News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৮:৪৫, ২৭ আগস্ট ২০১৫
আপডেট: ১৯:০৭, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বাঙালের ভারত দর্শন

পাহাড়ের ডাকে মেঘের কোলে

পাহাড়ের ডাকে মেঘের কোলে

 

অফিসিয়াল বাধ্যতামূলক ভ্রমণ, চেন্নাই থেকে আমরা যাব উটিতে। সে এক বিশাল আনন্দের আয়োজন। উটি সম্পর্কে নানাজনের কাছ থেকে আবছা আবছা জেনে উটির প্রতি একটা ভালবাসা তৈরি হয়েই ছিল। এছাড়া চেন্নাইতে আসার পর থেকে এত বেশি দূরত্বে আর কোনো ভ্রমণ তখনো আমাদের হয়নি। সুযোগও ছিল না। 

একদিকে ভাললাগা অন্যদিকে একটা আতংকও আমার ছিল। সেটা হলো, দীর্ঘ সময় বসে থাকলে আমার পায়ে পানি চলে আসে, পা ফুঁলে ওঠে, কখনো কখনো ব্যথাও পাই। তাই প্রায় ৫৩০ কি.মি ভ্রমণের বিষয়টি আতংকই হয়ে ওঠে। যেতে যেহেতু হবে, তাই আনন্দটা মাটি করার কোনো মানে নেই। কেবল পায়ের কথা ভেবে।

চেন্নাইয়ের আমাদের ক্যাম্পাস থেকেই আমরা রওনা হলাম রাতে। বাস হাইওয়েতে ওঠার আগেই বাংলাদেশের মতো জ্যামের  অভিজ্ঞতা হলো। অনেক উন্নতমানের বাস চোখে পড়ছিল পথে পথে, যা চেন্নাইতে আমি দেখিনি। মূলত মার্সিডিজ এ বাসগুলো ট্যুরিস্টদের জন্যই ব্যবহৃত হয়। কয়েকটি ট্যুরিস্ট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এ বাসগুলো পরিচালনা করে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পারবীন, ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া। পারবীনের অনেকগুলো উন্নতমানের বাস আমাদের সাথে সাথেই উটির দিকে যাত্রা করে চেন্নাই থেকে। আমাদের যাত্রাপথটি ছিল, চেন্নাই-মহাবলিপুরাম-ভিল্লুপুরাম-সালেম-ইরোড-তিরুপ্পুর-কইয়ামবাটোর।

পায়ের ব্যথার কারণে কারণে কামরুল ভাইয়ের সৌজন্যে ভালো একটা আসন পেয়েও সেখানে বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারলাম না। ইঞ্জিনকভার সংলগ্ন ডোর সিঁড়িতে বসেই সারাপথ গেছি। সেখানে বসার একটা সুবিধা হলো, সামনের সব কিছুই দেখা যায়। কিছুক্ষণ পরপর হাইওয়েতে টোল আদায় হচ্ছিল। আমার কাছে মনে হচ্ছিল তামিলনাড়ু সরকার প্রতি কিলোমিটারে টোল নিচ্ছে। একটু পরপর টোলপ্লাজা। বাস থামছে। ড্রাইভার টোল দিচ্ছে। স্লিপ নিচ্ছে, তারপর স্লিপটি যত্ন করে তার ব্যাগে রাখছে। কিন্তু ড্রাইভার একটুও বিরক্ত হচ্ছে না। কিংবা কেউ কাউকে পেছনে ফেলে আগের বাড়ানোর সুযোগ নিচ্ছে না। আমি ড্রাইভারকে কয়েকবার সামনের একটি গাড়িকে ক্রস করে পেছনে ফেলতে বললেও সে তা করেনি। উপরন্ত আমাকে বললো, তাতে আরো আইনভাঙার সম্ভাবনা থাকবে। আইনভাঙা কারো উচিত নয়। 

আমি চুপ হয়ে যাই। সারারাত চলছে বাস। ভোরের একটু পর আমাদের নামাজিদের ডাকাডাকিতে ড্রাইভার বাস থামালেন কোনো এক শহরের মেইনরোডে, যদি এখানে মসজিদ পাওয়া যায়। কিন্তু না আমরা সেখানে মসজিদ পাইনি। আমরা বাস থেকে নেমে কফির একটিমাত্র দোকান পাই। কফির অর্ডার দিলাম, কিন্তু মাহবুব আমাদের কফির বিল আগেই দিয়ে দেয়। 

এ স্থানটির নাম সালেম। সালেম থেকে আবার আমাদের যাত্রা শুরু হলো। সকাল হয়ে রোদ উঠলো আবারো আমরা রাস্তার পাশের একটি চেইন হাইওয়ে রেস্তোরায় (সম্ভবত নাম হলো সারাভানা) নামলাম। অনেকেই ছবি তুলছিল, অনেকেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিচ্ছিল। আবারো যাত্রা শুরু। ভোর হতেই আমি একটি বিষয় খেয়াল করলাম, কিছু দূর পরপর রাস্তার পাশে ছোট ছোট পিকআপ ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে। তার ড্রাইভার পথের ধারে খোলা মাঠে প্রাকৃতিক কাজ সারছে। অত্যন্ত নির্লজ্জ, নির্বিকার হয়ে। এ দৃশ্যটিকে জার্নির সবচেয়ে বাজে বিষয় হিসাবে দেখেছি। 

বাস চলছে, রাস্তার মাঝের সড়কদ্বীপ গুলোতে মাইলের পর মাইল ফুল গাছ, দুই পাশ দিয়ে চলছে গাড়ি। তখন আমরা ছবি তুলতে, ভিডিও করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। সকাল ১০ টার কাছাকাছি আমরা কইমবাটোর পৌছে যাই। এখানে আমাদের জন্য আগেই হোটেল বুকিং দেওয়া ছিলো। ফাইভ স্টার হোটেল, হোটেল সিটি টাউন।

যদিও এটিকে আমার কাছে ফাইভ স্টার মানের হোটেল মনে হয়নি। এখানে আমি সারাদিন হোটেলেই কাটাই, আমি দলের সাথে পাশের একটি ইন্জিনিয়ারিং কলেজে ভিজিট করতে যেতে পারিনি-পা ফুঁলে যাওয়া ও ব্যথার কারণে। তবে শুনেছিলাম কলেজ কর্তৃপক্ষ লাঞ্চ করিয়েছিলো পুরো দলকে এবং সবাইকে কলেজের ব্রশিওর ও একটি করে পাটের ব্যাগ উপহার দিয়েছিলো। আমার জন্য একটি ব্যাগ নিয়ে এসেছিলো প্রিয় সহকর্মী বন্ধু ফুড ইন্জিনিয়ার শফিক  ভাই।

বিকালে একা একা ভাল লাগছিলোনা, তাই মনে হলো একটু বের হই, সাথে পেয়ে গেলাম আরেক প্রিয় সহকর্মী সিভিল ইন্জিনিয়ার(আর্কিটেক) কামরুজ্জামানকে। তার সাথে চা খেতে আর কাচাঁবাজার দেখতে বের হলাম। কাঁচা বাজারে যাওয়ার পথেই দেখলাম ছোট একটা হোটেল, সেখানে কিছুই নেই, কেবল মাছ ভাজা আছে। মূলত এ হোটেলটিতে কেবল মাছ ভাজাই বিক্রি হয়। কয়েক ধরনের মাছকে মসলা মাখিয়ে কাচের বাকসে রাখা হয়েছে। অর্ডার করলেই সাথে সাথে ভেজে দেওয়া হবে। 

দীর্ঘদিন পর পরিচিত মাছ দেখে আর লোভ সামলানো সম্ভব হয়নি। ইংরেজিতে কোনো মতে বুঝাতে সক্ষম হলাম, আমরা বাংলাদেশি, মসলা কম হবে, বেশি কড়া করে ভাজতে হবে যেন হাত দিয়ে মাছ ভেঙে ভেঙে খাওয়া যায়। সত্যিই দোকানি তাই করেছিলেন, অনেক যত্ন আর গুরুত্ব দিয়ে আমাদের খাইয়েছিলেন। খুশীতে কামরুল ভাই দশরূপি হোটেলের মালিককেই বকশিশ দেয়। 

কাঁচাবাজারে যাই। সেখানে গিয়ে পাই পরিচিত শিমুল আলু। আমি শেরপুরের হাটবাজারে এই আলু অনেক দেখেছি, আমাদের গারো পাহাড়ে গারোরা চাষ করে। এই আলু কাঁচা ও সিদ্ধ-দুই ভাবেই খাওয়া যায়। এই আলু কিনলাম, পরোটা কিনলাম, তারপর সোজা হোটেলে। ডিনারের ব্যবস্থা হয়েছিলো হোটেলের ছাদে, সে এক অসাধারণ দৃশ্য, হুহু করে বাতাস বইছে, আলো-আঁধারিতে চিকেন, বিরানী ও রুটির ব্যবস্থা। যারা পারে তারা অনেক খেয়েছে, আমার মতো নিষ্কর্মারা তেমন খেতে পারেনি, পরোটা আর শিমুল আলুতেই রাত পার হয়ে গিয়েছিলো।

পরদিন সকাল ৮টার মধ্যে আমাদের গাড়ি রেডি থাকবে হোটেলের নিচে। তাই কেউ যেন দেরি না করে। ব্রেকফাস্ট সেরে কোনো মতে গোসল সেরে থ্রিকোয়ার্টার প্যান্ট পরেই আবার গিয়ে বসলাম ম্যাক্সিক্যাব বাসে। কইমবাটোর থেকে উটিতে আমাদের ভ্রমন পথ ছিলো উত্তর কইমবাটোর-মেত্তোপালায়াম-ওদানথুরাই-কুনুর-ওয়েলিংটন-কেট্টি-উটি। কইমবাটোর থেকে উটির দূরত্ব ছিলো ৮৪ কি.মি। কিন্তু আমাদের সময় লাগে মাত্র ৩.৫ ঘন্টা। পাহাড়ী জিগজ্যাগ রাস্তায় কোনো গাড়িই সাধারণ গতিতে চলতে পারেনা। আর নতুন কোনো ড্রাইভার এই রোডে গাড়ি চালাতে পারবেন কিনা আমার অবশ্য সন্দেহ আছে।

এখানের সমতল ভূমি ছেড়ে আমরা পাহাড়ি এলাকায় ঢুকতেই রাস্তায় বেরিকেডের সামনে পড়লাম। কয়েকটি ছেলে এসে তামিল ভাষায় কী যে বলছে আমরা বুঝতেই পারছিলাম না। বাধ্য হয়ে নামলাম আর অপেক্ষামান উর্ধ্বতন কর্মমর্তাদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম যে, আমাদের গাড়িতে তল্লাশি করা হবে। হতভম্ব হয়ে যাই। আমরা আমাদের পরিচয় দিচ্ছিলাম কিন্তু তারা কোনোভাবেই আমাদের কথা শুনতে চাইছিলোনা। তারপুর জানতে পারতাম তারা আসলে চেক করবে আমাদের গাড়িতে কোনো পলিথিনের ব্যাগ আছে কিনা, থাকলে সেই পলিথিন ব্যাগ জমা দিতে হবে এবং তারা এমনিতেই একটি করে কাগজের ব্যাগ আমাদেরকে দেব। কারণ উটিতে কম্প্লিটলি পলিথিন নিষিদ্ধ।

চেকাররা আমাদের এক সহকর্মীকে ভিডিও করতে দেখে আরো ক্ষেপে গেলো, এবং বুঝাতেই চাইলো যে, আমরা তাদের  ব্যরিকেডের ছবি তুলেছি নালিশ জানানোর জন্য। আমি বারবার বুঝানোর চেষ্টা করলাম না, আমাদের যারা ছবি তুলেছে তারা কেবল পাহাড়ের প্রতি মনেোযোগি আপনাদের তো আমরা জানিই না, উপরন্ত এই গাড়ীর ড্রাইভার ছাড়া আমরা সবাই বাংলাদেশী এবং সরকারী কর্মকর্তা। একটু কাজ হলো মনে হচ্ছিলো একজন তামিলিয়ানের ভরসায়। তিনি বললেন আমাদের বাড়তি ব্যাগ গুলোর দাম দিয়েদিন। আমরা ফ্রি পেয়ে একের ভিতর তিনটি করে ব্যাগ নিয়েছিলাম। 

ওরা কেবল একটা ব্যাগ ফ্রি দিবে, বাকী গুলোর জন্য দাম দিতে হবে। এমনতাবস্থায় আমাদের উপর আরো একটি অভিযোগ আনা হলো যে, ড্রাইভার ইচ্ছা করেই এই কাজ করেছে-কারণ সে তো জানে, কেন সে বিদেশীদের জানায়নি যে এখানে পলিথিন নিষিদ্ধ। এরকারণে ড্রাইভার ও গাড়ীর জন্য দুইশত রূপি জরিমানা করা হলো, তাৎক্ষনিক আমাদের মধ্যে থেকে এই টাকার ব্যবস্থা করা হলো, ড্রাইভারকে আমরা রক্ষা করলাম। এগিয়ে যাচ্ছিলাম সামনের দিকে, মাঝে মাঝেই চোখে পড়ছিলো বানরের দল, সজারু আর গুই সাপ। একসময় মনে হলো আমার কানের পর্দা একটু বাইরের দিকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে, কানে কম শুনতে লাগলাম। অনেকেই তাদের পান্ডিত্য জাহির করতে কানে হেডসেট লাগিয়ে কানের পর্দা রক্ষার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো।

পাহাড়ের উপর বায়ুচাপ কথ থাকায় আমরা কানে কম শুনতে পাচ্ছিলাম। পথে পথে পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে উচ্চতা লেখা রয়েছে, বাঁকা রাস্তা গুলোর শুরুতেই লেখা রয়েছে -- উইম্যান হেয়ার ক্লীপ বেন্ড, ড্রাইভ কেয়ারফুলি, ডেন্জারাস বেন্ড। এক সময় ওয়েলিংটন ক্যান্টনমেন্ট চোখে পড়লো, চোখে পড়লো রেললাইন, ন্যারোগেজ। অবশেষে আমরা উটিতে পৌছে উঠলাম গিয়ে হোটেল ফরচুনে। অত্যন্ত সুন্দর আর মনোরম পরিবেশে এই ফাইভস্টার হোটেলটি সত্যিই অনেক অনেক সেবা দিয়েছে আমাদের।

বিকালে হোটেলের ব্যুফের সামনে এক ব্যক্তি পিয়ানো বাজাতেন নিয়মিত। শেষদিন হোটেল কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে নিয়ে আয়োজন করেছিলেন ফান গেইম শো-র। উটির হ্যান্ডমেইড চকলেট ভারতসেরা দামে ও মানে। আমাদের অনেকেই বাংলাদেশে এই চকলেট নিয়ে এসেছেন।

উটি থেকে ফেরার পথে দেখেছি পথে পথে শিশুরা স্কুল ড্রেস পড়ে দাড়িয়ে গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করছে। পাহাড়, দুর্গম, অস্বাভাবিক চলাচলের পথ এখানের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আমার আশাবাদ তেমন ছিলোনা। কিন্তু যখন জানতে পারি ভারতের সেরা দশটি স্কুলের মধ্যে ৩ টি স্কুলই এই ওটির, ভীমড়ি খেয়েছিলাম। আবাসিক স্কুল হিসাবে কোদাইকানাল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলটি ভারতের মধ্যে সবচেয়ে সেরা। বাংলাদেশের সামর্থ্যবান যেকোনো অভিভাবক এখানে সন্তানকে আবাসিক সুবিধাসহ লেখাপড়া নিশ্চিত করার সুযোগ নিতে পারেন অনায়াসে।

সৌন্দর্যের লীলাভূমি উটির পাহাড়ে দাঁড়িয়ে চাইলেই মেঘ ধরা যায়। দূর থেকে পাহাড়ের পাদদেশে অসংখ্য সাদা সাদা ফুল দেখা যায়। কিন্তু যতই কাছে যাচ্ছিলাম ততই স্পষ্ট হচ্ছিল ওগুলো ফুল নয়, সাদা আস্তরণে আস্ত ইটের ঘরবাড়ী, হোটেল রেস্টহাউস। পাহাড়ের গায়ে ঘর, নীচে ঘর, উপরে ঘর -- এক অবিশ্বাস্য সৌন্দর্য। এখানে পাহাড়ের গায়ে রেস্টহাউস, পর্যটন হোটেল ইত্যাদি তৈরী করার জন্য জায়গা বরাদ্ধ চলছে সরকারীভাবে। বহু স্থাপনা তৈরি হয়েছে পাহাড় কেটে। 

উটি হলো তামিলনাড়ুর নীলগিরি জেলার রাজধানী। এখানেই আছে সবচেয়ে জনপ্রিয় হিল স্টেশন -- যা উধাগামান্দালাম হিসাবে পরিচিত। নীলগিরি পর্বতের চূড়ায় অবস্থিত উটির উচ্চতা সি-লেভেল থেকে ২২০০ মিটার। ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানীর সাম্রাজ্যবাদীরা যখন মাদ্রাস প্রেসিডেন্সি ঘোষণা করে, তার পর থেকেই তারা উটিকে গ্রীষ্মকালীন রাজধানী হিসাবে ব্যবহার করতেন। ইংরেজ শাসকরা উটিকে খুবই পছন্দ করতেন। উটিতেই জন্ম নিয়েছিলেন ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের সাবেক ক্যাপটেইন কলিন কাউড্রেই। 
ইউক্যালিপ্টাস গাছ থেকে তেল সংগ্রহকারী একটি ছোট শিল্প এখানে চলছে বহুদিন ধরে। উটির বোটানিক্যাল গার্ডেনেই সংরক্ষিত আছে ২০ মিলিয়ন বছরের বৃক্ষ ফসিল। উটির রোজ গার্ডেনে আছে প্রায় ২০০০০ প্রজাতির গোলাপফুল-যা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। উটি থেকে ১০ কি.মি. দূরে ডুডাবেট্টা পিক দক্ষিণ ভারতের সবচেয়ে উচুস্থান যার উচ্চতা সমুদ্র সমতল থেকে ২৬২৩ মিটার। উটি লেইকটি যদিও কৃত্রিম কিন্তু এটির উচ্চতা ২০০০ মিটার বা তারও বেশি।

উটির পাশেই নীলগিরি পর্বতে আছে দুটি ন্যাশনাল পার্ক, একটি মধুমালাই ন্যাশনাল পার্ক, অন্যটি মুকুর্থি ন্যাশনাল পার্ক -- যা ভারতীয় বাঘ, হাতি আর ২২৬ প্রজাতির পাখিদের অভয়ারণ্য হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৯০৮ সালে স্থাপিত নীলগিরি মাউন্টেইন রেলওয়েকে ইউনেস্কো ওয়াল্ড হেরিটেইজ হিসাবে ঘোষণা করেছে। ভারতের সবচেয়ে ধীর গতির এই ট্রেনটির গতি ১০কি.মি/ঘন্টা।

ভবানী নদীর পর থেকে এশিয়ার সবচেয়ে খাড়া রেলপথটির ৪০কি.মি অতিক্রম করতে ট্রেনটিকে ২০৮টি বাঁক, ১৬টি টানেল আর ২৫০টি ব্রিজকে পার হতে হয়!!

প্রকৃতির এক আজব লীলা অতি তাপমাত্রার কারণে একদিন আগে চেন্নাইতে দিনের বেলায় আমি রুম থেকে বাইরে বের হওয়ার সাহস পাইনি, আর একদিন পরেই উটিতে এসে আমাকে শীতের ঠেলায় চাঁদর কিনতে হলো। আমাদের অনেকেই শীতের কাপড় এখন থেকে কিনেছেন কমদামে কিংবা ন্যায্য দামে। নানান প্রজাতির মালিশও এখানে পাওয়া যায়। যেহেতু পর্যটন এরিয়া তাই এর নিরাপত্তাটা এখানে পর্যাপ্তই আছে, প্রতিদিন শত শত গাড়ী উটিতে প্রবেশ করছে আর বের হয়ে যাচ্ছে।

উটির পাহাড়ের গায়ে লেগে থাকা সাদা সাদা মেঘ, হোটেলের জানালার পাশে বসে  মনে হচ্ছিলো কবি কালিদাস এত বছর আগে কিভাবে জেনেছিলো আমার মনের কথা:

একখানা মেঘ ভেসে এলো আকাশে
উজ্জীয়নীতে নির্ঘুম জাগে কে এলোকেশে
ছায়া ছায়া নিভু নিভু আলোর রেখা
এসময় ভালো আর লাগে না একা
বিরহের কথা মেঘ কানে কানে বলে
আমি এক অভিসপ্ত যক্ষ এই মহানগরে

(আগামী পর্বে থাকবে কইমবাটোর-টু-চেন্নাই বাই ট্রেন)

 

বাঙালের ভারত দর্শন: আর্যদের আগমন ও দ্রাবিড় সংস্কৃতি

বাঙালের ভারত দর্শন: চেন্নাইয়ে খাবারের খোঁজে

বাঙালের ভারত দর্শন: চেন্নাইয়ের পথে পথে, অলিতে গলিতে

বাঙালের ভারত দর্শন:তামিলদের কালোচোখের তারায় হাইটেক পার্ক ও উন্নয়নের শুভযাত্রা

 

নিউজবাংলাদেশ.কম/টিএবি     




  

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়