News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:০০, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু ঝুঁকিতে ২০–৩০ বছর বয়সীরা

সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু ঝুঁকিতে ২০–৩০ বছর বয়সীরা

ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে দেখা গেছে। এরপরই সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুরা।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়। 

ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি) শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হালিমুর রশীদ, এবং পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান।

ডেথ রিভিউ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ঢাকা ও বরগুনা জেলায় ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৩ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১৪ জন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ১২ জন মারা গেছেন।

অধ্যাপক ডা. হালিমুর রশীদ জানান, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫৭ জন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৭৮ জন এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ৫ জন মারা গেছেন। বাকিরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ৭২ ঘণ্টা পর মারা গেছেন। মারা যাওয়া রোগীর ৪০ শতাংশ অন্য কোনো রোগে ভুগছিলেন।

মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, যত ব্যবস্থা নেই, জনগণ সচেতন না হলে ডেঙ্গু থেকে মুক্তি পাওয়া দুষ্কর। গত বছরের তুলনায় আক্রান্ত বেড়েছে, তবে মৃত্যু সংখ্যা কমেছে।

তিনি আরও জানান, ডেঙ্গু সিজনাল রোগ। বর্ষার সময় প্রকোপ বেড়ে যায়। রোগ নির্ণয়ে দেরি হলে মৃত্যু বৃদ্ধি পায় এবং রোগীর ভোগান্তি বাড়ে। জ্বর হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো গুরুত্বপূর্ণ।

ডা. জাফর বলেন, ডেঙ্গুতে নতুন কোনো চিকিৎসা নেই। চিকনগুনিয়ার সঙ্গে তুলনায়, ডেঙ্গুর উপসর্গ আছে, চিকনগুনিয়ায় নেই।

ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, ডেঙ্গু কোনো জটিল রোগ নয়। আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে। জ্বর শুরু হলে পরীক্ষা করতে হবে। হাসপাতালগুলো WHO গাইডলাইন অনুযায়ী আধুনিক চিকিৎসা প্রদান করছে।

তিনি আরও জানালেন, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাকে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় পর্যাপ্ত প্লাইড সরবরাহ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১২ জনের মৃত্যু

স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, মৃতদের মধ্যে প্রধান মৃত্যু কারণ ডেঙ্গু শক সিন্ড্রম, দ্বিতীয় কারণ এক্সপান্ডেড ডেঙ্গু সিন্ড্রম। গুরুতর রোগীকে হাসপাতালে দেরি করে আনার কারণে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ বছর মশাবাহিত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ১৭৯ জন মারা গেছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৪১,৮৩১ জনে দাঁড়িয়েছে।

ডেথ রিভিউ অনুযায়ী, মৃতদের অধিকাংশ ৩–৬ দিন জ্বরে ভুগার পর হাসপাতালে এসেছে। ১২৪ জনের মধ্যে: ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৬৬ জন, ২৪–৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ জন, ৪৮–৭২ ঘণ্টার মধ্যে ৫ জন, এবং ৭২ ঘণ্টা পর ২৫ জন মারা গেছেন।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০–৩০ বছর: ১৯ জন, ১০ বছরের কম: ১৬ জন, ১০–২০ বছর: ১০ জন, ৩০–৪০ বছর: ১৫ জন, ৪০–৫০ বছর: ১৬ জন, ৫০–৬০ বছর: ১৫ জন, ৬০–৭০ বছর: ১৩ জন, ৭০–৮০ বছর: ১ জন, ৮০–৯০ বছর: ২ জন।

এই চিত্র ১৭৯ জন মৃতের মধ্যে মিলেছে। আক্রান্তের সংখ্যাও ২০–৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে সর্বাধিক, ৪৩ জন।

ডা. হালিমুর রশিদ বলেন, কনিষ্ঠ বয়সের মানুষ জ্বরকে গুরুত্ব দেয় না। শরীর প্রথমে শক্তিশালী থাকে। হাসপাতালে দেরিতে আসলে অনেকেই শকে চলে যায়। তাই তরুণদের মৃত্যু হার বেশি। জ্বর হলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

জেলাভিত্তিক মৃত্যুর মধ্যে, ঢাকায় ১৭ জন, বরগুনায় ১২ জন মারা গেছেন। হাসপাতালভিত্তিক, ঢাকা মেডিকেল কলেজে ৩৩ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজে যথাক্রমে ১২ জন মারা গেছেন।

লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণে মৃতদের মধ্যে পুরুষ ৬০ জন, নারী ৫৩ জন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমদ চৌধুরী, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. শেখ ছাইদুল হক এবং পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়