News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:০৮, ১৫ মে ২০২৫
আপডেট: ১২:১৮, ১৫ মে ২০২৫

অনড় অবস্থানে জবি শিক্ষার্থীরা

অনড় অবস্থানে জবি শিক্ষার্থীরা

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর কাকরাইল মোড় এখন শুধুই একটি সড়কজ্যাম নয়, বরং তা রূপ নিয়েছে শিক্ষার্থীদের এক অনড় অবস্থানের প্রতীক হিসেবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা টানা দ্বিতীয় দিনের মতো রাজপথে অবস্থান করে তাদের তিন দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। 

তারা বলছেন, এইবার আর আশ্বাসে নয়, বাস্তবায়ন না হলে ফিরছি না ক্যাম্পাসে।

আবাসন সংকট, বাজেট সংকোচন এবং দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্পের বিলম্ব—এই তিনটি বিষয়ের ওপর দীর্ঘদিনের চাপই আজকের এই আন্দোলনের মূল ভিত্তি। বারবার প্রতিশ্রুতি পেয়েও ফল না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ জমে ছিল অনেক আগে থেকেই।

বিগত বছরগুলোর মতোই ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে জবির জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ‘তুলনামূলকভাবে কম’ এবং ‘অগ্রাধিকারের বাইরে’ রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। তাদের মতে, রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী মেসে কিংবা দুর্বল আবাসন ব্যবস্থায় জীবন যাপন করছে, অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আবাসিক সুবিধা প্রায় নেই বললেই চলে।

তাদের তিন দফা দাবি হলো:

  • আবাসন বৃত্তি: ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি কার্যকর করা।
  • পূর্ণ বাজেট অনুমোদন: প্রস্তাবিত বাজেট কাটছাঁট না করে পূর্ণাঙ্গভাবে অনুমোদন করা।
  • দ্বিতীয় ক্যাম্পাস: জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্প পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

কাকরাইল মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, শত শত শিক্ষার্থী সড়কে বসে, কেউ ব্যানার মাথার নিচে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন, কেউ মোবাইলের আলোতে প্ল্যাকার্ড লিখছেন, আবার কেউ ক্ষোভের স্লোগানে অন্যদের উদ্দীপ্ত করছেন। 

আরও পড়ুন: উপদেষ্টা মাহফুজের ওপর বোতল নিক্ষেপ, প্রতিক্রিয়া ও প্রশ্ন

তারা বলছেন, আমরা ভিক্ষা চাই না, আমাদের অধিকার চাই।

এই আন্দোলনকে আর পাঁচটা বিক্ষোভ থেকে আলাদা করেছে তাদের ধৈর্য ও সংগঠিত রূপ। কোনো রাজনৈতিক দলের ছায়া নেই, নেই কোনো নেতার আধিপত্যও। স্লোগানগুলো সরাসরি, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় পূর্ণ এবং দাবিগুলো সুস্পষ্ট।

বুধবার (১৪ মে) সকাল ১১টায় ক্যাম্পাস থেকে ‘লং মার্চ টু যমুনা’ নামে যাত্রা শুরু করে কয়েকশত শিক্ষার্থী। পথে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে থাকেন তারা। কাকরাইলে পৌঁছালে উত্তেজনা চূড়ায় পৌঁছায়। পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিচার্জের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পাল্টা প্রতিরোধে শিক্ষার্থীরাও ইটপাটকেল ছোড়ে। এই ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিক মিলিয়ে আহত হন অন্তত ৩৮ জন।

আন্দোলনকারীরা জানান, সোমবার ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের সূচনা হয়। পরে শিক্ষক সমিতি ও ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা ইউজিসির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিলেও সেখান থেকেও মেলে শুধু ‘পুরনো ঘরানার আশ্বাস’।

একজন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী বলেন, দাবিগুলো কেবল জবির নয়, দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শহরভিত্তিক শিক্ষার্থীদের জীবনমানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আজ আমরা, কাল হয়তো অন্যরা।

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জানান, শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে দ্রুত প্রধান উপদেষ্টা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যে আলোচনা হবে। যৌক্তিক দাবি নিয়ে সরকার কথা বলবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। তবে শিক্ষার্থীরা এই আশ্বাসকে ‘সাবধানতার সঙ্গে’ দেখছেন।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়