ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মাজার ভাঙচুর, ২২০০ মামলা

ছবি: সংগৃহীত
কুমিল্লার হোমনা উপজেলায় ইসলাম ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগকে কেন্দ্র করে মাইকে ঘোষণা দিয়ে চারটি মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২ হাজার ২০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকলেও পরিস্থিতি থমথমে বলে জানা গেছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার আসাদপুর এলাকার মহসিন নামের এক যুবক তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি “বেমজা মহসিন” থেকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেন বলে অভিযোগ ওঠে। খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়।
স্থানীয়রা থানার সামনে জড়ো হয়ে মহসিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। দুপুরে পুলিশ উপজেলার আছাদপুর গ্রামের ফকিরবাড়ি থেকে মহসিনকে আটক করে। একই দিন রাতে বাংলাদেশ ইসলামী যুবসেনা হোমনা উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল ইসলাম বাদী হয়ে হোমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
পরদিন বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে মহসিনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতারের পরও বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার দিকে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা মাইকে ঘোষণা দিয়ে শত শত লোক জড়ো করে আসাদপুর গ্রামের চারটি মাজারে একযোগে হামলা চালায়।
আক্রান্ত মাজারগুলো হলো কফিল উদ্দিন শাহ মাজার, হাওয়ালি শাহ মাজার, কালাই শাহ মাজার, আবদু শাহ মাজার।
হামলার সময় এসব মাজারে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয় এবং কফিল উদ্দিন শাহ ও হাওয়ালি শাহ মাজারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের কয়েকটি বাড়িঘরেও।
স্থানীয় সূত্র জানায়, হামলাকারীরা ওই সময় কোনো বাধা ছাড়াই এলাকায় দাপট দেখায়।
আরও পড়ুন: মহানবীকে নিয়ে কটূক্তি, মাইকে ঘোষণা দিয়ে ৪ মাজারে হামলা-আগুন
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে হোমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তাপস কুমার সরকার বাদী হয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেন। এতে অজ্ঞাতনামা ২ হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বলেন, রাসুল (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে অভিযুক্ত যুবক মহসিনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু একদল উশৃঙ্খল মানুষ তারপরও মাইকে ঘোষণা দিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। শনাক্ত করে জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে আসাদপুর গ্রাম ও আশপাশের কয়েকটি গ্রাম প্রায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। গ্রামের ভেতরে পুড়ে যাওয়া মাজার ও ঘরের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
মহসিনের মা মিনুয়ারা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ছেলেকে তো পুলিশের হাতে তুলে দিলাম। এরপরও আমাদের মাজার ও বাড়ি-ঘরে কেন আগুন দেওয়া হলো? পুলিশ কোনো নিরাপত্তা দিতে পারলো না কেন? এক কাপড়ে ঘর থেকে বের হই। টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। জীবনটা কোনো মতে বাঁচিয়েছি।
ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, বর্তমানে আসাদপুর গ্রামসহ আশপাশের এলাকায় পুলিশ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর টহলও অব্যাহত আছে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে মাজার ও কয়েকটি ঘর পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি