News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১২:৫৪, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সঞ্চয়পত্রে নতুন মুনাফা হার

সঞ্চয়পত্রে নতুন মুনাফা হার

ফাইল ছবি

বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের কাছে সঞ্চয়পত্র বহু বছর ধরেই সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয়। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষরা সংসারের দৈনন্দিন খরচ চালাতে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর নির্ভর করেন। বছরের পর বছর ধরে এটি অনেক পরিবারের জন্য একটি স্থিতিশীল আর্থিক নির্ভরতার উৎস হিসেবে কাজ করছে।

বর্তমানে সঞ্চয়পত্র কেনা ও মুনাফা উত্তোলনের পুরো প্রক্রিয়া ডিজিটাল করা হয়েছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ৭১টি কার্যালয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, ডাকঘর এবং কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা থেকেও এখন সঞ্চয়পত্র কেনা ও ভাঙানো সম্ভব। এই উদ্যোগের ফলে বিনিয়োগকারীরা ঘরে বসেই সহজে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর বর্তমানে মোট ১১টি বিনিয়োগ স্কিম চালু রেখেছে। এর মধ্যে রয়েছে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র, দুটি ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক হিসাব, একটি ডাক জীবনবিমা, একটি প্রাইজবন্ড এবং প্রবাসীদের জন্য তিনটি বিশেষ বন্ড। প্রতিটি স্কিমে মুনাফার হার আলাদা। এছাড়া উৎসে কর কর্তনের হারও স্কিম অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকা বা না থাকা অনুযায়ী করের হারও নির্ধারিত হয়।

সরকার প্রতি নির্দিষ্ট সময়ে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার পর্যালোচনা করে। চলতি অর্থবছরে সরকার নতুন করে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ঘোষণা করেছে। নতুন হার ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে ১১.৯৮ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন সুদহার ৯.৭২ শতাংশ।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী বিনিয়োগের পরিমাণ অনুযায়ী মুনাফার হার নির্ধারণ করা হয়েছে। ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার কম বিনিয়োগে বিনিয়োগকারীরা তুলনামূলকভাবে বেশি মুনাফা পাবেন। আর ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফা কিছুটা কম। উৎসে করও বিনিয়োগের পরিমাণের ওপর নির্ভর করছে। ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে কর ৫ শতাংশ এবং তার বেশি হলে করের হার ১০ শতাংশ।

আরও পড়ুন: ঋণ খেলাপিতে এশিয়ার শীর্ষে বাংলাদেশ: এডিবি

চার ধরনের সঞ্চয়পত্রে নতুন মুনাফার হার নিম্নরূপ:

  • পেনশনার সঞ্চয়পত্র: ৭.৫ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে ১১.৯৮%, বেশি বিনিয়োগে ১১.৮০%। এটি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য খোলা।
  • পরিবার সঞ্চয়পত্র: সবচেয়ে জনপ্রিয় সঞ্চয়পত্র। ৭.৫ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মুনাফা ১১.৯৩% এবং বেশি বিনিয়োগে ১১.৮০%। এটি পরিবারসহ বিনিয়োগকারীদের জন্য স্থিতিশীল আয় নিশ্চিত করে।
  • পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র: ৭.৫ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মুনাফা ১১.৮৩%, আর বেশি বিনিয়োগে ১১.৮০%। এটি দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ের জন্য প্রযোজ্য।
  • তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র: ৭.৫ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মুনাফা ১১.৮২% এবং বেশি বিনিয়োগে ১১.৭৭%। ডাকঘর সঞ্চয়ে ব্যাংকের তিন বছর মেয়াদি সঞ্চয়েও একই হার প্রযোজ্য।

সঞ্চয়পত্র ছাড়াও প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য তিনটি বিশেষ করমুক্ত বন্ড রয়েছে। ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড (৫ বছর মেয়াদি) সর্বোচ্চ ১২% মুনাফা প্রদান করে এবং ৬ মাস অন্তর উত্তোলনের সুযোগ থাকে। এখানে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ সীমা ১ কোটি টাকা। ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড (৩ বছর) মুনাফা ৬.৫% এবং ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড (৩ বছর) মুনাফা ৭.৫% প্রদান করে। এই তিন বন্ডে বিনিয়োগের মুনাফা করমুক্ত।

প্রবাসীরা এসব বন্ড দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকের এডি শাখা, বিদেশে থাকা বাংলাদেশের ব্যাংকের শাখা, এক্সচেঞ্জ হাউস ও এক্সচেঞ্জ কোম্পানি থেকে কিনতে পারেন। ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা যায়, আর বাকি দুটি বন্ডে বিনিয়োগের কোনো সীমা নেই।

নতুন মুনাফার হার বিনিয়োগকারীদের জন্য সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ দুটোই তৈরি করেছে। সীমিত বিনিয়োগকারীরা তুলনামূলক বেশি মুনাফা পাবেন। তবে বড় বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে মুনাফা কিছুটা কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিনিয়োগের ধরন, পরিমাণ এবং কর শনাক্তকরণের তথ্য বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিসেম্বরের পর পরিস্থিতি বিবেচনায় আবারও মুনাফার হার পরিবর্তন হতে পারে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়