News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৫:৩৮, ৪ এপ্রিল ২০২৫

চিকেন’স নেক নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত, ভারী অস্ত্র ও সেনা মোতায়েন

চিকেন’স নেক নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত, ভারী অস্ত্র ও সেনা মোতায়েন

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে দেশটির মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে রেখেছে ‘শিলিগুড়ি করিডর’।  অনেকটা মুরগির ঘাড়ের মতো বাঁকানো দেখায় বলে জায়গাটিকে অনেকে “চিকেন’স নেক” বলেও বর্ণনা করেন। 

সম্প্রতি এই করিডর নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। এর মধ্যেই ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার করেছে ভারত।

চীন সফরে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যের পর চিকেন’স নেকে ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও সেনা মোতায়েন করেছে ভারত। 

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। 

এতে বলা হয়, ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সরাসরি যোগাযোগের একমাত্র স্থলপথটি পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি যা চিকেন’স নেক হিসেবে পরিচিত। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার সাম্প্রতিক চীন সফরে গিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্য বা সেভেন সিস্টার্সকে ল্যান্ডলকড উল্লেখ করে বলেছিলেন, তাদের সমুদ্রের ব্যবহারের ক্ষেত্রেই বাংলাদেশই একমাত্র অভিভাবক। আর এর পরপরই চিকেন’স নেক অঞ্চলে ব্যাপক ভারী অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে। 

বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে দুই দিনের সফরে থাইল্যান্ডে গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ধারণা করা হচ্ছে, শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী  মোদির সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক হতে পারে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়, তাহলে গত বছরের আগস্টে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি হবে নরেন্দ্র মোদি এবং ড. ইউনূসের মধ্যে প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ। 

তবে এটি এমন সময়ে হচ্ছে যখন, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডরের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের এই সংকীর্ণ ভূমি উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোকে ভারতের বাকি অংশের সাথে সংযুক্ত করে এবং নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান এবং চীনের সাথে এর সীমানা রয়েছে। 

আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইলো বাংলাদেশ

বলা হচ্ছে, সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত এই গুরুত্বপূর্ণ করিডরটিকে রক্ষা করার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনী শিলিগুড়ি করিডোরকে তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা লাইন হিসেবে বর্ণনা করেছে। 

বাহিনীটি জানায়, উন্নত সামরিক প্রস্তুতির মাধ্যমে যেকোনো সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলা করতে পারে তারা প্রস্তুত।   

সম্প্রতি ভারতীয় সেনাপ্রধানের দেওয়া এক বিবৃতি চিকেন’স নেকের  নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের অবস্থান আরও সুস্পষ্ট করেছে। 

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘চিকেন’স নেক’ কোনো দুর্বল জায়গা নয়, বরং এটি ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক অঞ্চল। যেখান থেকে পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সৈন্যদের যেকোনো ধরনের হুমকির মুখে দ্রুত মোতায়েন করা সম্ভব। 

এই করিডরের কাছে সুকনায় ত্রিশক্তি কর্পসের সদর দফতর অবস্থিত, যা এই অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এই কর্পসটি রাফায়েল যুদ্ধবিমান, ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র এবং উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক বক্তব্য শিলিগুড়ি করিডরের নিরাপত্তার বিষয়ে ভারতের অবস্থানকে আরও জোরদার করেছে। 

তিনি জোর দিয়ে বলেন, চিকেন’স নেক ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক অঞ্চল, যেখানে যেকোনো হুমকির ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাহিনীকে দ্রুত মোতায়েন করা যেতে পারে।

বহু-স্তরযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা 

ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এই অঞ্চলে নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতীয় বিমানবাহিনী হাশিমারা বিমানঘাঁটিতে মিগ বিমানের পাশাপাশি রাফায়েল যুদ্ধবিমানের একটি স্কোয়াড্রন মোতায়েন করেছে। এছাড়াও, সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলায় করিডরে ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের একটি রেজিমেন্ট মোতায়েন করেছে ভারত। 

আকাশপথে যেকোনো অনুপ্রবেশ রোধ করার জন্য এই অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাও। ‘এমআরএসএএম’ এবং ‘আকাশ’ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও রয়েছে।

এ ছাড়া ত্রিশক্তি কর্পস প্রায়শই যুদ্ধ মহড়া পরিচালনা করে আসছে, যার মধ্যে রয়েছে টি-৯০ ট্যাঙ্কের সাথে লাইভ-ফায়ার ড্রিল, যাতে অপারেশনাল প্রস্তুতি বৃদ্ধি পায়।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়