সুমন ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ছবি: সংগৃহীত
হবিগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আলোচিত আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন এবং তার স্ত্রী ছাম্মী আক্তারের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত।
সোমবার (২৬ মে) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
দুদকের উপপরিচালক এ কে এম মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত অনুসন্ধান টিমের আবেদনে বলা হয়েছে, ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। অনুসন্ধানের সময় গোপন সূত্রে জানা গেছে, তিনি বিদেশে পলায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং তার মালিকানাধীন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। ফলে তার বিদেশ গমন রোধ করা না হলে চলমান তদন্ত কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছাড়াও একাধিক সহিংসতা, হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার ও রিমান্ডের ঘটনা রয়েছে। গত বছরের ২১ অক্টোবর মধ্যরাতে রাজধানীর মিরপুর-৬ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর পরদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকেন্দ্রিক এক মামলায় তাকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয় এবং এরপর তাকে আরও কয়েকটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
আরও পড়ুন: চিন্ময় দাসকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি
ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
হত্যাচেষ্টা মামলা: যুবদল নেতা হৃদয় মিয়াকে ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ করার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তাকে ৩ নম্বর আসামি করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, সুমনের নির্দেশেই হামলা চালানো হয়।
ছাত্র আন্দোলনকেন্দ্রিক সহিংসতা: ১৬ জুলাই শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তার নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্রসহ মিছিলের ওপর হামলা হয় বলে অভিযোগ।
গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর মামলা: খিলগাঁওয়ের বনশ্রী এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হলে, তার বাবা একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলি ও আহত: মিরপুর-১০ নম্বরে আন্দোলনকারী আদহাম বিন আমিনকে দুই হাঁটুতে গুলি করার ঘটনায় দায়ের হয় আরেকটি হত্যা চেষ্টা মামলা।
উল্লেখ্য, ব্যারিস্টার সুমন এক সময় দুর্নীতিবিরোধী, মানবাধিকার, সড়ক নিরাপত্তা ও জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সামাজিক মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনায় তার ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং দুর্নীতিসহ একাধিক মামলার আসামি হিসেবে তিনি বর্তমানে আইনের মুখোমুখি।
দুদকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তার স্ত্রী ছাম্মী আক্তারকেও তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে, যেহেতু তার নামে সম্পদ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই আদেশের মাধ্যমে আদালত দুর্নীতি ও সহিংসতার অভিযোগের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিচারিক প্রক্রিয়ার বাইরে যাওয়ার পথ রুদ্ধ করলো। এটি দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি