News Bangladesh

তথ্য-প্রযুক্তি ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৮:০১, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিদেশি মালিকানার নিয়ন্ত্রণে নতুন টেলিকম নীতি

বিদেশি মালিকানার নিয়ন্ত্রণে নতুন টেলিকম নীতি

ফাইল ছবি

বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ খাতে বিদেশি মালিকানা সীমিত করে এবং লাইসেন্স কাঠামোয় বড় পরিবর্তন এনে ‘টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক অ্যান্ড লাইসেন্সিং নীতিমালা ২০২৫’ কার্যকর করেছে সরকার। 

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের টেলিকম শাখা থেকে এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।

এই নীতিমালায় মোবাইল অপারেটরদের বিদেশি মালিকানা সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। 

ফলে, বাংলালিংককে ১৫ শতাংশ, এবং রবি ও গ্রামীণফোনকে যথাক্রমে ৫ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে। এই শেয়ার দেশীয় উদ্যোক্তা বা শেয়ারবাজারে বিক্রি করতে হবে।

এর আগে, গত ৪ সেপ্টেম্বর উপদেষ্টা পরিষদ নীতিমালাটি অনুমোদন দেয়। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, পুরনো আইএলডিটিএস নীতির জটিলতা, দুর্বল কাভারেজ ও নিম্নমানের সেবা খাতের অগ্রগতিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। নতুন নীতিমালায় এসব কাটিয়ে নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী ভয়েস ও ডেটা সেবা নিশ্চিত করা হবে।

এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছে টেলিনর, ভিওন এবং আজিয়াটা গ্রুপ। চিঠিতে তারা উল্লেখ করেছেন যে, বিদেশি মালিকানা সীমিত করার পদক্ষেপ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে।

বাংলালিংকও এই নীতিমালাকে সমর্থন করেনি। তারা জানিয়েছে, বাধ্যতামূলক মালিকানা শর্ত বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে পারে।

বর্তমানে:

  • গ্রামীণফোন: নরওয়ের টেলিনর ৫৫.৮% শেয়ার, বাকি দেশীয় উদ্যোক্তা ও শেয়ারবাজারে।
  • রবি: মালয়েশিয়ার আজিয়াটা গ্রুপের হাতে ৯০%, পুঁজিবাজারে ১০%।
  • বাংলালিংক: শতভাগ মালিকানা দুবাইভিত্তিক ভিওনের কাছে।

রবির প্রধান করপোরেট ও রেগুলেটরি কর্মকর্তা শাহেদ আলম বলেন, এখন কেবল নীতিমালা হয়েছে। কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তাই মন্তব্য করা সমীচীন নয়।

আরও পড়ুন: ‘গ্লোবাল টপ এমপ্লয়ার’ সার্টিফিকেশন পেল বাংলালিংক

অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ সীমা

  • টাওয়ার ও ফাইবার অবকাঠামো কোম্পানিতে: সর্বোচ্চ ৬৫% বিদেশি মালিকানা।
  • আন্তর্জাতিক সংযোগ সেবায়: সর্বোচ্চ ৪৯%।

লাইসেন্স কাঠামোয় পরিবর্তন দীর্ঘদিনের জটিল লাইসেন্স ব্যবস্থা ভেঙে চারটি বড় ক্যাটাগরি করা হয়েছে:

  • অ্যাক্সেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার
  • ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও কানেক্টিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার
  • ইন্টারন্যাশনাল কানেক্টিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার
  • নন-টেরেস্ট্রিয়াল নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার

এছাড়া ‘টেলিকম-এনাবলড সার্ভিস প্রোভাইডার’ নামে আলাদা তালিকাভুক্তি চালু হচ্ছে।

ভোক্তা ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ

  • অপারেটরদের মধ্যে অবকাঠামো ভাগাভাগি বাধ্যতামূলক।
  • তিন বছরের মধ্যে ৮০% টাওয়ারকে ফাইবার নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে হবে।
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও দুর্গম এলাকায় নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ।
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সাইবার নিরাপত্তা জোরদার।

সরকারের দাবি, ২০১০ সালের আইএলডিটিএস নীতি সময়ের সঙ্গে অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। একাধিক স্তরের লাইসেন্স জটিলতা, অবকাঠামো ভাগাভাগির অভাব, অব্যবহৃত ফাইবার নেটওয়ার্ক, দুর্বল কভারেজ এবং নিম্নমানের সেবা খাতের অগ্রযাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। নতুন নীতিমালায় এসব সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী ভয়েস ও ডেটা সেবা নিশ্চিত করা হবে।

নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য তিন ধাপের রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে সব অপারেটরকে বাধ্যতামূলকভাবে নতুন কাঠামোয় রূপান্তর করতে হবে।

দেশীয় উদ্যোক্তারা নীতিমালার বিরোধিতা করেছেন। তাদের অভিযোগ, ছোট ও মাঝারি কোম্পানিকে বঞ্চিত করে বড় বিদেশি অপারেটরের জন্য পথ খুলে দেওয়া হচ্ছে। এতে জাতীয় স্বার্থ ও ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে।

অন্যদিকে সরকারের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলছেন, নতুন নীতি প্রতিযোগিতা বাড়াবে, একক নিয়ন্ত্রণ ভাঙবে এবং সরকারের রাজস্ব সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। তার দাবি, এতে গ্রাহকরা কম খরচে উন্নত সেবা পাবেন, আবার দেশীয় উদ্যোক্তাদেরও উদ্ভাবনের সুযোগ তৈরি হবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়