News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৬:৪৯, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিশোধ

ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিশোধ

ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পাল্টা সামরিক অভিযানে দেশটির দখলকৃত এলাকায় সফলভাবে একাধিক হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানোর দাবি করেছে ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী। 

ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি এবং গাজায় চলমান যুদ্ধের প্রতিশোধ হিসেবে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে তারা জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ‘আল-মাসিরাহ’ টিভির বরাতে ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি জানান, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিট ‘ফিলিস্তিন-২’ নামের একটি সুপারসনিক ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করে দখলকৃত নেগেভ অঞ্চলের একটি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানে। 

তিনি দাবি করেন, হামলাটি সফল হয়েছে এবং এতে বহু ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী আশ্রয়কেন্দ্রে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

এছাড়া ড্রোন ইউনিট দুটি পৃথক হামলা চালায়। এর মধ্যে দুটি ড্রোন ব্যবহৃত হয় এলাত (উম্ম আল-রাশরাশ) সংলগ্ন রামন বিমানবন্দরে এবং একটি ড্রোন নেগেভ অঞ্চলের একটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে।

সারি বলেন, এই হামলাগুলো গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও ইয়েমেনি ভূখণ্ডে বিমান হামলার প্রতিশোধ। তিনি দৃঢ়ভাবে জানান, ইয়েমেন ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকবে এবং যেকোনো ইসরায়েলি আগ্রাসনের জবাব দেওয়ার সক্ষমতা তাদের রয়েছে।

হুথি-নিয়ন্ত্রিত আনসারুল্লাহ আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল-আহনুমি বলেন, ইসরায়েলের দখলকৃত অঞ্চলে কোনো স্থানই নিরাপদ থাকবে না। তিনি সতর্ক করে বলেন, সানার তাহরির স্কয়ারে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে চালানো সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলা ভয়াবহ অপরাধ, যার জবাব দিতেই হবে।

তিনি আরও জানান, ইয়েমেনি প্রতিরোধ বাহিনী সামরিক ঘাঁটি, বিমানবন্দর, বসতি স্থাপনকারী কলোনি ও অন্যান্য সংবেদনশীল স্থাপনায় হামলা চালাবে। 

আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬৪ হাজার ৭০০ ছাড়াল

তার ভাষায়, শত্রুকে বুঝতে হবে—আমাদের জনগণের রক্ত মূল্যবান। প্রতিটি হত্যার জবাবে আরও শক্তিশালী হামলা হবে।

এর একদিন আগে, বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও উত্তরাঞ্চলীয় আল-জাওফ প্রদেশে একাধিক বিমান হামলা চালায়। এসব হামলায় অন্তত ৩৫ বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ১৩০ জনের বেশি আহত হন। ইয়েমেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সানার তাহরির পাড়ার বাড়িঘর, শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমের ৬০তম সড়কের একটি চিকিৎসাকেন্দ্র এবং আল-হাজম শহরের সরকারি ভবন লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়।

নাগরিক সুরক্ষা দল জানায়, হামলার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা এবং ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার অভিযানে তারা কাজ করছে। 

স্থানীয় সূত্র বলছে, ইসরায়েলি হামলায় ‘২৬ সেপ্টেম্বর’ ও ‘আল-ইয়েমেন’ দৈনিকের প্রধান কার্যালয় ধ্বংস হয়ে যায়, যেখানে কয়েকজন সাংবাদিক হতাহত হন।

জাতিসংঘ এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি জানায়, সাম্প্রতিক হামলায় তাদের ইয়েমেন কার্যালয়ের কাছাকাছি স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এর মাত্র কয়েক দিন আগে, ২৮ আগস্ট ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইয়েমেনের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ গালিব নাসের আল-রাওয়ি এবং আরও কয়েকজন মন্ত্রী নিহত হন।

গত দুই বছরে গাজা, লেবানন ও ইয়েমেনে অভিযানের সময় ইসরায়েল শত শত সাংবাদিককে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।

২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় গণহত্যার মতো আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে ইয়েমেন কৌশলগত সমুদ্র অবরোধ কার্যকর করে আসছে। এর মাধ্যমে ইসরায়েলে সামরিক রসদ সরবরাহ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। একইসাথে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গাজায় মানবিক সংকট নিরসনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

ইয়েমেনি বাহিনী স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজায় স্থল ও বিমান হামলা বন্ধ না করা পর্যন্ত তাদের পাল্টা অভিযান অব্যাহত থাকবে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর ২০২৩ থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি আগ্রাসনে নারী ও শিশুসহ অন্তত ৬৪ হাজার ৬৫৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়