ডা. নিতাই হত্যা: ৫ জনের ফাঁসি, ৪ জনের আমৃত্যু, ১ জনের যাবজ্জীবন
ছবি: সংগৃহীত
প্রায় ১৩ বছর আগে রাজধানীর বনানীতে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত (নিতাই) হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। এই লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড, চারজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মো. রেজাউল করিম রবিবার (১৭ আগস্ট) আসামিদের উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পর দণ্ডপ্রাপ্ত ১০ আসামিকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত পাঁচজন হলেন—ডা. নিতাইয়ের গাড়িচালক কামরুল হাসান অরুণ, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু ওরফে মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু, মো. হোসেন মিজি ও সাঈদ ব্যাপারী। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেকের ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডও হয়েছে।
এছাড়া আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রাপ্ত চার আসামি হলেন—সাইদুল, মাসুম ওরফে প্যাদা মাসুম, মো. আবুল কালাম ওরফে পিচ্চি কালাম ও ফয়সাল। আমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
একই রায়ে রফিকুল ইসলাম নামে আরেক আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দণ্ডের পাশাপাশি তাকেও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
২০১২ সালের ২৩ আগস্ট রাতে মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আবাসিক এলাকায় নিজ বাসভবনে খুন হন ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই। তিনি সে সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থক স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের একজন নেতা ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের রাতে দোতলা ওই বাড়িতে ডা. নিতাই তার বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে ছিলেন। তার স্ত্রী লাকী চৌধুরী তখন চট্টগ্রামে ছিলেন।
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক ও মাদক বহনে নিষেধাজ্ঞা
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ২২ আগস্ট রাত ১১টায় ডা. নিতাই তার মায়ের সঙ্গে নিজ বাড়িতে ঘুমাতে যান। সেদিন ভোর ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে তার মা মঞ্জু দত্ত দোতলায় শব্দ শুনতে পান। তিনি ওপরে গিয়ে দেখেন, তার ছেলে নিতাই রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছেন। মায়ের চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন এবং দ্রুত তাকে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মামলার তদন্তে জানা যায়, চুরির উদ্দেশ্যে আসামিরা বাড়িতে প্রবেশ করেছিল। এ সময় ডা. নিতাই তাদের দেখে ফেলায় তাকে হত্যা করা হয়। আসামিরা নগদ ৫ লাখ টাকা এবং দুটি স্বর্ণের বালা নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল।
ডা. নিতাইয়ের মৃত্যুর পর তার বাবা তড়িৎ কান্তি দত্ত বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ১০ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। চার্জশিটে বলা হয়, চুরির সময় ধরা পড়ে যাওয়ায় তারা ডা. নিতাইকে হত্যা করে। আসামিদের মধ্যে মিন্টু, রফিকুল, পিচ্চি কালাম, সাইদুল, প্যাদা মাসুদ এবং ফয়সাল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিল।
একই বছরের ২২ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মামলার বিচার চলাকালীন আদালত মোট ২৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এছাড়াও পাঁচ আসামি নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।
আজকের এই রায়ের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৩ বছর পর ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই হত্যাকাণ্ডের বিচারিক প্রক্রিয়ার সমাপ্তি হলো।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








