বিশ্বের প্রথম এইডস টিকা তৈরির দাবি রাশিয়ার

ছবি: সংগৃহীত
একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। তারা অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোম (এইডস)-এর জন্য একটি কার্যকর টিকা তৈরি করছে। যদি এই প্রকল্প সফল হয়, তবে এটি হবে বিশ্বে প্রথম এইডস প্রতিরোধী টিকা।
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম রাশিয়া টুডে (আরটি) এবং রিয়া নভোস্তি’র বরাত দিয়ে এই তথ্য জানা গেছে।
রাশিয়ার চিকিৎসা ও অণুজীববিজ্ঞান গবেষণা বিষয়ক সরকারি প্রতিষ্ঠান গামালিয়া ন্যাশনাল সেন্টার এই টিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে। এই প্রতিষ্ঠানটি কোভিড-১৯ এর স্পুটনিক ভি টিকা আবিষ্কারের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত।
তাদের দাবি, সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী দুই বছরের মধ্যে বা তারও কম সময়ে এই টিকা বাজারে আনা সম্ভব হবে।
গামালিয়া সেন্টারের মহামারিবিদ্যা বিভাগের প্রধান ভ্লাদিমির গুশচিন রিয়া নভোস্তিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, এই টিকা তৈরিতে সর্বাধুনিক এমআরএনএ (mRNA) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। প্রচলিত টিকার মতো মৃত বা দুর্বল জীবাণু ব্যবহার না করে, এই পদ্ধতিতে এক ধরনের প্রোটিন ব্যবহার করা হয়, যা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বহুগুণ শক্তিশালী করতে সক্ষম।
গুশচিন আরও বলেন, এই টিকার মূল উপাদান হবে এমন একপ্রকার প্রতিষেধক তরল বা অ্যান্টিজেন, যা মানবদেহে বিস্তৃতভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করবে। আমরা বর্তমানে এই প্রতিষেধক তরল তৈরির কাজ শুরু করেছি।
এইডস হলো হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (এইচআইভি) দ্বারা সৃষ্ট একটি অবস্থা। এইচআইভি ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ভাইরাস টি-কোষ (T-cell) ধ্বংস করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়, যার ফলে একজন ব্যক্তি বিভিন্ন সংক্রমণ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকিতে পড়ে। এইডস নিজে কোনো রোগ নয়, এটি মূলত এইচআইভি সংক্রমণের চূড়ান্ত পর্যায়।
আরও পড়ুন: মেরিল্যান্ডে মাংসখেকো পরজীবী মাছি শনাক্ত
- সংক্রমণের মাধ্যম: এইচআইভি সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, বীর্য, যোনিপথের তরল এবং বুকের দুধের মাধ্যমে ছড়ায়। অরক্ষিত যৌন সম্পর্ক, সংক্রামিত সূঁচ বা সিরিঞ্জ ব্যবহার এবং মায়ের থেকে সন্তানের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে।
- বর্তমান পরিস্থিতি: বর্তমানে এইডসের কোনো নিরাময় নেই। তবে, চিকিৎসার অগ্রগতি এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে। অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (ART) ব্যবহার করে ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা যায়, যা এইডস প্রতিরোধে এবং আক্রান্তদের জীবন দীর্ঘায়িত করতে সহায়তা করে।
ইতিহাসে এইডসের টিকা তৈরির জন্য একাধিকবার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনোটিই সফল হয়নি। এইচআইভি ভাইরাসের দ্রুত রূপ পরিবর্তন এবং মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দেওয়ার সক্ষমতার কারণে একটি কার্যকর টিকা তৈরি করা অত্যন্ত কঠিন।
২০১০ সালের পর থেকে বিশ্বজুড়ে এইডসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কমছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বে প্রায় ১৩ লাখ মানুষ এইডসে আক্রান্ত ছিলেন, যা ২০১০ সালের তুলনায় ৪০ শতাংশ কম। তা সত্ত্বেও, সাহারা এবং নিম্ন আফ্রিকার মতো অঞ্চলগুলোতে এখনো এই রোগের প্রকোপ অনেক বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালে এইডসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে প্রায় ১০ লাখ মানুষ মারা যান।
যদি রাশিয়ার গামালিয়া সেন্টারের এই প্রচেষ্টা সফল হয়, তবে এটি মানবজাতির জন্য এক বিরাট বৈজ্ঞানিক বিজয় হবে। তবে, এই গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং এর চূড়ান্ত ফলাফল জানার জন্য বিশ্বকে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি