News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২১:০৬, ২২ আগস্ট ২০২৫

ঢাকা সফরে আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ঢাকা সফরে আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মদ ইসহাক দার শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছাচ্ছেন। দুই দিনের এই সরকারি সফরে তিনি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন। 

সফরটি বাংলাদেশ–পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে উভয় দেশের কূটনৈতিক মহলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।

বিমানবন্দরে ইসহাক দারকে স্বাগত জানাবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম ও পূর্ব) ড. মো. নজরুল ইসলাম। এরপর সন্ধ্যায় ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের আয়োজনে একটি রিসেপশনে তিনি যোগ দেবেন। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন ইতোমধ্যে ঢাকায় অবস্থানরত পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কমাল খানও। রিসেপশনের ফাঁকে বাংলাদেশের শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক নেতা এবং নাগরিক সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে দারের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে।

রবিবার (২৪ আগস্ট) সকালে পাকিস্তানি মন্ত্রী ঢাকার ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রাতঃরাশ বৈঠকে মিলিত হবেন। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদার করার পথচলা নতুন করে আলোচনায় আসবে।

আরও পড়ুন: মার্কিন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শরীফুল

সফরের মূল কর্মসূচি রবিবার দুপুরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। এ বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে পাঁচ থেকে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা সই হতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। সম্ভাব্য চুক্তির মধ্যে রয়েছে কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের ভিসামুক্তি, বাণিজ্য যৌথ কর্মদল গঠন, সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি, দুই দেশের ফরেইন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা, রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থাগুলোর মধ্যে সমঝোতা এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে লিংকেজ। এসব দলিল স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে ঢাকা–ইসলামাবাদ সম্পর্ক দীর্ঘদিন পর কার্যত নতুন মাত্রা পেতে যাচ্ছে।

বৈঠকের আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ছাড়াও আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটও গুরুত্ব পাবে। বিশেষ করে বাণিজ্য ও যোগাযোগ সম্প্রসারণ, বিনিয়োগে সহযোগিতা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, এবং দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা প্রসঙ্গ হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশ পক্ষ থেকে দীর্ঘদিনের তিনটি অমীমাংসিত ইস্যু—১৯৭১ সালের গণহত্যার আনুষ্ঠানিক ক্ষমা, ‘স্ট্যান্ডেড পাকিস্তানি’ নাগরিকদের পুনর্বাসন এবং অভিভক্ত সম্পদের বণ্টন—আলোচনায় উত্থাপিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর ইসহাক দার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। একই দিনে তিনি বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ–এর চেয়ারম্যানসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা করবেন।

এ সফরকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কারণ দীর্ঘদিন পর পাকিস্তানের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরে আসছেন। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় এই সফরকে উভয় দেশ ‘উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সংলাপের নতুন ধাপ’ হিসেবে দেখছে।

উল্লেখ্য, পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কমাল খান ইতোমধ্যেই ২১ আগস্ট ঢাকায় এসে চার দিনের সফর শুরু করেছেন। তিনি ব্যবসায়ী মহল, শিল্প মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করছেন এবং অন্তত চারটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছেন। রবিবারের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য যৌথ কর্মদল গঠনের চুক্তিও সই হওয়ার কথা রয়েছে।

সব মিলিয়ে ২৩ ও ২৪ আগস্টের এই সফরকে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। চুক্তি ও সমঝোতাগুলো বাস্তবায়িত হলে বহু বছর ধরে স্থবির হয়ে থাকা ঢাকা–ইসলামাবাদ সম্পর্ক নতুন দিগন্তে প্রবেশ করবে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়