ইসরায়েলের বাধা পেরিয়ে গাজার পথে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’
ছবি: সংগৃহীত
যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের গাজার জন্য খাদ্য ও ওষুধ নিয়ে যাত্রা করা আন্তর্জাতিক ত্রাণবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র অন্তত ১৩টি নৌযান আটক করেছে ইসরায়েলের নৌবাহিনী। তবে ইসরায়েলের বাধা উপেক্ষা করে বহরের বাকি ৩০টি নৌযান এখনও গাজার উদ্দেশে যাত্রা অব্যাহত রেখেছে।
বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক বার্তায় ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, হামাস-সুমুদ ফ্লোটিলার বেশ কয়েকটি নৌযান থামিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সেসব নৌযানে থাকা যাত্রীদের নিরাপদভাবে ইসরায়েলের বন্দরে নিয়ে আসা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ বেশ কয়েকজন আন্তর্জাতিক অধিকারকর্মী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গ্রেটা থুনবার্গ এবং তার বন্ধুরা নিরাপদ ও শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন।
আটক ১৩টি নৌযানে ৩৭টি দেশের দুই শতাধিক যাত্রী ছিলেন। জানা গেছে, আটক নৌযানগুলোর মধ্যে ‘স্পেক্টার’, ‘অ্যালমা’ এবং ‘সাইরাস’ নামের তিনটি জাহাজ রয়েছে। যাত্রীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন এবং নিজেদের অপহরণের শিকার বলেও অভিযোগ করেছেন।
আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা ফাউন্ডেশন, গ্লোবাল মুভমেন্ট টু গাজা, মাগরেব সুমুদ ফ্লোটিলা এবং সুমুদ নুসানতারা—এই চার সংগঠনের ঐক্যমঞ্চ গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। খাদ্য ও ওষুধে পূর্ণ ৪৩টি নৌযানে ৪৪টি দেশের ৫০০ জন স্বেচ্ছাসেবী ছিলেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন পার্লামেন্ট সদস্য, আইনজীবী, চিকিৎসক, সাংবাদিক ও অধিকারকর্মীরা।
বুধবার সন্ধ্যার পর গাজার উপকূল থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থানকালে ইসরায়েলি যুদ্ধজাহাজ বহরটির চারপাশ ঘিরে ধরে ১৩টি নৌযান আটক করে। এরপর বৃহস্পতিবার ভোরে টেলিগ্রামে ফ্লোটিলার পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাকি ৩০টি নৌযান গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং তারা তখন উপকূল থেকে ৪৬ নটিক্যাল মাইল বা ৮৫.১৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল।
আরও পড়ুন: সুমুদ ফ্লোটিলা বহর থেকে গ্রেটা থানবার্গকে আটক
আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস এক্সে পোস্ট করা বার্তায় বলেন, আজ রাতে যা ঘটল— খুবই উদ্বেগজনক। এটি ছিল একটি শান্তিপূর্ণ মিশন, যার মূল লক্ষ্য ছিল গাজায় চলমান ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের শিকারদের পাশে দাঁড়ানো।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের এসব অবৈধ পদক্ষেপ আমাদের আটকে রাখতে পারবে না। আমরা আমাদের মিশন চালিয়ে যাব এবং গাজায় একটি মানবিক করিডর খুলব।
উল্লেখ্য, গত ১৮ বছর ধরে গাজার সমুদ্র উপকূল অবরোধ করে রেখেছে ইসরায়েল। গাজায় কোনো সমুদ্রবন্দর নেই এবং আন্তর্জাতিক কোনো জাহাজ সেখানে যেতে পারে না। ফ্লোটিলার বহর সেখানে পৌঁছালে তা হবে ১৮ বছরে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক নৌবহরের গাজা উপকূলে পৌঁছানো।
ইসরায়েল শুরু থেকেই দাবি করে আসছে, এই ত্রাণবহরের সঙ্গে ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের সম্পর্ক রয়েছে। তবে এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি তারা। এর আগেও গত জুন ও জুলাইয়ে গাজাগামী দুটি ত্রাণবাহী নৌযান আন্তর্জাতিক জলসীমায় আটক করে ইসরায়েল, যার একটিতে গ্রেটা থুনবার্গ ছিলেন। তখনও আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনার মুখে পড়েছিল ইসরায়েল।
বর্তমানে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার বহরে ৪০টির বেশি নৌযান রয়েছে, যেগুলো তিউনিসিয়া, ইতালির সিসিলি দ্বীপ এবং গ্রিসের সাইরাস দ্বীপ থেকে যুক্ত হয়েছে।
ফ্লোটিলার মুখপাত্র সাইফ আবুকেশেক ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে জানিয়েছেন, আটক ১৩টি নৌযানে ২০১ জনেরও বেশি যাত্রী ছিলেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে প্রায় দুই বছরে ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অবরোধের কারণে সেখানে তীব্র খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে, যা মোকাবিলায় এই ত্রাণবহরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স, আলজাজিরা
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








