News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ৫ আগস্ট ২০১৫
আপডেট: ০৬:৪১, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

খুলনায় বাঁধে ভাঙন, ৫ উপজেলা প্লাবিত

খুলনায় বাঁধে ভাঙন, ৫ উপজেলা প্লাবিত

খুলনা: খুলনার ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, দাকোপ, পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার কমপক্ষে ৫০টি গ্রাম এখন পানির নিচে। এসব উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধের অনেক জায়গায়ই ইতিমধ্যে ভেঙে গেছে। জোয়ারের চাপে এসব ভাঙন বাড়ছে। স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। তবে তা কোনো কাজে আসছে না। সবচেয়ে বেশি খারাপ ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটার ১৭টি গ্রামে। এখানকার ভাঙন ঠেকানোর কোনো অনুকূল পরিবেশ এখন নেই। উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের আশঙ্কা, এ এলাকার পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে।

মঙ্গলবার দুপুরে ডুমুরিয়ার শরাফপুর ইউনিয়নের জালিয়াখালিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি হু হু করে গ্রামে প্রবেশ করছে। বেড়িবাঁধের যে অংশ দিয়ে মানুষ চলাচল করছিল, আধা ঘণ্টার মধ্যেই তা প্রায় কোমর পানিতে তলিয়ে যায়। এখানকার চাঁদগড়, জালিয়াখালী, বকুলতলা, বারোয়াড়িয়া, সুরখালী, কোদলা, শম্ভুনগরসহ ১৩টি গ্রাম পানিতে পুরোপুরি নিমজ্জিত। ভদ্রা নদীর এ অংশে ১৬ কিলোমিটার বাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

প্রতিদিনই চাঁদগড় এলাকার বেড়িবাঁধের ভাঙনের পরিধি বাড়ছে। নদীর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ক্ষেতের ফসল, বিলের আমন বীজতলা, মাছের খামার যেমন প্লাবিত হচ্ছে তেমনি জলমগ্ন হচ্ছে বসতবাড়ির আঙ্গিনা। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থায়ও বির্পযয় নেমে এসেছে। মানুষের খাবার সঙ্কটের পাশাপাশি পশুখাদ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ডুমুরিয়া এলাকায় জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি উন্নয়ন সংগঠন দুর্গত মানুষের মাঝে শুকনা খাবার, রান্না করা খাবার, চাল, ডাল বিতরণ করলেও বটিয়াঘাটার পাঁচটি গ্রামের মানুষের মাঝে উল্লেখযোগ্য সহায়তা পৌঁছেনি।

এলাকাবাসী জানায়, গত ৪৫ বছরে এখানে ১৮ বার বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি মসজিদ, দুটি ঈদগাহ, একটি মাদ্রাসা, পাঁচটি স্লইস গেটসহ হাজার হাজার কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি ও অসংখ্য গাছপালা। এসময় কমপক্ষে পাঁচ হাজার পরিবার ভূমিহীন হয়েছে। এলাকা ছেড়েছে দেড় হাজারের মতো পরিবার। এবারের ভাঙনে উপজেলার ডুমুরিয়া সদর, শরাফপুর, ভাণ্ডারপাড়া ও সাহস- এ চার ইউনিয়ন পুরোপুরি তলিয়ে যেতে পারে।

শরাফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ রবিউল ইসলাম বলেন, ভদ্রা নদীর প্রবল স্র্রোতে এলাকার প্রায় আড়াইশ ফুট বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে শতাধিক পরিবার আশ্রয়হীন হয়েছে। ডুমুরিয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শেখ আব্দুল কাদের জানান, এখানকার ভাঙনে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নেরই কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে আকড়া, বাহির আকড়া, চাঁদগড়, জালিয়াখালী, সুন্দর মহল, কোদলা, শম্ভুনগর, রুতমারী, শরাফপুর, গুটুদিয়া, খর্ণিয়া, আটলিয়া ও বারোআড়িয়া গ্রাম। এ গ্রামগুলোর কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়ায় পল্লীবিদ্যুতের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামছু-দ্দৌজা জানান, ভাঙন কবলিতদের সহায়তায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ টাকা, আশ্রয়হীন পরিবারের সদস্যদের খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
কপোতাক্ষের বাঁধ ভেঙে পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী ইউনিয়নের কাঠিপাড়া, রাড়ুলী ও বগা গ্রামের ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে কয়েক হাজার বিঘার মাছের ঘের। আগে থেকেই উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের ২০ গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন অনেকেই। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে শতশত ঘরবাড়ি। গড়–ইখালী ইউনিয়নের আট কিলোমিটারের বেশী রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নে পাউবোর ১৪/১ নম্বর পোল্ডারের বাঁধ ভেঙে শাকবাড়িয়া ও গাববুনিয়া নদী তীরবর্তী দুটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪০টি চিংড়ি ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সোমবার ভোরে ভাটার সময় বাঁধের ওই অংশের ২০০ মিটার ধসে যায়। দুপুরে সেখান দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে।

গ্রামবাসীরা জানায়, কয়েক দিনের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পায়। এতে বাঁধের দুর্বল অংশ ভেঙে নদীর পানি প্রবেশ করে। বাঁধের যে অংশ ভেঙে গেছে সেখানে একটি চিংড়ি ঘেরে নোনা পানি প্রবেশ করানোর জন্যে পাইপ বসান ছিল।

উত্তর বেদকাশি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার মতিয়ার রহমান বলেন, “বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় দুই গ্রামের ৪০টি পরিবারের বাড়িঘরসহ প্রায় ২০০ একর জমির চিংড়ি ঘের পানিতে ভেসে গেছে।

এ ব্যাপারে পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মতিন জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নদীতে পানির স্রোত কম হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ এনামুল কবির বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া এবং তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য কাজ করা হচ্ছে।

দাকোপ উপজেলার বাণীশান্তা ইউনিয়নের বাণীশান্তা বাজার ও ঢাংমারী খ্রিস্টিয়ান পাড়া পানিতে তলিয়ে গেছে। বাণীশান্তা বাজার সংলগ্ন মসজিদের সামনের বেড়িবাঁধটি নদীগর্ভে বিলীন হতে হাত দুয়েক বাকি আছে। ভেঙে গেলে গোটা এলাকা তলিয়ে যাবে।

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেকেই পাউবোর বাঁধ তথা রাস্তার উপর ঠাঁই নিয়েছে।

পাউবো খুলনা-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মুজিবর রহমান বলেন, “পানি নামলেই ভাঙন রোধের কাজ শুরু করা হবে।”

খুলনা জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের জরিপ কর্মকর্তা বিধান কুমার মণ্ডল জানান, খুলনায় প্লাবিত এলাকায় চার হাজার ৬৫০টি মাছের পুকুর ও দিঘি, ১০ হাজার ১১৫টি চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে। এতে সাদা মাছের ক্ষতি হয়েছে ২০১ দশমিক ৯৮ মেট্রিক টন; যার আনুমানিক মূল্য ৫৬১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। চিংড়ির ক্ষতি হয়েছে ১৭৫ দশমিক ৯১ মেট্রিক টন, যার আনুমানিক মূল্য ৪১৫৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এছাড়া এককোটিরও বেশি বিভিন্ন জাতের পোনার ক্ষতি হয়েছে। যার টাকার পরিমাণ এককোটি আট লাখ টাকা।

খুলনা জেলা প্রশাসক মো. মোস্তফা কামাল বলেন, “জেলার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সেখানকার দুর্গত মানুষদের মাঝে নগদ অর্থ ও চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মানুষ খাদ্যের কষ্ট পাবে না। স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন।”

নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়