News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৬:০৮, ১৬ আগস্ট ২০১৫
আপডেট: ১০:২৩, ২২ জুলাই ২০২০

গাইবান্ধায় বাঁশের সামগ্রী বানাচ্ছে ৫ শতাধিক পরিবার

গাইবান্ধায় বাঁশের সামগ্রী বানাচ্ছে ৫ শতাধিক পরিবার

গাইবান্ধা: কেউ বানাচ্ছেন চাটাই, কেউ ডালী, কেউ কুলা আবার কেউ চালন-মাদুর। কেউবা বানাচ্ছেন ডোল-পলো অথবা কেউ কেউ বানাচ্ছেন খেলনাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। বিভিন্ন আকার ও শৈলীতে কাটা নতুন বাঁশের সুগন্ধ ও সোনালী রং সব মিলিয়ে যেন এক ভিন্ন জগত। পুরো গ্রামটিতে ঘুরলে এমন নান্দনিক দৃশ্য চোখে পড়ে।

দুর্গাপুর গ্রামে রোববার সকালে সরজমিনে দেখা গেল এই নান্দনিক দৃশ্য। গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের ভাতগ্রাম ইউনিয়নে গ্রামটির অবস্থান। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার তেমন উয়ন্নয় ঘটেনি এখানে। তবে এ গ্রামের অনেক পরিবার বাঙালির ঐতিহ্যের সাথে যুক্ত বাঁশের সামগ্রী তৈরীতে নিপুণশিল্পী। কেবল তা-ই নয়, গ্রামটিতে বসবাস করা পাঁচ শতাধিক পরিবারের বৃহৎ অংশেরই পেশা এই ঐতিহ্যবাহী বাঁশশিল্প।

দুর্গাপুর গ্রামবাসীর তৈরী চাটাই স্থানীয় পাইকাররা ক্রয় করে। পরে তা বিভিন্ন হাট-বাজারসহ নানা স্থানে বিক্রি করা হয়। কখনো কখনো তা খুচরাভাবেও বিক্রি করা হয়। আর এই পাইকারী ও খুচরাভাবে বিক্রি করা টাকা দিয়ে অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষের চেয়ে বেশ ভালভাবেই জীবনযাপন করেন দুর্গাপুরের বাঁশশিল্পের কারিগররা।

এ গ্রামে বাড়ির উঠানে, কিংবা বাড়ির উপর দিয়ে যাওয়া কাঁচা রাস্তা, অথবা বাড়ির পাশে ফাঁকা জায়গায় বসে বাঁশের নানা উপকরণ তৈরী করেন পরিবারগুলো। কাজের ফাঁকে ফাঁকে দলগতভাবে খোশগল্প ও মোবাইলে গানও শোনেন কেউ কেউ। গ্রামটির প্রায় বাড়িতেই ঘুরে-ফিরে দেখা যায়, এই গ্রামে এমন কোনো বাড়ি পাওয়া মুশকিল যেখানে বাঁশের উপকরণ তৈরী করা হয় না।

বাঁশের কাজের জন্য দরকারী বাঁশ সংগ্রহে সকালেই অনেককে বের হয়ে পড়তে হয়। এর মধ্যে বাকীরা শুরু করেন বাঁশ কাটা, চাঁছা, চাটাই বাঁধা, শুকানো ও বিভিন্ন ধরনের উপকরণ তৈরীর কাজ। এ দিকে সংসারের রান্নার কাজ শেষ করে নারীরাও বসেন বাঁশের উপকরণ তৈরীর কাজে। ছেলে-মেয়েরাও সাধ্যমতো সহযোগিতা করে এ কাজে।

বাঁশের কারিগর আরকার মিয়া জানান, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তিনি এ কাজ করেন। এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় দিনের আলো থাকতেই তাদের কাজ সাড়তে হয়। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থাকলে আরও বেশী কাজ করা সম্ভব হতো বলেও তিনি জানান।

বাড়ির উঠানে বসে কাজ করছিলেন বাঁশের কারিগর রুমি বেগম। তিনি জানালেন, আগে সহজে বাঁশ সংগ্রহ করা যেতো। এখন বাঁশের সংকটসহ দামও বেড়েছে। সে কারণে লাভ কমে গেছে।

বাঁশের আরেক কারিগর আকবর আলী কিছুটা অনুযোগের সুরে জানান, রাস্তা-ঘাঁট খারাপ থাকায় বাঁশের  তৈরী জিনিসপত্র সহজে অন্য এলাকায় নিয়ে যাওয়া কষ্ট হওয়ায় পাইকাররা কম আসেন।

গ্রামের ফুয়াদ আমিন জানান, বাঙালির ঐতিহ্য, নান্দনিক শৈলী ও পরিবেশবান্ধব এই শিল্পটি প্লাস্টিকপণ্যের কারণে হারিয়ে যাওয়ার আশংকা করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু গ্রাম ও মফস্বল-শহরগুলোতে বিশেষত এই পণ্যগুলোর চাহিদা ও আকর্ষণ আজও অমলীন।

এছাড়াও আবেদ আলী, মোকছেদ মিয়া ও মরিয়ম বেগম বলেন, একটি চাটাই তৈরীতে খরচ হয় একশ থেকে একশ ২৫ টাকা, যার বিক্রয় মূল্য পৌনে দুইশ থেকে দুইশ টাকা। একটি ডালি তৈরীতে খরচ হয় ২০ টাকা, যার বিক্রি মূল্য ৩৫-৪০ টাকা, একটি পলো তৈরীতে খরচ হয় একশ ৫০ টাকা, যার বিক্রি মূল্য দুই থেকে আড়াইশ টাকা। এসব পণ্য তৈরীতে ওই এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারদের মধ্যে স্বচ্ছলাতা ফিরে এসেছে বলেও তারা জানান। তবে তাদের অভিযোগ, কোনো এনজিও কিংবা সরকারি আর্থিক সহায়তা পেলে এ পেশায় স্বাবলম্বি হওয়া সম্ভব।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এএইচকে

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়