News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:২১, ১৯ মার্চ ২০১৫
আপডেট: ১৯:১২, ১৭ জানুয়ারি ২০২০

পোশাকের ন্যায্য দাম দিতে ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান

পোশাকের ন্যায্য দাম দিতে ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান

ঢাকা: বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ন্যায্য দাম দেয়ার জন্য ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার দ্বিতীয় বছর এবং একটি নতুন স্ট্র্যাটেজিক সেক্টর ইনিশিয়েটিভ ‘বাংলাদেশ ফ্রেমিং দ্য ফিউচার’ শীর্ষক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

মন্ত্রী বলেন, “রানা প্লাজার ঘটনার পর আন্তর্জাতিকভাবে তৈরি পোশাকের ওপর অনেক শর্ত দেয়া হয়েছিল। আমরা সেসব শর্তের ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ বাস্তবায়ন করেছি। শর্ত বাস্তবায়নে কারখানা ও উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও বাড়েনি উৎপাদিত পণ্যের দাম।”

বাংলাদেশে ডেনমার্ক দূতাবাস এবং ডেনিশ বাণিজ্য ও উন্নয়ন মন্ত্রণালয় যৌথ উদ্যোগে উচ্চ পর্যায়ের এ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে ডেনিশ ও বাংলাদেশের বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এবং শ্রমিক সংগঠনের নেতাসহ ২০০ জনের অধিক অতিথি উপস্থিত ছিলেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের পণ্যশুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা থাকায় ইইউকে ধন্যবাদ জানান।

তোফায়েল আহমেদ বলে, “কারখানা চালানোর জন্য টাকা হলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রানা প্লাজার পরে আমাদের কারখানাগুলোতে অগ্রগতি হয়েছে, তা ধরে রাখতে পোশাকের মূল্য বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগের প্রয়োজন। বিনিয়োগ থাকলে অবশ্যই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ও গুণগত পণ্য তৈরি করতে পারবে।”

বর্তমানে বাংলাদেশের শ্রমিকদের কোনো অসন্তোষ নেই দাবি করি তিনি বলেন, “শ্রমিকদের জন্য ২১৯ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি ৯৭ ডলার করে পাচ্ছে। সরকারের উদ্যোগ ও কর্মপরিবেশের কারণে শ্রমিকদের মধ্যে কোনো অসন্তোষ নেই। প্রতিটি কারখানায় শ্রমিক ইউনিয়নে ভোটের মাধ্যমে শ্রমিক নেতা নির্বাচিত হচ্ছেন। এটা আমাদের কথা না। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা ওয়ার্কার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউডব্লিউএ) কথা। তারা বলেছে, বাংলাদেশের শ্রমিকদের মধ্যে কোনো ধরনের অসন্তোষ নেই। শ্রমিকরা সুন্দর ও নিরাপদ কর্মপরিবেশে কাজ করছে।”

সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ডেনিশ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী মগেন্স জেন্সেন। এতে বিশেষ অতিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলি এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চন্নু।

মন্ত্রী মগেন্স জেন্সেন বলেন, “বাংলাদেশ রানা প্লাজার দুর্ঘটনাকে পেছনে ফেলে অনেক দূর এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ সরকার, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আরএমজি সেক্টরের সমন্বয়ে নতুন মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রণয়ন হয়েছে এবং পারস্পরিক সমঝোতার এক নতুন দ্বারা উন্মেচিত হয়েছে। যা বিশ্বের কোথাও আগে দেখা যায়নি। এই অবস্থায় বলা যায়, বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থই ভবিষ্যতের রূপরেখা বাস্তবায়ন করেছে।”

সম্মেলনে দুটি প্রধান বিষয়ের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। প্রথমত- মাল্টি-স্টেকহোল্ডার সহযোগিতার ভিত্তিতে রেডিমেড গার্মেন্টস শিল্পের বিগত দুই বছরের প্রাপ্তি ও শিক্ষণীয় বিষয়সমূহের ওপর আলোচনা এবং এ দুই বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে আগামীতে রপ্তানি বাজার সমৃদ্ধ করা যায়, পাশাপাশি শিল্পের সুনাম আরও বাড়িয়ে নেয়া যায়, সেই বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

এছাড়া সম্মেলনে বাংলাদেশের অন্যান্য শিল্পের করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) জোরদার করার ক্ষেত্রে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

ডেনিশ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী ৩ দিনের সফরে গত ১৭ মার্চ বাংলাদেশে আসেন। তার সফরসঙ্গী হিসেবে আরো এসেছেন ডেনিশ কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি এবং ডেনিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

সফরে তারা ঢাকা এবং ঢাকার বাইরেও মাঠ পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা ড্যানিডার সহযোগিতায় পরিচালিত প্রজেক্টসমূহ (বরিশালের প্রাকৃতিক দুযোগ ভাবাপন্ন প্রত্যান্ত অঞ্চলের কৃষি ও যোগাযোগ উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচালিত) পরিদর্শন করেন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর তৈরি পোশাকশিল্প খাতের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ৮ জুলাই জেনেভায় ‘সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট’ গৃহীত হয়। সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট মোতাবেক শ্রম আইন সংশোধন, শ্রম পরিদর্শক নিয়োগ, ইপিজেড আইন সংশোধন, সাধারণের প্রবেশযোগ্য ডাটাবেজ স্থাপন, রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস কারখানা যাচাই-বাছাই, ২৩৬টি ট্রেড ইউনিয়নকে রেজিস্ট্রেশন প্রদান, ফায়ার সেফটি ডোর ও শিল্প-কারখানা নির্মাণের সামগ্রী আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান, শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ বিনির্মাণে ও শ্রমিকদের কল্যাণের বিষয় গুরুত্বপূর্ণ।

নিউজবাংলাদেশ.কম/জেএস/এজে

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়