বিএনপি মহাসচিবের হতাশা: আমলাদের হাতে অসহায় উপদেষ্টারা
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান সরকারের উপদেষ্টারা অনেক ক্ষেত্রে অসহায় উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাষ্ট্রের সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও নিয়ন্ত্রণ এখনো আমলাদের হাতেই কেন্দ্রীভূত।
শনিবার (২৩ আগস্ট) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এই মন্তব্য করেন।
অর্পণ আলোক সংঘ আয়োজিত ‘সামাজিক সুরক্ষা কতটা সংরক্ষিত’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল দেশের বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রব্যবস্থা এমনভাবে ‘দখল’ হয়ে আছে যে সংসদ সদস্যরা আইন প্রণয়নের বদলে রাস্তাঘাট বা ভবন উন্নয়নের মতো কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
বিএনপি মহাসচিব জানান, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই অনাচার, অবিচার, নৈরাজ্য ও দুর্নীতি একদিনে দূর করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, এক বছরের মধ্যে সবকিছু বদলে যাবে এমন প্রত্যাশা করা অবাস্তব।
তিনি বিশ্বাস করেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে হলে উপদেষ্টাদের এতদিনকার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ শুরু করতে হবে।
আরও পড়ুন: ‘গুম-খুনের দায় শেখ হাসিনার, দেশের মাটিতেই বিচার হতে হবে’
মির্জা ফখরুল বলেন, গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশ ক্ষমতা পরিবর্তনের একটি সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন সময় এলেও রাতারাতি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে—এমন ধারণা ভিত্তিহীন। এর জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং আন্তরিকতা।
রাষ্ট্র সংস্কারের চলমান আলোচনা মাঝে মাঝে হতাশার জন্ম দেয় বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, যখন একটি প্রগতিশীল সমাজ এবং মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থা চান, তখন যদি দেখেন ভিন্ন চিন্তা ও উগ্রবাদ ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে, তখন হতাশা আসাই স্বাভাবিক।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে রাষ্ট্রকাঠামোতে বড় ধরনের সংস্কার আনা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
তার মতে, বিচ্ছিন্ন বা জোড়াতালি দিয়ে এসব সমস্যার সমাধান হবে না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং সবই রাষ্ট্রকাঠামোর ওপর নির্ভরশীল।
ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশের রাজনৈতিক সংকটের পেছনে ভয়াবহ দুর্নীতিকে অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে ঘুষ ও দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, মফস্বলের একজন শিক্ষককে সামান্য সমস্যা সমাধানের জন্য ঢাকায় আসতে হয়, কারণ এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে যেখানে ঘুষের লেনদেন কেন্দ্র থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল এমনকি হাসপাতালগুলোতেও শিক্ষক ও নার্স নিয়োগের ক্ষেত্রেও ঘুষ দিতে হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।
গোলটেবিল বৈঠকে বিএনপি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও অর্থনীতিবিদদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা দেশের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








