News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৭:০৯, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ডাকসু নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা

ডাকসু নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ ছয় বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও অনুষ্ঠিত হলো বহুল প্রতীক্ষিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। 

মঙ্গলবার (০৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলে। 

দিনের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে এসে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। বিকেল ৪টার পরও যারা কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন, তাদের ভোট গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। 

নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, সারাদিনের ভোটগ্রহণ নিরবিচ্ছিন্ন ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। বড় কোনো সংঘাত বা অনিয়মের অভিযোগ ওঠেনি, ফলে উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হয় এই নির্বাচন।

এবারের নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ২০ হাজার ৯১৫ এবং ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯৫৯ জন। ভোট গ্রহণ হয় ৮টি কেন্দ্রে ৮১০টি বুথে। একজন শিক্ষার্থীকে এবার মোট ৪১টি ভোট দিতে হয়েছে। 

ডাকসুর ২৮টি পদ এবং ১৮টি হল সংসদের ২৩৪টি পদ মিলিয়ে বিপুল সংখ্যক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। 

২৮টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ৪৭১ জন প্রার্থী। এর মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে লড়েছেন ৪৫ জন, আর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১৯ জন। 

অন্যদিকে ১৮টি হলে মোট ১ হাজার ৩৫ জন প্রার্থী লড়াই করেছেন ২৩৪টি পদের জন্য।

ভোটগ্রহণ পদ্ধতিতে ছিল নতুনত্ব। ডাকসুর জন্য ছয় পাতার ওএমআর ব্যালট এবং হল সংসদের জন্য এক পাতার ব্যালট ব্যবহার করা হয়েছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য রাখা হয়েছিল ব্রেইল ব্যালটের ব্যবস্থা। ভোট শেষে গণনা করা হচ্ছে আধুনিক ১৪টি গণনা মেশিনে। ফলাফল ঘোষণা করা হবে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন জানিয়েছে, ভোটগণনার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সিনেট ভবনে এলইডি স্ক্রিনে সরাসরি ফলাফল দেখানো হচ্ছে।

সারাদিন বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটদানের হার ছিল চোখে পড়ার মতো। টিএসসি ভোটকেন্দ্রে বেলা দেড়টা পর্যন্ত মোট ভোটারের প্রায় ৫৮ শতাংশ ভোট পড়ে। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৫ হাজার ৬৬৫ জন, যাদের মধ্যে রোকেয়া হলের ছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 

রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, নারী ভোটাররা উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে নির্বিঘ্নে ভোট দিয়েছেন। শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রে আড়াইটার মধ্যে ৭৮ শতাংশ ভোট সম্পন্ন হয়। জগন্নাথ হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ও এস এম হলের শিক্ষার্থীরা এখানে ভোট দিয়েছেন। 

আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে পোলিং অফিসার প্রত্যাহার

আলাদা আলাদা হিসাবে দেখা যায়, জগন্নাথ হলে ৭৭ শতাংশ, জহুরুল হক হলে ৮০ শতাংশ এবং এস এম হলে ৭২ শতাংশ ভোট পড়েছে।

সিনেট ভবন কেন্দ্রেও ছিল ব্যাপক সাড়া। তিনটি আলাদা বুথে ভোট অনুষ্ঠিত হয়—ডাইনিং রুম, সেমিনার রুম ও অ্যালামনাই ফ্লোর। মোট ভোটার ছিল ৪ হাজার ৮৩৫ জন। এর মধ্যে আড়াইটার মধ্যে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী ভোট দেন, যা ৮২ শতাংশেরও বেশি। বিজয় একাত্তর হলে ১ হাজার ৮০০ ভোট, মুহসীন হলে ১ হাজার ১০০ ভোট এবং স্যার এ এফ রহমান হলে ১ হাজার ১০০ ভোট পড়েছে। 

অন্যদিকে উদয়ন স্কুল কেন্দ্রেও একই সময়ে চারটি হলের শিক্ষার্থীরা গড়ে ৮০ শতাংশ ভোট প্রদান করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বিকেল ৩টার দিকে সাংবাদিকদের জানান, তখন পর্যন্ত বিভিন্ন কেন্দ্রে ৭০ শতাংশেরও বেশি ভোট পড়েছে। 

তিনি দাবি করেন, নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট সম্পন্ন হয়েছে। 

সহ–উপাচার্য অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা সিনেট ভবন কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে বলেন, শিক্ষার্থীরা আনন্দঘন পরিবেশে ভোট দিচ্ছেন এবং প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ভোট পড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।

এবারের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে নানা রাজনৈতিক ও স্বতন্ত্র প্যানেল। 

উল্লেখযোগ্য প্যানেলগুলোর মধ্যে ছিল ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট, বামপন্থি সংগঠনগুলোর ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’, ছাত্র ফেডারেশন সমর্থিত ‘বিনির্মাণ পর্ষদ’, সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ, উমামা ফাতেমা নেতৃত্বাধীন ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের প্যানেল, ছাত্র অধিকার পরিষদের ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ এবং ‘অপরাজেয় ৭১–অদম্য ২৪’।

ক্যাম্পাসে কোনো একক ছাত্র সংগঠনের আধিপত্য না থাকায় এবারের নির্বাচনকে ভিন্নধর্মী মনে করছেন বিশ্লেষকরা। 

তারা মনে করেন, এই নির্বাচনের ফলাফল ভবিষ্যৎ ছাত্ররাজনীতির জন্য একটি নতুন ধারা তৈরি করবে।

সব মিলিয়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮তম ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন একটি শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়েছে। বিপুল সংখ্যক ভোটারের অংশগ্রহণ, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের সক্রিয় উপস্থিতি, নির্বাচনের গুরুত্ব ও সাফল্যকে আরও উজ্জ্বল করেছে। এখন সবার দৃষ্টি ফলাফল ঘোষণার দিকে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়