News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৩:৩৮, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রিজার্ভ চুরির মামলায় আরসিবিসির ৮১ মিলিয়ন ডলার বাজেয়াপ্ত

রিজার্ভ চুরির মামলায় আরসিবিসির ৮১ মিলিয়ন ডলার বাজেয়াপ্ত

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি—২০১৬ সালের রিজার্ভ চুরি মামলায় বড় অগ্রগতি হয়েছে। ফিলিপাইনের আদালতের নির্দেশে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) অ্যাকাউন্টে থাকা ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার (৮১ মিলিয়ন) বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। 

সংস্থাটির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, আদালতের মাধ্যমে বাজেয়াপ্ত অর্থ দেশে ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিকেলে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ।

২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে অজ্ঞাতনামা হ্যাকাররা নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে। এ জন্য ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠানো হয়।

এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় একটি ভুয়া এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তরের চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে বানান ভুল ধরা পড়ায় সন্দেহ সৃষ্টি হয় এবং শেষ মুহূর্তে সেই অর্থ আটকে যায়।

বাকি ৮১ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয় ফিলিপাইনের মাকাতি সিটির আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখায়। ভুয়া তথ্য দিয়ে খোলা চারটি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়, যা দ্রুত তুলে নিয়ে ফিলরেম মানি রেমিটেন্স কোম্পানির মাধ্যমে ফিলিপাইনি মুদ্রা পেসো আকারে তিনটি ক্যাসিনোতে পাঠানো হয়।

চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ সরকার ক্যাসিনোর এক মালিকের কাছ থেকে উদ্ধার করে দেশে ফেরত এনেছিল। তবে বাকি অর্থের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না, কারণ জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে অর্থ শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছে তা চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ে।

এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০ সালের ২৭ মে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের আদালতে আরসিবিসি ও ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলায় অর্থ রূপান্তর, চুরি, আত্মসাৎ, জালিয়াতি এবং এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সহায়তা বা প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়।

গতবছর ফেব্রুয়ারিতে নিউইয়র্ক আদালত মামলাটি চালিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেয়। তবে ব্যক্তিগত এখতিয়ার না থাকায় চারজন বিবাদীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। 

মামলায় বলা হয়, হ্যাকাররা ‘নেস্টেগ’ ও ‘ম্যাকট্রাক’ নামের ম্যালওয়্যার পাঠিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে। পরে অর্থ নিউইয়র্ক ফেড থেকে সরিয়ে ফিলিপাইনের আরসিবিসি অ্যাকাউন্টে নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: সমস্যাগ্রস্ত পাঁচ ব্যাংক একীভূতের খবরে হতাশা-উদ্বেগ

মামলার নথি অনুসারে, অ্যাকাউন্টগুলোর ওপর আরসিবিসি এবং এর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল। কী ধরনের অপরাধ হচ্ছে জেনেও অ্যাকাউন্ট খোলা, বিপুল অঙ্কের অর্থ স্থানান্তর ও পরে অ্যাকাউন্ট বন্ধের সুযোগ করে দেন তারা।

ফিলিপাইনের সিনেট রিজার্ভ চুরি নিয়ে তদন্ত শুরু করে। আরসিবিসি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের জুপিটার স্ট্রিট শাখার ম্যানেজার মায়া সান্তোস দেগিতোকে বরখাস্ত করা হয়।

পরে ফিলিপাইনের আদালত ২০১৯ সালে দেগিতোকে মুদ্রাপাচারের আট দফা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। 

এদিকে, ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা পাচার ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় আরসিবিসিকে ১ কোটি ৯১ লাখ ডলার জরিমানা করে।

রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর দেশে তীব্র সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান। বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে বড় ধরনের রদবদল হয়।

বাংলাদেশে ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা। মামলাটি দায়ের করা হয় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ (সংশোধনী ২০১৫), তথ্য ও প্রযুক্তি আইন-২০০৬ এবং ফৌজদারি আইন অনুযায়ী।

মামলার তদন্তভার পায় সিআইডি। তবে নয় বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশি মামলায় এখনও আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান বলেন, আমাদের আদালত নির্দেশ দিয়েছেন। পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।

সংস্থার একটি সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলে ফিলিপাইনে বাজেয়াপ্ত অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে জমা দেওয়া হবে।

সিআইডি বলছে, বাজেয়াপ্ত হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামো ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি রিজার্ভ চুরির মামলায় অর্থ উদ্ধারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় মাইলফলক।

২০১৬ সালের সাইবার জালিয়াতি বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারে বছরের পর বছর লড়াইয়ের পর এবার আদালতের মাধ্যমে বাজেয়াপ্ত হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার ফেরত আসার পথে। এই অর্থ দেশে ফেরত এলে তা হবে রিজার্ভ চুরির মামলায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়