সবুজ-সমুদ্র বান্দরবানে ঈদের আমেজ
বান্দরবান: ঈদ শেষ হলেও বান্দরবানের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে চলছে ঈদের আমেজ। ভারী বৃষ্টিপাত উপেক্ষা করে ঈদের আমেজে যোগ দিতে প্রকৃতির টানে পর্যটকরা ছুটে এসেছেন বান্দরবানে। ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠেছে পাহাড়ী কন্যা বান্দরবান। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে এসেছেন পর্যটকরা। পাহাড়, ঝিরিঝর্ণা আর সবুজ শ্যামল প্রকৃতির কাছে কিছুটা সময় ব্যয় করতে। বান্দরবানের নয়নাবিরাম বিস্তৃত পাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছেন পর্যটকরা। ঈদের ছুটিতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদচারণায় এভাবেই মুখরিত হয়ে ওঠে সবুজে ঘেরা বান্দরবান।
বান্দরবান হোটেল মালিক সমিতির সেক্রেটারী সিরাজুল ইসলাম জানান, “থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য ঈদের আগে থেকেই হোটেল-মোটেলগুলো বুক করে রেখেছেন পর্যটকরা। প্রতি বছর ঈদ মওসুমে বান্দরবানে কয়েক হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে। তবে বৃষ্টিপাত থাকায় এবারের ঈদে পর্যটকের সংখ্যা অনেকটা কম হলেও হোটেলের অধিকাংশ সিট বুকিং হয়েছে।”
বান্দরবানের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, “পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয়েছে অতিরিক্ত চেকপোস্ট।”
পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে রয়েছে অসংখ্য পর্যটনকেন্দ্র। জেলা সদরে রয়েছে মেঘলা, নীলাচল, প্রান্তিক লেক, স্বর্ণ জাদি (লোকমুখে স্বর্ণ মন্দির হিসেবে পরিচিত) না দেখলে সৌন্দর্য দেখা অপূর্ণ থেকে যায় বলে মনে করেন অনেকে। এছাড়া এখানে রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ বিজয়, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেউক্রাডংসহ অসংখ্য পাহাড়, রয়েছে বাংলার দার্জিলিংখ্যাত চিম্বুক, নীলগিরি। যেখানে অনায়াসে মেঘের ছোঁয়া পাওয়া যায়। এছাড়াও রিঝুক ঝর্ণা নিজস্ব গতিতে সব মওসুমেই থাকে সচল।
নীলাচলে দাঁড়ালে পাহাড় আর আকাশের মিতালী, দূরে সবুজ বন কিংবা চট্টগ্রাম সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য আবছা আবছা উপভোগ করা যায়। পাহাড় থেকে শহরের সৌন্দর্য বিমোহিত করে পর্যটকদের। ‘বৌদ্ধ ধাতু জাদি’ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান হলেও পাহাড়ের ওপর সুন্দর কারুকার্য ও স্বর্ণাভরণে তৈরি হওয়ায় এটিও পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্পট হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে।
বান্দরবান চিম্বুক সড়কের পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে শৈলপ্রপাত ঝর্ণা। বান্দরবান-থানচি সড়কের ২৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে চিম্বুক পাহাড়। একই সড়কের ৫০কিলোমিটার দূরে গড়ে ওঠেছে বাংলার দার্জিলিংখ্যাত নীলগিরি। সেনাবাহিনী পরিচালিত নীলগিরিতে দাঁড়ালে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সাংগু নদীর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
বান্দরবানের রুমা উপজেলায় রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ বিজয়। এটি তাজিংডং নামেই পরিচিত। রুমা উপজেলা থেকে ৩০ কিলোমিটার পাহাড়ি রাস্তা অতিক্রম করে যেতে হয় তাজিংডংয়ে। পাশেই রয়েছে দেশের দ্বিতীয় পর্বতচূড়া কেউক্রাডং। এছাড়া একই সড়কে ১৭ কিলোমিটার গেলে দেখা যায় কিংবদন্তী বগালেক। এটি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
এছাড়াও এই জেলায় মারমা, ত্রিপুরা, মুরুং, বম, তঞ্চঙ্গ্যা, খুমি, খেয়াং, পাংখোয়া, চাকমা, চাক, লুসাইসহ ১২টি আদিবাসী সম্প্রদায় বসবাস করে। দেশের অন্য কোনো জেলায় এতো আদিবাসীর বসতি আর নেই। আদিবাসীদের বৈচিত্রময় জীবনচিত্র মানুষের মনকে উৎফুল্ল করে তোলে।
পাহাড়ের পর পাহাড়, দিগন্ত জোড়া আকাশের সঙ্গে মিশে সৃষ্টি হয়েছে এক অনন্য পাহাড়ি সমুদ্র। বান্দরবানে যেদিকে চোখ যায় দেখা মিলবে সবুজ বন আর চড়াই-উৎড়াইয়ের ঢেউ।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এএইচকে
নিউজবাংলাদেশ.কম








