ইউরোপে বাংলাদেশি পোশাকের জয়যাত্রা: এক দশকে প্রবৃদ্ধি ৫৮%

ফাইল ছবি
গত এক দশকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে ৫৮ শতাংশেরও বেশি হয়েছে।
ইউরোপের পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে যেখানে বাংলাদেশ থেকে ইইউতে পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ১১.৫৪ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের, ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮.২৮ বিলিয়ন ইউরোতে। একই সময়ে ইউরোপের সামগ্রিক পোশাক আমদানি বেড়েছে মাত্র ২০.৪৭ শতাংশ।
এই প্রবণতা স্পষ্টভাবে নির্দেশ করছে, ইউরোপীয় বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা বেড়েছে এবং দেশটি ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
টেকসই উৎপাদন ও পরিবেশবান্ধব কারখানা বাংলাদেশের শক্তি
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বাংলাদেশ এখন আর শুধুমাত্র কম খরচের উৎপাদনশীল দেশ নয়। আমরা পরিবেশবান্ধব উৎপাদন, টেকসই মানদণ্ড এবং শ্রমিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বে উদাহরণ তৈরি করছি।
বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ২০০টিরও বেশি গ্রিন ফ্যাক্টরি রয়েছে, যেগুলোর অনেকগুলোই বিশ্বে সর্বোচ্চ গ্রিন বিল্ডিং সনদপ্রাপ্ত। আন্তর্জাতিক ক্রেতারা শুধু দাম নয়, বরং পরিবেশ ও সামাজিক দায়বদ্ধতাকেও গুরুত্ব দিচ্ছে, এবং এ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে।
আরও পড়ুন: সেপ্টেম্বরে ৯ দিনে রেমিট্যান্স ১০১ কোটি ডলার
মহামারির ধাক্কা ও পুনরুদ্ধার
২০১৯ সালে ইউরোপে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ছিল ১৪.৯৬ বিলিয়ন ইউরো। কিন্তু ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তা কমে দাঁড়ায় ১২.৩২ বিলিয়ন ইউরোতে, যা ১৭.৬৪ শতাংশ হ্রাস নির্দেশ করে।
তবে সেই ধাক্কা কাটিয়ে বাংলাদেশ দ্রুত পুনরুদ্ধার করে। ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশটি ইউরোপে পোশাক রপ্তানিতে ৪৮.৩৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা একই সময়ে ইউরোপের পোশাক আমদানির প্রবৃদ্ধির প্রায় দ্বিগুণ। ইউরোপের মোট আমদানিও ২০২০ সালে কমে গিয়েছিল ১৪.৩১ শতাংশ, তবে ২০২৪ সালে তা পুনরায় বেড়ে দাঁড়ায় ৮৫.৫৬ বিলিয়ন ইউরোতে।
শুল্কমুক্ত সুবিধা ও বৈশ্বিক স্বীকৃতি
মহিউদ্দিন রুবেল আরও জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘এভরিথিং বাট আর্মস’ (EBA) বাণিজ্য সুবিধার আওতায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার বাংলাদেশি রপ্তানিকে সহায়তা করেছে। এর ফলে দেশটি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
বিশ্ব অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসায় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশ তার বিদ্যমান সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ইউরোপসহ বৈশ্বিক বাজারে রপ্তানি আরও বাড়াতে পারবে। বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইনে স্বচ্ছতা, পরিবেশসচেতনতা এবং টেকসই উৎপাদনের ওপর জোর দেওয়ার সময়, বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই এসব ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশি তৈরি পোশাক শুধু একটি পণ্য নয়, বরং বিশ্ববাজারে একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদনকে কেন্দ্র করে যে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে, তা বজায় রাখতে পারলে ইউরোপীয় বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানির ইতিবাচক প্রবণতা আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি