মোদির নীতি আঞ্চলিক উত্তেজনার কারণ: খাজা আসিফ
ফাইল ছবি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে সম্প্রতি বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ এনেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ।
তিনি দাবি করেছেন যে মোদির নীতি ভারতের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই দেশকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
তার এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে দেশ এবং বিদেশের গণমাধ্যমগুলোতে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।
খাজা আসিফের মূল অভিযোগগুলো হলো:
- অভ্যন্তরীণ ক্ষতি: মোদির নীতির কারণে ভারতের বিরোধী দলগুলো রাজনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে এবং সরকারের বিরুদ্ধে ভেতর থেকেই সমালোচনার সুর জোরালো হচ্ছে।
- পাকিস্তান-বিরোধী মনোভাব: মোদি নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে পাকিস্তান-বিরোধী বক্তব্যকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।
- আঞ্চলিক উত্তেজনা: মোদির আক্রমণাত্মক নীতির কারণে পুরো অঞ্চল জুড়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- ভোটব্যাংক রাজনীতি: মোদি আঞ্চলিক শান্তির চেয়ে নিজের ভোটব্যাংককে খুশি রাখতে বেশি আগ্রহী।
নাশকতামূলক কার্যকলাপ: বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এবং তেহরিকে-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর মতো নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো ভারতের হয়ে প্রক্সি হিসেবে কাজ করছে।
খাজা আসিফের এই মন্তব্যগুলো এমন এক সময়ে এসেছে যখন পাকিস্তান একাধিক অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো স্থিতিশীল নয় এবং অর্থনৈতিক সংকট তীব্র।
এই অবস্থায়, পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ভারত-বিরোধী মন্তব্য প্রায়শই অভ্যন্তরীণ সমর্থন আদায়ের একটি উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের মন্তব্য প্রায়শই অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ থেকে মনোযোগ সরানোর একটি কৌশল হতে পারে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে নিহত ২৭
এই মন্তব্যগুলোকে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের বর্তমান টানাপোড়েনের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলো।
তারা ইঙ্গিত দিয়েছে যে, ভারতের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের আগে এই ধরনের মন্তব্য দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে। ভারতের পক্ষ থেকে অবশ্য এই মন্তব্যগুলো নিয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
খাজা আসিফ তার সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের পারমাণবিক নীতি নিয়েও স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন।
তিনি বলেন, পাকিস্তান পারমাণবিক ক্ষমতা নিয়ে ব্ল্যাকমেইল বা হুমকির নীতিতে বিশ্বাস করে না। তাদের পারমাণবিক সক্ষমতা শুধুমাত্র আত্মরক্ষার জন্য, যা অন্য কোনো দেশের উদ্বেগের কারণ হওয়া উচিত নয়। এই মন্তব্যটি এমন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ যখন আন্তর্জাতিক মহলে ভারত এবং পাকিস্তান উভয়ের পারমাণবিক অস্ত্রাগার নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
খাজা আসিফের এই বক্তব্য পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের পারমাণবিক নীতিকেই পুনর্ব্যক্ত করে। তবে, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এই ধরনের মন্তব্য করা হলেও বাস্তবে পারমাণবিক উত্তেজনা হ্রাস করার জন্য দুই দেশের মধ্যে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
খাজা আসিফ ভারতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হওয়ার জন্য মোদির নেতৃত্বকে দায়ী করেছেন।
তিনি দাবি করেছেন, ভারতের নাগরিকরাও মোদির আক্রমণাত্মক নীতির কারণে অঞ্চলে উত্তেজনা সৃষ্টির বিষয়টি স্বীকার করছেন। এই দাবির পক্ষে তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দেননি।
ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ভিন্ন ভিন্ন রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেখানে ভারতের বিরোধী দলগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে মোদি সরকারের সমালোচনা করছে, তবে খাজা আসিফের দাবি অনুযায়ী এটি সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সমালোচনার রূপ নিয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্বব্যাংক ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে ইতিবাচক পূর্বাভাস দিলেও, মূল্যবৃদ্ধি এবং বেকারত্বের মতো কিছু চ্যালেঞ্জ এখনো বিদ্যমান।
খাজা আসিফ তার বক্তব্যের শেষে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছেন।
তিনি বলেন, শান্তি তখনই সম্ভব যখন প্রতিবেশী দেশগুলো দায়িত্বশীল আচরণ করবে।
তার মতে, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সদ্ভাবপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে উপমহাদেশের মানুষ অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধি লাভ করতে পারে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








