News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৬:৪৯, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯
আপডেট: ১২:২১, ৩ মার্চ ২০২০

বৌদ্ধপল্লীতে হামলা: ৭ বছরেও বিচার না পাওয়ায় হতাশ ক্ষতিগ্রস্তরা

বৌদ্ধপল্লীতে হামলা: ৭ বছরেও বিচার না পাওয়ায় হতাশ ক্ষতিগ্রস্তরা

আজ থেকে সাত বছর আগে কক্সবাজারের রামু উপজেলায় ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে বৌদ্ধপল্লীতে হামলার ঘটনা ঘটে। ১৩টি বৌদ্ধ মন্দিরে ভাংচুর, লুটপাট চালায় তারা, ৩০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর সাত বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার শেষ না হওয়ায় হাতাশা প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

রামু উপজেলার হাইটুপি গ্রামের বাসিন্দা উত্তম বড়ুয়া ফেইসবুকে ‘কোরআন অবমাননাকর’ ছবি পোস্ট করেছেন- এমন অভিযোগ তুলে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে ওই গ্রামে সংঘবদ্ধ হয়ে হামলা চালায় একদল লোক। 

ওই ঘটনায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জিএম রহিমুল্লা, সদর উপজেলার ভাইস-চেয়ারম্যান শহিদুল আলম বাহাদুরসহ দেড় হাজারের বেশি লোককে আসামি করে মামলা হয়।

বৌদ্ধ মন্দির ও পল্লীতে হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ১৮টি মামল করে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত একজন আরও একটি মামলা করলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেন।

রামু মেরংলোয়া এলাকার বাসিন্দা দীপংকর বড়ুয়া বলেন, “সাত বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার নিষ্পত্তি এখনো হয়নি। বিচারে বিলম্ব হলে প্রকৃত দোষীরা শাস্তির আওতা থেকে পার পেয়ে যেতে পারে।”

দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি করে প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও বসত বাড়িগুলো পুননির্মিত হলেও মনের ক্ষত তো এখনো মোছেনি।”

সাত বছর আগের ওই হামলায় বৌদ্ধ মন্দিরের অসংখ্য পুরাকীর্তি, কয়েকশ ছোট-বড় বুদ্ধমূর্তি, কয়েকটি ভাষার ত্রিপিটিক এবং ‘গৌতম বুদ্ধের অমূল্য ধাতু’ (দেহভস্ম) আগুনে পুড়ে যায় । পরে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এসব বৌদ্ধ বিহার ও বসত বাড়ি পুনরায় নির্মাণ করা হয়। ২০১৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পুননির্মিত এসব বৌদ্ধ মন্দির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মামলার অগ্রগতি জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, পুলিশের করা ১৮টি মামলার অভিযোগপত্রে মোট ৯৩৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। তারা সবাই এখন জামিনে আছে।

দীর্ঘ পাঁচ বছর তদন্তের পর মামলাগুলো বিচারের পর্যায়ে এলেও অগ্রগতি খুব বেশি নেই।  এ পর্যন্ত কয়েকজনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে কেবল।

এ বিষয়ে  পিপি ফরিদুল আলম বলেন, “আসামি বেশি থাকায় তদন্ত কাজে সময় বেশি লেগেছে। পুলিশ যদি মামলার সাক্ষীদের আদালতে উপস্থাপন করতে পারে, সাক্ষীরা যদি যথাযথ সাক্ষ্য দেয়, তাহলে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দিয়ে বিচারকার্য সম্পন্ন করা যাবে।”

পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন, রামুসহ কক্সবাজারের বৌদ্ধ পল্লীগুলো পুলিশের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছে। ২০১৭ সালে এ দেশে রোহিঙ্গা আসার পর বৌদ্ধ সম্প্রদায় কিছুটা আতঙ্কে ছিল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পদক্ষেপে তা এখন স্বভাবিক হয়েছে।

একই মনোভাব প্রকাশ করেন রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের আবাসিক ভিক্ষু প্রজ্ঞানন্দ থের। রামু সহিংসতার মত দ্বিতীয় কোনো ঘটনা যাতে বাংলাদেশে না ঘটে সেজন্য দৃষ্টান্ত রচিত হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, “শুধুমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় নয়, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রত্যাশা ছিল প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দিয়ে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। যেসব মামলা হয়েছে, তাতে কোনো নিরাপরাধ ব্যক্তি যাতে হয়রানির শিকার না হন, প্রকৃত দোষীরা যাতে শাস্তির আওতায় আসে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

 

নিউজবাংলাদেশ.কম/এএইচকে

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়