News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৯:৩৪, ৪ মার্চ ২০২৫

ইসির অধীনেই থাকা উচিত এনআইডি: সিইসি

ইসির অধীনেই থাকা উচিত এনআইডি: সিইসি

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নির্বাচন কমিশনের অধীনেই থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।

মঙ্গলবার (৪ মার্চ) নির্বাচন কমিশন ভবনে নিজ দপ্তরের সামনে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

ইসি থেকে এনআইডি সেবা সরিয়ে তা নেওয়া হচ্ছে সিভিল রেজিস্ট্রেশন কমিশন নামে নতুন একটি কমিশনের অধীনে। এ লক্ষ্যে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন রহিতকরণ অধ্যাদেশের খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

এনআইডি সেবা ইসির অধীনে থাকা উচিত কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, অবশ্যই থাকা উচিত। সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের পর থেকেই তো সেটি বলেছি। ভোটার নিবন্ধনের বাই প্রোডাক্ট তো। এটি থাকা উচিত। আমরা এ বক্তব্য দিয়েই যাচ্ছি।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন মনে করে—সরকার ইসির সঙ্গে আলোচনা না করে এনআইডি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেবে না। সরকারের চিন্তা সব সেবা এক জায়গা থেকে দেওয়া যায় কিনা। কিন্তু আমাদের প্রতিনিধি সরকারকে জানিয়ে এসেছে আমাদের মতামত। সরকার আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে সিদ্ধান্ত নেবে না বলেই প্রত্যাশা করি। কেন এনআইডি নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকা জরুরি, সে বিষয়ে সরকারকে লিখিতভাবে জানানো হবে। এনআইডি কার্যক্রম নিয়ে গেলে সমস্যা হবে তা আমরা জানাব। 

আরও পড়ুন: ইসির অধীনে থাকছে না এনআইডি সেবা

তিনি আরও বলেন, এখন ভোটার নিবন্ধন চলছে, সামনে জাতীয় নির্বাচন আছে এরমধ্যে তড়িঘড়ি করে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে হয় না। এমন আলোচনায় ইসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে হতাশা কাজ করছে। এনআইডি কার্যক্রম ইসিতে থাকা উচিত।

সিইসি বলেন, আমি তো উপদেষ্টা পরিষদের মিটিংয়ে থাকি না। সরাসরি শুনিনি। যা-ই হোক, গতকাল (সোমবার) একটি মিটিং হলো। সেখানে প্রতিনিধির মাধ্যমে আমাদের মতামত তুলে ধরেছি। আরও মিটিং হবে। সরকার এনআইডি সেবা ইসি থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, আমি এমনটি এখনো শুনিনি।

এনআইডি সেবা নিয়ে খসড়া তৈরির আগে ইসির সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন ছিল কি না, এ প্রশ্নে নাসির উদ্দিন বলেন, দেখেন, এনআইডি সেবাটা কিন্তু নিয়ে যাচ্ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনও করে ফেলেছিল, কার্যকর হয়নি। আমরা সরকারকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, এটি স্বরাষ্ট্রে যাওয়া ঠিক হবে না। কিভাবে কাজটা করা যেতে পারে এটির একটি চিন্তা আছে তো। এটা এমন না যে শুধু এনআইডি আমাদের কাছ থেকে নিয়ে গেল, আর সবকিছু হয়ে গেল।

এদিকে, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মনির হোসেন জানান, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ উপেক্ষা করে এনআইডি স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী এই পরিবর্তনের জন্য প্রভাব বিস্তার করছে। আমরা সিইসিকে জানিয়েছি, এনআইডি নির্বাচন কমিশনের অধীনেই থাকতে হবে। অন্যথায়, ইসির সাংবিধানিক ক্ষমতা খর্ব হবে।’

জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ (এনআইডি) থেকে সেবা সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এ জন্য ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন’ নামে একটি স্বায়ত্তশাসিত কমিশন গঠন করা হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জন্মনিবন্ধন, এনআইডি এবং পাসপোর্ট সংক্রান্ত প্রক্রিয়ায় অপ্রয়োজনীয় জটিলতা ও জনদুর্ভোগ নিরসনের লক্ষ্যে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের আওতার বাইরে এনে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র কমিশন প্রতিষ্ঠায় ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন (কমিশন), ২০২৫’ নামে একটি অধ্যাদেশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় সরকার, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের মতামতও গ্রহণ করছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের এ বৈঠকে ইসি সচিবালয়ের প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক মতামত প্রদান সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির প্রথম সভা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত হয়েছে। 
এ বিষয়ে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে আইন করা হয়েছিল, ক্ষমতার পালাবদলে আবার তা বাতিল চেয়ে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। তাদের দাবি অনুযায়ী আইনটি বাতিল হলে এনআইডি সেবা বরাবরের মতই নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকবে। এ প্রস্তাব অনুমোদনের পর সরকারকে এখন অধ্যাদেশ জারি করে আইনটি বাতিল ও আগের আইন বহাল করতে হবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়