জাহাঙ্গীর ফিরোজের কবিতা

উৎসের প্রণেতা
আদি ও অন্তকে অনন্তের মধ্যে পুরে দিলেন
আদি ও অন্ত ডুবস্রোতে ভেসে চলেছে;
কোথায়, কোন্ গন্তব্যে?
এই জিজ্ঞাসারও আদি-অন্ত নেই
দিকচিহ্নহীন এক অনুভূতি!
তপ্ত কড়াই ও ফুটন্ত তেলে
পুলি পিঠার ভেতরে দেয়া পুর
সেও দেখে না কড়াই ও উনুন
স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের রাতদিন ভেঙে ফেলে
এক কায়াহীন সত্যের বোধ থেকে বোধাতীত অনুভূতি-স্বজ্ঞার জন্ম হয়।
স্বজ্ঞা থেকে গিরগিটি, পিঁপড়ে ও পাখি
জলোচ্ছ্বাস, ভূকম্পন, ঝড় ও বৃষ্টির বার্তা জেনে যায় কুনোব্যাঙ
তা’হলে মনুর জ্ঞান নাতিদীর্ঘ!
তাই লাগে দুরবিন, রাডার ও রিখটার স্কেল ;
দেখে রোজ বহুবিধ আশঙ্কা আর সম্ভাবনা;
তারপর ব্যস্ত হয়ে ছোটে অসীমের সন্ধানে!
অনন্তে ভেসে চলা ধারণার উৎস থেকে জ্ঞান
বোধিসত্ত্বে থমকে দাঁড়ালে কায়াহীন উৎসের প্রণেতা
নিজেকে ঘোষণা করে এক ও অভিন্ন সত্তা বলে।
এই বার্তা বয়ে হাজার বছর পার করে দিয়েছেন যারা
এবং নির্বাচিত স্বজ্ঞাধীনও প্রেরক দেখে নি
শুধু তুমি তাঁকে জেনেছো এক ধনু দূরত্ব থেকে।
মুসাও দেখেননি তাঁকে আলো ছাড়া অন্য কোনো রূপে।
আমি তো তোমাকে দেখিনি
অনুভব করি সারাক্ষণ।
ধাঁধাময় জগৎ সংসার
সেই জগতের কথা জানে যে-অন্তর
সেও বলেনি কিছু সরাসরি;
মাঝেমাঝে ভেসে আসে ঘ্রাণ
মাঝেমাঝে শব্দ মঞ্জরি...
কখনো সখনো দৃশ্যকাব্য
ধাঁধার অঙ্কে ভরা
স্বপ্ন ও জাগরণে দেয় ধরা।
এইসব লিখে রাখি কিছু কিছু
বাদবাকি উড়ে যায়
কেউ কেউ ঘুরেও দাঁড়ায়।
তাদের মাথায় শিং
কারো কারো পিঠে দু’টি ডানা
কেউ কেউ গোয়ের্নিকা
তাদের অর্থ ধাঁধাময়, দ্যার্থক;
কেউ কেউ সরাসরি নয়, আয়নায় দেয় দেখা
পেছন ফিরতে গেলে সরে যায়
কী হবে এসব নিয়ে হায় হায় করে
সে থাকে অন্তরে, তার ভাষা
যে-ভাবে বুঝতে পারি, তারই কিছু কিছু আঁকি
বাদবাকি দেয় শুধু ফাঁকি
আলোর ওপারে থেকে
দেখেও বুঝি না তারে
ধাঁধাময় জগৎ সংসারে।
ভঙ্গুর নীরবতা
গা ছমছম নিস্তব্ধতা, কেউ নেই
ঝিমধরা অন্ধকারে কিছু ঝিঁঝি
কর্ণকুহরে বসে ডাকছিল;
কিছু মুখ, সবুজ আঁচলে ঢাকা নদী
জানালায় একটি কী- দুটি আলো
একে একে যখন হারালো
বেলিফুল হাতে সহসা যে এসে দাঁড়াল
তার নাম ভুলে বসে আছি!
একটি দুপুরে একা একটি তিলেঘুঘু
ডাকছিল নাকি কাঁদছিল!
কয়লার খনিতে এ-কী হীরকখণ্ড চমকালো!
একটি গভীর রাত
সহসা একটি তীক্ষ্ণ বল্লমে
এফোঁড়-ওফোঁড় হ’ল
ট্রেন চলে গেল।
অজ্ঞেয় রহস্যের পর্দা গুটিয়ে রাত
দুলতে দুলতে দিগন্তের ওপারে অস্পষ্ট
আলোতে হারালো।
প্রতীক্ষা
প্রতীক্ষা সে তো প্রার্থনার আরেকটি রূপ
যখন ফুটবে গোলাপ কুঁড়িটি
বাতাস বয়ে আনবে ফুলের সন্দেশ।
দেখ, তৃষিত পাখির নিবেদনে
নিস্তব্ধ রাতের অন্ধকার আলোড়িত, অনাবৃত ফুলেদের রূপ ও সুবাসে
ভীষণ মাতাল হ’ল গন্ধবহ।
দোয়েল তো সেই প্রতীক্ষায় প্রহর গুনেছে।
বসন্ত আসে, মৃত্যু পেরিয়ে বারবার;
আহা! পাখিদের অলিদের বসন্ত!
ফুলও ঝরে যায়; তবু বসন্তের হাওয়া!
সে- কী মনে রাখে ঝরাপাতাদের বিষণ্ণ ঘ্রাণ?
প্রতীক্ষার শেষে
নতুন পাতার সাথে এসেছে গোলাপ।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ