News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ২০ অক্টোবর ২০২৫

‘অভ্যুত্থানের পর সুযোগ মিললেও ঐক্য হারিয়েছে রাজনীতিবিদরা’

‘অভ্যুত্থানের পর সুযোগ মিললেও ঐক্য হারিয়েছে রাজনীতিবিদরা’

ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরে দেশকে সুন্দর করে গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, কিন্তু রাজনীতিবিদরা ঐক্য হারিয়ে ফেলেছেন— এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

সোমবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমানে এত বড় একটা অভ্যুত্থানের পরে এত বড় একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে যে, দেশটাকে আবার সুন্দর করে গড়ে তুলবার। কিন্তু আমরা যখন চারদিকে দেখছি যে, আমাদের রাজনীতিবিদরা ঐক্য হারিয়ে ফেলছেন, অনেককে চলে যাচ্ছেন। চারদিকে দেখছি, যে একটা অনৈক্যের সুর। তখন আমরা অনেকেই হতাশ হচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, দেশে এখন অস্থিরতা চলছে। আমাদের এখন একটা ক্রান্তিকাল চলছে, ট্রানজিশনাল পিরিয়ড। এখানে তো সব ‘জেন জি’—ওদের চিন্তা, ওদের ভাবনা এবং আমাদের চিন্তা-ভাবনার মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। কারণ বয়স, প্রজন্মের যে পার্থক্য, এটা অস্বীকার করার তো উপায় নেই।

‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা’ নামের মাসিক ম্যাগাজিন আয়োজিত অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী রাজনীতিবিদ ও আমলাতন্ত্রকে দায়ী করেন। 

তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সেইরকম তো নেই, বরঞ্চ অত্যন্ত নিম্নমানের। এখানে শিক্ষার ওপরে খুব কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা বিএ পাস করি, এমএ পাস করি, চাঁদপুরের গ্রাম থেকে অথবা আমার ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রাম থেকে কেউ ঘুরে বেড়ায়, কোনো কাজ পায় না। কারণ বিএ পাস এমএ পাসকে চাকরি দিতে পারেন না। কিন্তু সে যদি বিএসসি পাস করতো, অথবা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে একটা ডিপ্লোমা নিতো ইলেকট্রিসিটির ওপরে, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর বা অন্য বিষয়ে, তাহলে তার চাকরি কেউ আটকাতে পারতো না। এই যে নীতির ব্যাপারটা, এখানেই রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা।

আরও পড়ুন: `শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত তারেক রহমান`

তিনি আরও বলেন, আমাদের স্যাররা আন্দোলন করছেন, রাস্তায় আছেন শিক্ষকদের বেতনের জন্য। এটা তো অনেক ভালো হতে পারত যদি আমরা পুরোপুরি এটাকে পরিবর্তন করে শুধুমাত্র অতি মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ শিক্ষা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ভোকেশনাল ও কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারতাম। আজকে কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা নেই, তার কোনো ইনস্টিটিউট নেই। ভোকেশনাল সেন্টারগুলো নেই। আমরা এগুলো তৈরি করি না। আমরা বিএ পাস, এমএ তৈরি করছি। তাহলে এই তরুণরা বিকশিত হবে কীভাবে?

তিনি মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

মির্জা ফখরুল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা থেকে পড়ে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেন। 

তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ তোমাকে ডাকছে। আজকে তোমরা যারা এখন যৌবনে পা দিচ্ছ, নতুন পৃথিবীতে পা দিচ্ছ, সেই পৃথিবী তোমাদের ডাকছে। যেমন ডক্টর সুবর খান বলেছেন, নিজেকে তৈরি করতে হবে পৃথিবীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে। পৃথিবী প্রতিযোগিতার পৃথিবী হয়ে গেছে। তুমি যদি টিকতে না পার, তুমি নিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে। সেই জায়গায় তোমাকে পৌঁছাতে হবে, তারপরে নিজেকে তৈরি করতে হবে।

কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তনে ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা’ মাসিক ম্যাগাজিনের উদ্যোগে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। প্রধান অতিথি বিএনপি মহাসচিব শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরা (সভাপতিত্বে), বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মোবারক হোসেন (সঞ্চালনায়), ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান মো. সবুর খান, বিএনপির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমার প্রধান সম্পাদক হারুন অর রশিদ, শিক্ষাবিদ এম এ সাজ্জাদ, জমিরুল আকতার, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের আহ্বায়ক কবীর হোসেন, সদস্য সচিব কাজী শওকত হোসেন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা মহানগর উত্তরের অধ্যাপক সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, মুন্সিগঞ্জ বিএনপির সদস্য মোশাররফ হোসেন ও কৃতি শিক্ষার্থীরা।

মির্জা ফখরুল শিক্ষার্থীদের সতর্ক ও উৎসাহী করে বলেন, এই জানাটা, এটাকে ব্যবহার করাটা সুনির্দিষ্ট মঙ্গল খাতে যেতে হবে, ধ্বংসের জন্য নয়। আজকের পৃথিবী অস্থির, কিন্তু আমরা সবাই মানব কল্যাণে কাজ করলে, সুন্দর পৃথিবী তৈরির জন্য কাজ করলে, সবাই মিলে সেটাকে সুন্দর করে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়