বাংলাদেশকে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারত

ছবি: সংগৃহীত
দুবাইয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪১ রানের জয় নিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ভারত। এই জয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় ঘণ্টা বেজেছে শ্রীলঙ্কার, আর বাংলাদেশের জন্য পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি হয়ে দাঁড়িয়েছে কার্যত এক ‘সেমিফাইনাল’।
ভারতের ১৬৮ রানের জবাবে বাংলাদেশ ১৯.৩ ওভারে মাত্র ১২৭ রানে অলআউট হয়ে যায়। ম্যাচের শুরু থেকেই বাংলাদেশের ইনিংস ছিল নড়বড়ে, নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে দলটি। ওপেনার সাইফ হাসান একাই লড়াই করেন, তবে অন্য প্রান্ত থেকে কোনো সমর্থন পাননি। তিনি ৫১ বলে ৩টি চার ও ৫টি ছক্কার সাহায্যে ৬৯ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। তার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেন পারভেজ হোসেন ইমন (২১)। এই দুজন ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি।
ভারতের পক্ষে দারুণ বোলিং করেন কুলদীপ যাদব, তিনি মাত্র ১৮ রান দিয়ে ৩টি উইকেট শিকার করেন। এছাড়া জসপ্রীত বুমরা ও বরুণ চক্রবর্তী ২টি করে উইকেট লাভ করেন এবং অক্ষর প্যাটেল ও তিলক বর্মা ১টি করে উইকেট পান।
সংক্ষিপ্ত স্কোরবোর্ড
ভারত: ২০ ওভারে ১৬৮/৬ (অভিষেক শর্মা ৭৫, হার্দিক পান্ডিয়া ৩৮, শুভমান গিল ২৯; রিশাদ হোসেন ২/২৭, তানজিম হাসান ১/২৯, মুস্তাফিজুর রহমান ১/৩৩)।
বাংলাদেশ: ১৯.৩ ওভারে ১২৭ (সাইফ হাসান ৬৯, পারভেজ হোসেন ইমন ২১; কুলদীপ যাদব ৩/১৮, জসপ্রীত বুমরা ২/১৮)।
ফল: ভারত ৪১ রানে জয়ী।
টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ, যা আত্মবিশ্বাসের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। ভারতের দুই ওপেনার অভিষেক শর্মা ও শুভমান গিল শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন। পাওয়ারপ্লেতে তারা কোনো উইকেট না হারিয়ে ৭২ রান যোগ করেন। এই জুটিতে অভিষেক ও গিল যথাক্রমে ৪৬ ও ২৫ রান করেন। রিশাদ হোসেনের বলে গিল ২৯ রান করে আউট হলে এই জুটি ভাঙে।
আরও পড়ুন: টস জিতে ভারতের বিপক্ষে বোলিংয়ে বাংলাদেশ
অভিষেক শর্মা ২৫ বলে টি-টোয়েন্টিতে তার চতুর্থ অর্ধশতক পূর্ণ করেন। তিনি ৬টি চার ও ৫টি ছক্কার সাহায্যে ৩৭ বলে ৭৫ রানের একটি বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন। কিন্তু ১১.১ ওভারে রিশাদের দুর্দান্ত থ্রোতে তিনি রানআউট হয়ে যান। এরপর মুস্তাফিজুর রহমানের বলে সূর্যকুমার যাদব (৫) এবং তানজিম হাসানের বলে তিলক বর্মা (৫) দ্রুত আউট হলে ভারতের রানের গতি কমে যায়। শেষদিকে হার্দিক পান্ডিয়ার (৩৮) ও অক্ষর প্যাটেলএর (১০) ব্যাটে ভর করে ভারত নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৬৮ রানে পৌঁছায়।
বাংলাদেশের পক্ষে রিশাদ হোসেন ২৭ রান দিয়ে ২টি উইকেট নেন। এছাড়া, তানজিম হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান এবং সাইফউদ্দিন ১টি করে উইকেট লাভ করেন। এই ম্যাচে ১ উইকেট নিয়ে মুস্তাফিজুর রহমান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন এবং সাকিব আল হাসানকে টপকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হন।
১৬৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল একেবারেই এলোমেলো। দ্বিতীয় ওভারেই জসপ্রীত বুমরার বলে ১ রান করে আউট হন ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। এরপর সাইফ হাসান এবং পারভেজ হোসেন ইমন দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৩০ বলে ৪২ রান যোগ করে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পাওয়ারপ্লে শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ১ উইকেটে ৪৪ রান।
কিন্তু পাওয়ারপ্লের পরই ব্যাটিংয়ে বিপর্যয় নেমে আসে। কুলদীপ যাদবের বলে পারভেজ ইমন (২১) আউট হওয়ার পর একে একে ফিরে যান তাওহীদ হৃদয় (৭), শামীম হোসেন (০), জাকের আলী (৪), এবং সাইফউদ্দিন (৪)। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোর কারণে বাংলাদেশের ইনিংস ভেঙে পড়ে। একাই লড়ে যান সাইফ হাসান, যিনি ৬৯ রানের একটি সাহসী ইনিংস খেলেন। তার এই ইনিংসটিই ছিল দলের একমাত্র উজ্জ্বল দিক। শেষ পর্যন্ত সাইফ যখন আউট হন, তখন বাংলাদেশের জয়ের আশা শেষ হয়ে যায়। বাংলাদেশ শেষ ৫ উইকেট হারায় মাত্র ১৮ রানে।
এই জয়ে ভারত ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। ২ ম্যাচ খেলে ২টিতেই হেরে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কার ফাইনাল খেলার সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে। এখন টুর্নামেন্টের ফাইনালিস্ট নির্ধারণ হবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ম্যাচের ওপর, কারণ দুই দলেরই পয়েন্ট ২। তাই বৃহস্পতিবারের এই ম্যাচটি পরিণত হয়েছে এক অলিখিত সেমিফাইনালে। যে দল জিতবে, সে-ই ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে খেলবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি