জাহানারার বিস্ফোরক অভিযোগে নড়েচড়ে বসেছে বিসিবি
ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি জাতীয় দলে নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নানা অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ্যে আনেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের তারকা পেসার ও সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম।
দিন কয়েক আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বিসিবির সাবেক নির্বাচক, সাবেক ইনচার্জ, টিম ম্যানেজারসহ কয়েকজন ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তা ও অনিয়মের মতো গুরুতর অভিযোগ তোলেন। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত এই টাইগ্রেসের বিস্ফোরক অভিযোগে চরম বিব্রত অবস্থায় পড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
বিষয়টির সংবেদনশীলতা বিবেচনায় নিয়ে বিসিবি ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছে, যারা ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ও সুপারিশ জমা দেবে।
বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল (বর্তমানে আইসিসির সভায় যোগ দিতে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন) দেশে ফেরার আগেই এ বিষয়ে কয়েকটি করণীয় সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন বলে নিশ্চিত হয়েছে।
বোর্ডের অভ্যন্তরীণ নির্দেশনায় বলা হয়েছে—
১. বিসিবির সিইওকে স্পষ্ট করতে হবে, ভুক্তভোগী (জাহানারা আলম)-এর কাছ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ তিনি পেয়েছিলেন কি না এবং পেয়ে থাকলে কবে পেয়েছেন।
২. অভিযোগ পাওয়া সত্ত্বেও যদি কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয়ে থাকে, তবে সিইওকে এর যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দিতে হবে।
৩. যদি অভিযোগে উল্লিখিত কোনো ব্যক্তি এখনও বিসিবিতে কর্মরত থাকেন, তবে সিইওকে তাদের অবিলম্বে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৪. আইন বিভাগ (লিগ্যাল টিম)-এর সহায়তায় দুই সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে বোর্ডে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
৫. তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে সিইও ভুক্তভোগীকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেবেন।
৬. ক্রিকেট অপারেশন্স ও মহিলা উইং যৌথভাবে নারী খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা পুনর্মূল্যায়ন করে দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন প্রস্তাবনা বোর্ডে দাখিল করবে। এ প্রক্রিয়ায় মহিলা উইং-এর পরিচালককে নিয়মিতভাবে অবহিত রাখতে হবে।
বৃহস্পতিবার (০৬ নভেম্বর) দিবাগত রাতে (রাত প্রায় পৌনে ১২টা) এক বিবৃতিতে বিসিবি জানায়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সাবেক বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের এক সদস্যের মাধ্যমে গণমাধ্যমে উত্থাপিত কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছে। বিসিবি সর্বদা তার খেলোয়াড় ও কর্মীদের জন্য একটি নিরাপদ, সম্মানজনক ও পেশাদার পরিবেশ নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। বোর্ড এ ধরনের বিষয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখে এবং তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আরও পড়ুন: নারী ক্রিকেটারদের বেতন বাড়ালো বিসিবি
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বিসিবি সকল পক্ষকে, বিশেষ করে গণমাধ্যমকে, অনুমাননির্ভর মন্তব্য বা প্রতিবেদন প্রকাশ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছে, যাতে তদন্ত প্রক্রিয়া কোনোভাবে প্রভাবিত না হয়।
এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে জাহানারা আলম জানান, বিসিবির ভেতরে একাধিকবার যৌন হয়রানির ঘটনার অভিযোগ করেছেন, কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি।
তার বক্তব্যে সরাসরি বিসিবির সাবেক নির্বাচক ও টিম ম্যানেজার মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু এবং নারী ক্রিকেট উইংয়ের প্রয়াত সাবেক ইনচার্জ তৌহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠে আসে।
তিনি বলেন, আমি অসংখ্যবার বিসিবিতে লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছি, কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেয়নি। বরং অনেক সময় আমাকে দোষারোপ করা হয়েছে। আমি চেয়েছি এমনটা আর কারও সঙ্গে না ঘটুক।
জাহানারা আরও অভিযোগ করেন, বিসিবির কিছু কর্মকর্তার অসদাচরণ ও পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণেই তিনি দলে জায়গা হারিয়েছেন।
বিসিবির নারী বিভাগের প্রধান আবদুর রাজ্জাক বলেন, অবশ্যই আমরা জানার চেষ্টা করব। এত মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ! আবার প্রশ্নও আছে—সবাই খারাপ, এটা হয় কীভাবে? অনেক সময় যারা দল থেকে বাদ পড়ে, তাদের ক্ষোভ থাকে। তবে যেসব অভিযোগ সে তুলেছে, সেগুলো ভয়াবহ। বোর্ডের সবাইকে নিয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করতে হবে।
তিনি আরও জানান, আমি বুলবুল ভাইকে (বিসিবি সভাপতি) বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি ফিরলে আমরা এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
বাংলাদেশের হয়ে ৫২ ওয়ানডে ও ৮৩ টি–টোয়েন্টি খেলা ৩২ বছর বয়সী জাহানারা আলম জাতীয় দলে সবশেষ খেলেছেন ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে। এরপর থেকেই তিনি অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন।
তার সাম্প্রতিক এই অভিযোগে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট অভূতপূর্ব এক ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে।
ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, অভিযোগগুলোর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত না হলে নারী ক্রিকেটে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বর্তমানে সকলের দৃষ্টি এখন বিসিবির তদন্ত কমিটি ও তাদের কার্যক্রমের দিকে।
বোর্ড জানিয়েছে, তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পরই উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশে নারী ক্রীড়াঙ্গনে যৌন হয়রানির অভিযোগের প্রকাশ্যে আসা বিরল ঘটনা। তাই জাহানারার এই অভিযোগ শুধু ক্রিকেট নয়, পুরো ক্রীড়া প্রশাসন ব্যবস্থার জবাবদিহিতা ও নিরাপত্তা কাঠামো নিয়েও নতুন প্রশ্ন তুলেছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








