News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৮:১৯, ২ অক্টোবর ২০২৫

সুমুদ ফ্লোটিলা বহর থেকে গ্রেটা থানবার্গকে আটক

সুমুদ ফ্লোটিলা বহর থেকে গ্রেটা থানবার্গকে আটক

ছবি: সংগৃহীত

গাজা অভিমুখে মানবিক সহায়তা নিয়ে যাত্রা করা আন্তর্জাতিক নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’কে আটক করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। 

বুধবার (১ অক্টোবর) রাতে গাজা উপকূল থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে এই অভিযান চালানো হয়। 

এ ঘটনায় সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনের মুখপাত্র গ্রেটা থুনবার্গসহ বহু অধিকারকর্মীকে আটক করা হয়েছে। ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক বিবৃতিতে জানায়, হামাস-সুমুদ ফ্লোটিলার বেশ কয়েকটি জাহাজ নিরাপদে থামানো হয়েছে এবং যাত্রীদের ইসরায়েলি বন্দরে স্থানান্তর করা হচ্ছে। গ্রেটা ও তার সহযাত্রীরা নিরাপদ ও সুস্থ আছেন। 

পরে মন্ত্রণালয় একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে গ্রেটা থুনবার্গকে ইসরায়েলি সেনাদের পাহারায় নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা যায়।

তবে ফ্লোটিলাকে হামাসের সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করলেও, ইসরায়েল এখন পর্যন্ত সেই অভিযোগের পক্ষে কোনো দৃশ্যমান প্রমাণ প্রকাশ করেনি।

আটক হওয়া ছয়টি জাহাজের নাম হলো—দেইর ইয়াসিন/মালি, হুগা, স্পেকটার, আদারা, আলমা এবং সিরিয়াস। 

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১৩ জানিয়েছে, আরও জাহাজ আটক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার আয়োজকরা অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েলি নৌবাহিনী তাদের নৌবহরের ওপর ‘সক্রিয় আগ্রাসন’ চালিয়েছে। ফ্লোরিডার একটি জাহাজকে ইচ্ছাকৃতভাবে সমুদ্রে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে এবং ইউলারা, মেটেকসহ আরও কয়েকটি জাহাজকে জলকামান দিয়ে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

এই আন্তর্জাতিক নৌবহরে রয়েছে ৪০টির বেশি ছোট-বড় বেসামরিক জাহাজ এবং প্রায় ৫০০ অধিকারকর্মী। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়ামসহ ৪৪টি দেশের প্রতিনিধিরা, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচিত সদস্য, আইনজীবী, চিকিৎসক, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।

ফ্লোটিলার স্টিয়ারিং কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের মিশনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল গাজায় খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া। তারা কোনো সামরিক বা রাজনৈতিক কার্যকলাপে যুক্ত নন। আন্তর্জাতিক জলসীমায় ত্রাণবাহী জাহাজে ইসরায়েলের হস্তক্ষেপকে তারা ‘জলদস্যুতা’ এবং ‘অবৈধ’ বলে অভিহিত করেছেন।

ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। 
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টাকে অবরোধ করা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন। 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, গাজায় চলমান মানবিক সংকটের সময় ত্রাণবাহী জাহাজ আটকে দেওয়া অমানবিক ও অগ্রহণযোগ্য।

আরও পড়ুন: ‘নরকের শাস্তি পাবে’ হামাস: ট্রাম্প

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ফ্রান্সেস্কা আলবানিজে এবং কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো ফ্লোটিলাকে বাধাহীনভাবে যেতে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে ইসরায়েলের হামলা ও কর্মীদের আটক করার ঘটনায় কলম্বিয়া কূটনৈতিকভাবে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট পেত্রো এক্সে দেওয়া পোস্টে জানান, তিনি ইসরায়েলের সব কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছেন এবং কলম্বিয়া-ইসরায়েল মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করেছেন। তিনি এই ঘটনাকে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে সংঘটিত “নতুন আন্তর্জাতিক অপরাধ” বলে আখ্যায়িত করেন। 

পেত্রো আরও জানান, কলম্বিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং তিনি আন্তর্জাতিক আইনজীবীদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

আইরিশ রাজনৈতিক দল সিন ফেন দাবি করেছে, তাদের সিনেটর ক্রিস অ্যান্ড্রুসকে ‘অবৈধভাবে’ আটক করেছে ইসরায়েল। দলটি অ্যান্ড্রুসসহ ফ্লোটিলায় থাকা সব আইরিশ নাগরিককে মুক্ত করতে আয়ারল্যান্ড সরকারের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।

জলবায়ু আন্দোলনের তরুণ মুখ গ্রেটা থুনবার্গ দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিন ইস্যুতে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে আসছেন। গাজায় যুদ্ধ ও অবরোধের বিরুদ্ধে তিনি বারবার বক্তব্য দিয়েছেন এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ফ্লোটিলায় তার অংশগ্রহণকে অনেকে প্রতীকী ও শক্তিশালী বার্তা হিসেবে দেখেছেন। এবার তাকে আটক করায় ইসরায়েল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়েছে।

ফিলিস্তিনিদের পরিচালিত আইনি সংগঠন আদালাহ-এর পরিচালক হাসান জাবারিন বলেছেন, আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইসরায়েলের এ অভিযানের মাধ্যমে ফ্লোটিলা থামানো “গ্রেফতার নয়, বরং অপহরণ। 

তিনি জানান, ফ্লোটিলায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের আশদোদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁদের হয় দেশ থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে, নইলে আদালতে হাজির করা হতে পারে।

এটি প্রথমবার নয়, এর আগেও ইসরায়েল গাজাগামী ফ্লোটিলা আটক করেছিল। ২০১০ সালে ‘মাভি মারমারা’ নামের তুর্কি জাহাজে অভিযান চালিয়ে নয়জন কর্মীকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী। সেই ঘটনার পর থেকেই ফ্লোটিলা আন্দোলন আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এবার গ্রেটা থুনবার্গকে আটক করার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল আবারও কূটনৈতিক চাপের মুখে পড়বে। কারণ, তিনি কেবল একজন জলবায়ু আন্দোলনকারী নন, বরং পশ্চিমা দেশগুলোর তরুণ প্রজন্মের কাছে নৈতিকতার প্রতীক হয়ে উঠেছেন।

সূত্র: আল-জাজিরা, চ্যানেল ১৩, এক্স (সাবেক টুইটার)

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়