মো. আবদুস সালাম বাচ্চু (ঠিকাদার),
- এম এম হাবিবুর রহমান (ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত)।
দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, এটি শুধু অর্থ আত্মসাতের বিষয় নয়, বরং সরকারিভাবে অনুমোদিত প্রক্রিয়া ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত।
অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে অতীতেও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল।
একাধিক সূত্রের বরাতে জানা গেছে, তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সময় তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে নির্বাচন কমিশনের বাইরে থেকে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছিলেন। নির্বাচনের বৈধতা প্রশ্নে বিভিন্ন সময়ে তার ভূমিকাও রাজনৈতিকভাবে সমালোচিত হয়েছে।
গ্রেফতারের খবরে শিক্ষাজগতে এবং বেরোবির বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই এটি ‘বহুদিন ধরে চলে আসা প্রশাসনিক দুর্নীতির বিচারপ্রক্রিয়ার একটি প্রারম্ভিক পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখছেন।
এ বিষয়ে বেরোবির বর্তমান প্রশাসন আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি না দিলেও, একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
গ্রেফতার হওয়া অধ্যাপক কলিমউল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হবে বলে ডিবি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে বলে ধারণা করছে দুদক।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তথ্যপ্রমাণ অত্যন্ত শক্তিশালী। আমরা আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি