ভূমিকম্প প্রস্তুতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক
ফাইল ছবি
সম্প্রতি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্প এবং এর পরবর্তী দফায় দফায় কম্পনের প্রেক্ষাপটে দ্রুত প্রস্তুতি ও সমন্বিত কার্যক্রম নিশ্চিত করতে জরুরি বৈঠকে বসেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভূমিকম্প প্রস্তুতি এবং দ্রুত সাড়া-দান (Quick Response) কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অংশ নেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের উপ-প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বৈঠকে ভূমিকম্পের ঝুঁকি মূল্যায়ন, সমন্বিত প্রস্তুতি, এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সরকারের এই জরুরি বৈঠক এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হলো, যখন গত শুক্র ও শনিবার প্রায় ৩১ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় চার দফা ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। গত শুক্রবার সকালে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পটিকে কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাণঘাতী কম্পন হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
- ক্ষয়ক্ষতি: এই ভূমিকম্পে তিন জেলায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয় এবং ছয় শতাধিক মানুষ আহত হন।
- উৎপত্তিস্থল: ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর মাধবদীতে, এবং এর কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠের মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে।
- ভবন নিরাপত্তা: এই কম্পনে ঢাকার বহু ভবনে ফাটল দেখা দেয় এবং বেশ কিছু স্থানে ভবন হেলে পড়ার ঘটনাও ঘটে। শনিবার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আরও তিন দফা কম্পন অনুভূত হলে রাজধানীবাসীর মধ্যে আতঙ্ক আরও তীব্র হয়।
আরও পড়ুন: ঢাকায় ৩০০ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত: রাজউক চেয়ারম্যান
এদিকে, একই দিন ভূমিকম্প প্রস্তুতি এবং করণীয় নিয়ে রাজধানীতে আয়োজিত এক সেমিনারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে 'ভূমিকম্প ঝুঁকি হ্রাসে প্রস্তুতি ও করণীয়' শীর্ষক সেমিনারে রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম জানান, ভূমিকম্পের পর ঢাকা মহানগরে ছোট-বড় ৩০০টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, সমন্বিতভাবে কাজ না করা গেলে ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতি সামলানো সম্ভব নয়। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
রাজউক চেয়ারম্যান ভবন নির্মাণ অনুমোদনের বিষয়ে সংস্থাটির দায়বদ্ধতা নিয়ে কথা বলেন।
তিনি স্পষ্ট করে জানান, রাজউকে যথাযথ নিয়ম মেনেই ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয় এবং অর্থের বিনিময়ে কোনো কাজ হয় না।
তিনি বলেন, রাজউক কাউকে প্ল্যান করে দেয় না। বাড়িওয়ালারাই ইঞ্জিনিয়ার বা আর্কিটেক্ট দিয়ে বাড়ির প্ল্যান করে রাজউকে জমা দেন এই শর্তে যে, রাজউকের নিয়ম মোতাবেক করবেন। পরবর্তীতে তারা সেটা না মানলে জরিমানা কিংবা শাস্তি সেই বাড়িওয়ালাদেরই দেওয়া উচিত। এর দায়ভার রাজউকের না।
তিনি আরও মন্তব্য করেন যে সিটি করপোরেশন, রাজউক ও ফায়ার সার্ভিস আলাদাভাবে কাজ করায় বর্তমানে সবকিছু ‘বিশৃঙ্খলাপূর্ণ’ অবস্থায় আছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সূত্রমতে, জরুরি বৈঠকে রাজধানীসহ সারাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসমূহের তালিকা, উদ্ধার সক্ষমতা বৃদ্ধি, জরুরি সাড়া-দান পরিকল্পনা (Emergency Response Plan), এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমন্বিত ও দ্রুত করণীয় বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এই আলোচনার মধ্য দিয়ে ভূমিকম্প-পরবর্তী ঝুঁকি মূল্যায়ন, ভবন নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কৌশল প্রণয়ন করা হবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








