এসএসসি পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ

ছবি: সংগৃহীত
২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া হাজার হাজার শিক্ষার্থী দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ তাদের পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফল জানতে পারবে। ফলাফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে অনেকের আশা জেগেছে পরীক্ষার নম্বর সংশোধনের, আবার কেউবা নতুন করে নিশ্চিত হবেন তাদের অর্জিত ফলের সঠিকতায়।
রবিবার (১০ আগস্ট) সকাল ১০টায় দেশের ৯টি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ করা হবে।
পরীক্ষার্থীরা তাদের রোল নম্বর ব্যবহার করে অনলাইনে ফলাফল দেখতে পারবে।
গত ১১ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত টেলিটক মোবাইলের মাধ্যমে আবেদন নেওয়া হয়েছিল, যেখানে প্রতি বিষয়ে ১৫০ টাকা ফি দিয়ে রেকর্ডসংখ্যক শিক্ষার্থী পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছেন।
এবারে রেকর্ডসংখ্যক শিক্ষার্থী পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছে।
শিক্ষা বোর্ডের তথ্যমতে, এবার মোট ৯২ হাজার ৮৬৩ জন শিক্ষার্থী পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছেন, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ২১ হাজার বেশি। পুনঃমূল্যায়নের জন্য মোট চ্যালেঞ্জকৃত খাতার সংখ্যা দুই লাখ ২৩ হাজার ৬৬৪টি, যা আগের বছরের থেকে প্রায় ৪০ হাজার বেশি।
এই ঊর্ধ্বগতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফলাফল সংশোধনের প্রতি আগ্রহ ও সচেতনতা বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন বিষয়ে পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন এসেছে, যার মধ্যে গণিত সর্বোচ্চ।
বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গণিত বিষয়ের খাতার জন্য সবচেয়ে বেশি — ৪২ হাজার ৯৩৬টি খাতায় পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন জমা পড়েছে। ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে ১৯ হাজার ৬৮৮টি করে খাতার জন্য আবেদন আসে। পদার্থবিজ্ঞানে ১৬ হাজার ২৩৩টি, বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে ১৩ হাজার ৫৫৮টি করে খাতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
অন্যদিকে চারু ও কারুকলা বিষয়ের খাতার জন্য মাত্র ৬টি পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন এসেছে, যা সবচেয়ে কম।
পুনঃনিরীক্ষণের সময় কোনো খাতার পূনর্মূল্যায়ন বা পুনঃপরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় না। বরং নম্বর সঠিকভাবে যোগ হয়েছে কি না, কোনো প্রশ্নের নম্বর বাদ পড়ে গেছে কি না এবং ওএমআর শিটে নম্বর সঠিকভাবে উঠেছে কি না—এসব যাচাই করা হয়।
এই প্রক্রিয়ায় যদি কোনো ভুল পাওয়া যায়, তবে সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা ফলাফল সংশোধনের সুযোগ পায় এবং তাদের নম্বরের সত্যতা নিশ্চিত হয়।
শিক্ষা বোর্ডের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সারাদেশে মোট ৬ লাখ ৬৬০ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। এর মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ৩ লাখ ২৪ হাজার ৭১৬ এবং ছাত্রী ২ লাখ ৭৫ হাজার ৯৪৪ জন।
আরও পড়ুন: ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি আবেদনের সময়সীমা দুই দিন বাড়লো
অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর এই বিশাল সংখ্যা শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে আরও মনোযোগী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। শিক্ষাবোর্ড ও শিক্ষা প্রশাসনের কাছে এটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা ঢাকার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডসহ দেশের সকল বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সহজেই তাদের ফলাফল দেখতে পারবেন। ফলাফল জানার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন হবে তাদের রোল নম্বর।
মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন শিক্ষার্থীরাও সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট থেকে পুনঃনিরীক্ষণের ফল দেখতে পারবেন।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার জানান, পুনঃনিরীক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নম্বরের সঠিকতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ এবং দক্ষ করার জন্য শিক্ষা বোর্ড নিরলসভাবে কাজ করছে।
তিনি বলেন, ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা যদি কোনো অসঙ্গতি দেখতে পান, তাহলে নির্দিষ্ট সময়ে বোর্ডের অফিসিয়াল মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারবেন।
আবেদন ও ফলাফল বিশ্লেষণ থেকে স্পষ্ট যে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফলাফল সংশোধনের ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারা ফলাফলের প্রতি অধিক দায়িত্বশীল।
তবে পুনঃনিরীক্ষণের পরও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই অকৃতকার্য হওয়ার কারণে শিক্ষাব্যবস্থার নানা দুর্বলতা ও শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
অতএব শিক্ষা কর্তৃপক্ষের উচিত হবে একযোগে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন এবং ফলাফল সংশোধনে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতা বজায় রাখা।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি