News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৮:৪৮, ২২ আগস্ট ২০২৫

গাজায় দুর্ভিক্ষের ঘোষণা জাতিসংঘের

গাজায় দুর্ভিক্ষের ঘোষণা জাতিসংঘের

ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে বলে ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ সমর্থিত সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (IPC)। এই সংস্থাটি বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে থাকে। এটিই প্রথমবার যে আফ্রিকা মহাদেশের বাইরে কোনো অঞ্চলে দুর্ভিক্ষের ঘোষণা দেওয়া হলো।

আইপিসি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজার অন্তত একটি এলাকায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে এবং আগামী এক মাসের মধ্যে তা পুরো উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে গাজার প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ, অর্থাৎ প্রায় ৫ লাখ ১৪ হাজার মানুষ, চরম খাদ্য সংকটের মুখে। এদের মধ্যে ২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ গাজা গভর্নরেট (গাজা শহর ও তার আশপাশের এলাকা) অঞ্চলে বসবাস করেন, যেখানে পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ।

প্রতিদিন গাজার মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজন ৫০০–৬০০ ট্রাক খাদ্য সহায়তা, কিন্তু বাস্তবে জুলাই মাসে ইসরায়েলের সামরিক স্থগিতকালের মধ্যে মাত্র ১০০–২০০ ট্রাকই পৌঁছেছে। নিরাপত্তা ঝুঁকি ও লুটপাটসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সহায়তা বিতরণকে সীমিত করেছে।

এই পরিস্থিতিতে অপুষ্টি, অনাহার এবং দুর্ভিক্ষজনিত মৃত্যু উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। 

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, আগস্ট মাসের প্রথম ২০ দিনে ১৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ২৫ জন শিশু। জরুরি ভিত্তিতে বড় আকারের পদক্ষেপ না নিলে এই দুর্ভিক্ষজনিত মৃত্যু আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে আইপিসি।

এই প্রতিবেদনকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও পক্ষপাতদুষ্ট বলে প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। 

তাদের দাবি, গাজায় কোনো দুর্ভিক্ষ নেই এবং এই প্রতিবেদন হামাসের সরবরাহ করা ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।

অন্যদিকে, জাতিসংঘ এই সংকটকে একটি সম্পূর্ণ মানবসৃষ্ট দুর্যোগ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। 

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার বলেছেন, এই দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধযোগ্য ছিল। 

তিনি অভিযোগ করেন যে, ইসরায়েলের কৌশলগত বাধার কারণেই গাজায় পর্যাপ্ত খাবার পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক আরও কঠোর ভাষায় বলেছেন, যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ক্ষুধা ব্যবহার করা আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে একটি যুদ্ধাপরাধ। 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গাজার পরিস্থিতিকে “মহাকাব্যিক মানবিক বিপর্যয়” হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, গাজার জীবন্ত নরককে বর্ণনা করার মতো যখন আর কোনো শব্দ ছিল না, তখন নতুন একটি শব্দ যুক্ত হলো - দুর্ভিক্ষ। 

তিনি ইসরায়েলের প্রতি আন্তর্জাতিক আইন মেনে খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত ৭০

ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ গাজার মানবিক সংকটকে অকল্পনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছে। বিশ্বনেতারা ইসরায়েলের অনুমোদিত বসতি সম্প্রসারণ প্রকল্পেরও নিন্দা জানিয়েছেন, যা দখলকৃত পশ্চিম তীরে রামাল্লা ও বেথলেহেমের মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করবে।

এদিকে, গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আল জাজিরার সূত্র মতে, সম্প্রতি ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৫ জনই গাজা শহরের। হামাস অভিযোগ করেছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে উপেক্ষা করে গাজায় সামরিক দখলদারিত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে, ইসরায়েল গাজা শহরে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এতে ইতোমধ্যে বাস্তুচ্যুত ১০ লাখেরও বেশি মানুষ আবারও নতুন করে বাস্তুচ্যুতির ঝুঁকিতে পড়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই সংঘাত এখন পর্যন্ত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। 
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত গাজায় কমপক্ষে ৬২,১৯২ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,৫৭,১১৪ জন আহত হয়েছেন। 

অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১,১৩৯ জন নিহত এবং ২০০ জনের বেশি জিম্মি হয়েছিলেন।

এই মানবিক বিপর্যয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বনেতাদের উচিত এই সংকটের সমাধানে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়