বেঁধে দেয়া সময়ে বেকার বাবা আসেনি, তবে দরজা খোলা
স্টাফ রিপোর্টার

এক বেকার বাবা সন্তানের ক্ষুধার যন্ত্রণা মেটাতে না পেরে নিরুপায় হয়ে স্বপ্ন সুপার শপ থেকে দুধ চুরি করেছেন। সেই বাবার বেকারত্ব দুর করতে সুপার শপ কর্তৃপক্ষ চাকরির আশ্বাস দেন। এরপরেও তিনি (বাবা) সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
তবে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের খিলগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, আত্মসম্মানবোধের কারণে বেঁধে দেয়া সময়ের (শনিবার রাত) মধ্যে সেই বেকার বাবা আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেননি।
রোববার সহকারী কমিশনার (এসি) জাহিদুল ইসলাম বলেন, বেকার বাবা মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে। তবে আমরা প্রযুক্তির সাহায্যে তাকে ট্রেস করে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আত্মসম্মানবোধের কারণে তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করেনি। আমি তাকে নিশ্চিত করেছি যে তার পরিচয় গোপন রাখা হবে। তিনি কথা দিয়েছেন আসবেন আজ।
অপরদিক রিটেইল চেইন স্বপ্নের হেড অব মার্কেটিং তানিম করিম বলেন, তিনি (বাবা) আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ। তবে তার দরজা খোলা রয়েছে। সে আসলে পরিচয় গোপন রেখেই তার দায়িত্ব নেব।
এর আগে গত ১০ মে রাজধানীর বাকি সড়কে কর্তব্যরত থাকা অবস্থায় এসি জাহিদুল ইসলাম ‘এক বেকার বাবা তার সন্তানের জন্য দুধ চুরি করেছেন’ ঘটনার বর্ণনা দেন ফেসবুকে পোস্ট দেন। যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে। কর্মকর্তার সেই পোস্ট নিউজবাংলাদেশ পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
গতকাল (শনিবার) রাত আনুমানিক ৮টা ৪৫ মিনিট, বাকি সড়কে চেকপোস্ট ডিউটি তদারকি করছিলাম। হঠাৎ এক জায়গায় মানুষের হট্টগোল দেখতে পেলাম। ঘটনা কি তা দেখার জন্য আমার এক সাব-ইন্সপেক্টরকে পাঠালাম। কিছুক্ষণ পর বেশ কিছু লোক ২৫-৩০ বছর বয়সী একজন লোককে টেনে-হিচড়ে আমার সামনে নিয়ে আসলো। ঘটনা জানতে চাইলাম।
একজন বললো, “স্যার, লোকটা চোর, চুরি করে পালাচ্ছিল”। পাশে লোকটাকে শক্ত করে ধরে রাখা এক সিকিউরিটি গার্ড আমাকে বললো, “স্যার, লোকটা স্বপ্ন সুপার শপ থেকে চুরি করে পালাচ্ছিল।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি চুরি করেছে? সিকিউরিটি গার্ড বললো, “স্যার, সে এক প্যাকেট দুধ চুরি করে পালাচ্ছিল।” আমার খটকা লাগলো, আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘দুধ’? তখন সিকিউরিটি গার্ড অতি উৎসাহ নিয়ে বলল, “স্যার বাচ্চাদের ন্যান দুধের প্যাকেট।” আমি লোকটার দিকে তাকালাম। আমার বয়সেরই হবে। দেখতে ভদ্রলোকই মনে হলো। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, চুরি করলেন কেন? সে কেঁদে ফেলল। তারপর বললো, “স্যার, তিন মাস হল চাকরি নাই, বেতন নাই। ঘরে ছোট বাচ্চা, দুধ কেনার টাকা নাই।”
সাথে সাথে আমার ছেলের চেহারা মনে পড়ল!! মনে হল কতটা নিরুপায় হলে একজন বাবা এই কাজ করতে পারে!! ওর জায়গায় আমি থাকলেও হয়ত একই কাজ করতাম। সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞেস করলাম, দুধের প্যাকেটের দাম কত? সে বললো, ৩৯০ টাকা স্যার। আমি তাকে ৫০০ টাকা দিয়ে বিল রাখতে বললাম এবং লোকটিকে ছেড়ে দিতে বললাম।
আজ আমাদের দেশের এক অসহায় বাবা তার বাচ্চার জন্য দুধ চুরি করে...কত মানুষ বেকারত্বের অভিশাপ ঘোঁচাতে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে.. হয়ত আমি ভালো চাকুরী করে আজ ভাল আছি, কিন্তু সমাজের কত মানুষ আজ এই বাবার মত নিরূপায়!!! এর দায়ভার কার??!!”
নিউজবাংলাদেশ.কম/এমএজেডএমএস